চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

এসএমই খাতের অর্থায়নে বাংলাদেশের নতুন দিগন্ত উন্মোচন

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, আর্থিক অন্তর্ভূক্তির জন্য উদ্ভাবনীমূলক কৌশল অনুসরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে দেশের এসএমই খাতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু উদ্ভাবনিমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে, যার ফলে ইতোমধ্যেই নতুন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা বিশেষ প্রণোদনা পেয়েছেন।

থাইল্যন্ডের রাজধানী ব্যাংককে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরিয় অঞ্চল এবং ল্যাটিন আমেরকিায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের আর্থিক অন্তর্ভূক্তি বিষয়ক আন্তর্জাতিক কর্মশালায় বিশেষ নিবন্ধ উপস্থাপনের সময় তিনি এসব কথা বলেন। ব্যাংককে ইউনাইটেড ন্যাশনস কনফারেন্স সেন্টারে অনুষ্ঠিত কর্মশালাটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে ইএসসিএপি, সিআইএফসি, ইসিএলএসি, এএফআই, দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন এবং এডিবি।

ড. আতিউর রহমানের নিবন্ধ উপস্থাপনের পর প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ইএসসিএপি’র পক্ষ থেকে টিয়েবটিপ সুভাঞ্জি, ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ, রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস. এম. মুন্দ্রা, এডিবি’র শিগেহিরোশিনোজাকি এবং পেরুর এগ্রিকালচারাল ব্যাংকের রাউলহপকিন্স।

ড. আতিউর বলেন, বাংলাদেশে গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে ব্যাংকগুলোকে বৃহত্তর উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। ব্যাংকসহ আর্থিক সেবা খাতে যুক্ত সকল প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারক ও কর্মকর্তাদের মানসিকতায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায়ে ঋণ সুবিধা পৌঁছে দেয়া, গ্রাহকের কাছে সেবা পৌঁছানোর নিত্য নতুন কৌশল, এবং উদ্ভাবনীমূলক আর্থিক সেবার উপর জোর দেয়া হয়েছে।

এসএমইখাতে অর্থায়নে বাংলাদেশের অর্জন আলোচনা করার সময় ড. আতিউর রহমান বলেন, ২০১১ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে এ খাতে প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ বেড়েছে তিনগুণ (প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১৪০ হাজার কোটি টাকার ওপরে)। একই সময়ে এসএমই খাতের নারী উদ্যোক্তাদের প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে (২ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি হয়েছে)।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার যৌথভাবে ঋণ সেবা দেয়ার কর্মসূচি উদ্ভাবনি আর্থিক সেবার একটি আদর্শ উদাহরণ। বর্তমানে দেশের ১৯৯টি ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার নিজস্ব পুঁজির বাইরে সর্ববৃহৎ পুঁজির উৎস হলো বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ এনজিওর যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত বর্গাচাষীদের জন্য ঋণ কর্মসূচিটিও ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার মধ্যে অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক ব্র্যাকের মাধ্যমে ৬০০ কোটিটাকার ঋণ দিয়েছে, এবং এখন পর্যন্ত দেশের ৪৬ জেলায় ৩ লক্ষ ১৯ হাজার বর্গাচাষি এই ঋণ পেয়েছেন।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ পরিশোধ করতে না পারার ঝুঁকি কমিয়ে আনার জন্য এসএমই খাতের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালু করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন ড. আতিউর।

তিনি বলেন, সম্প্রতি চালু হওয়া এজেন্ট ব্যাংকিং কর্মসূচির সাফল্য থেকে বোঝা যায় যে প্রযুক্তি নির্ভর আর্থিক সেবা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে এসএমই উদ্যোক্তাদের দোরগোড়ায় ঋণ সুবিধা পৌঁছে দিতে পারলে তা এসএমইখাতের বিকাশের জন্য বিশেষ সহায়ক হবে।

‘ওমেন চেম্বার, ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা ইত্যাদি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসএমইখাতের বিকাশের জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক ও নারীএসএমই উদ্যোক্তাদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।’