চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘এল ক্ল্যাসিকো’র নিরাপত্তায় রেকর্ড সংখ্যক পুলিশ

বুধবার মৌসুমের প্রথম ‘এল ক্ল্যাসিকো’তে মুখোমুখি হবে বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ। এই ম্যাচের ফুটবল উত্তাপ ছাপিয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে নিরাপত্তা ইস্যু। ক্ল্যাসিকোর ইতিহাসে রেকর্ড সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্প ন্যু’র লড়াই ঘিরে ৩ হাজারেরও বেশি পুলিশ এবং বেসরকারি নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন করবে আয়োজকরা।

‘সুনামি ডেমোক্রেটিক’ নামে কাতালান একটি সংগঠন ম্যাচের দিন বড় রকমের বিক্ষোভের ঘোষণা দেয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। কাতালোনিয়ায় আরও বেশি স্ব-শাসনের দাবিতে এ বিক্ষোভ করবে সংগঠনটি।

মৌসুমের প্রথম এল ক্ল্যাসিকো হওয়ার কথা ছিল গত ২৬ অক্টোবর। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে তারিখ পরিবর্তন করে ১৮ ডিসেম্বর আনা হয়। ২০১৭ সালে স্বাধীনতার পক্ষে কাতালোনিয়ায় গণভোটের ইস্যুতে উত্তেজনা বাড়লে সেখানকার ৯ জন রাজনীতিবিদসহ অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সুযোগ পেলেই প্রতিবাদ করে আসছে কাতালানরা।

কাতালান নেতাদের গ্রেপ্তারের পর সেখানে ‘সুনামি ডেমোক্রেটিক’ নামে একটি প্রতিবাদী সংগঠন গড়ে ওঠে, তারাই ম্যাচের দিন বড়সড় বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।

ম্যাচ শুরুর অন্তত চার ঘণ্টা আগে বিক্ষোভকারীদের স্টেডিয়ামের সামনে জড়ো হওয়ার ডাক দিয়েছে ‘সুনামি ডেমোক্রেটিক’। ম্যাচে এক লাখের মতো দর্শক হবে। প্রতিবাদের জন্য কয়েক লাখ মানুষ একত্র হতে পারে বলে ধারণা করছে কর্তৃপক্ষ।

প্রতিবাদীদের বিক্ষোভের ডাক দেয়ার পর ম্যাচকে ‘উচ্চ ঝুঁকি’র হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন কাতালান প্রাদেশিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিগুয়েল বুচ। এসময় সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা করে সেখানে চার মাত্রার সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছে (পাঁচ মাত্রাকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা ধরা হয়)।

মঙ্গলবার মিগুয়েল বলেছেন, ‘কোনকিছুই উড়িয়ে দেয়া যায় না। ইউরোপে এবং ক্রিসমাসের সময় হামলা হয়েছে। কখন, কোথায় সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করা হতে পারে তা আপনি কখনোই জানেন না। বার্সা-মাদ্রিদের ম্যাচও হামলার টার্গেট হতে পারে। আমরা খুবই সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছি, যাতে উপস্থিত দর্শকের সবাই তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চয়তা পেতে পারেন।’

এই অবস্থায় বার্সেলোনাও কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। তাদের খেলোয়াড়দের স্টেডিয়াম থেকে মাত্র ৬০০ মিটার দূরত্বে রাখছে এবং ম্যাচের দিন প্রায় আট ঘণ্টা আগে তাদের মাঠে নেয়া হবে। সাধারণ সময়ে খেলোয়াড়রা ম্যাচের দুই ঘণ্টা আগে মাঠে আসেন। বার্সার সঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদকেও স্টেডিয়ামের কাছে ওই একই হোটেলে রাখা হবে। তারাও বার্সার খেলোয়াড়দের সঙ্গে একই সময় মাঠে প্রবেশ করবেন।

শুধু খেলোয়াড় নয়, বার্সার পক্ষ থেকে ম্যাচ কভার করা সাংবাদিকদের অন্যদিনের তুলনায় আরও আগে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নিতে অনুরোধ জানিয়েছে।

ম্যাচ সামনে রেখে দুটি বড় উদ্বেগের একটি বিক্ষোভকারীরা পুরো স্টেডিয়াম ঘিরে ফেলতে পারে এবং গ্যালারির দর্শকরা মাঠে ভেতরে প্রবেশ করতে পারে।

বুচ বলেছেন, ‘প্রতিবাদকারীদের মাঠের ভেতর ঢুকে যাওয়ার চিন্তাটাই বেশি করতে হচ্ছে আমাদের। এমন হলে তা খেলোয়াড়, রেফারি এবং ম্যাচের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। আমরা পুলিশ এবং ক্লাবের নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলে কাজ করছি।’

২০১৭তে স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। তখন বার্সেলোনা ও লাস পালমাসের ম্যাচ হয়েছিল দর্শকহীন মাঠে।

এবারের ৩ হাজারের বেশি নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন ক্ল্যাসিকোর আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার পর অনুষ্ঠিত ‘এল ক্ল্যাসিকো’তে ২৫০০ নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল।

স্পেনের ইতিহাসে ফুটবল ম্যাচের নিরাপত্তায় এরচেয়েও বেশি নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েনের রেকর্ড রয়েছে। চলতি বছর মাদ্রিদে লিভারপুল-টটেনহ্যাম হটস্পারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ৪৭০০ নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। তাছাড়া গত বছর কোপা লিবার্তোদোরেসের ফাইনালের সময়ও মাদ্রিদে ৩৭০০ নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন করা হয়।