সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী নির্বাচন কমিশনকে বলেছেন, তাকে আওয়ামী লীগের সদস্যপদ ও মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ দেওয়া অবৈধ। শুনানি না করে বিষয়টি স্পিকারের কাছে পাঠানোর অনুরোধ জানান তিনি।
তবে সব সিদ্ধান্ত আইনসম্মত বলে মন্তব্য করে শুনানির মাধ্যমে লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ বাতিলে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছে আওয়ামী লীগ। কমিশন জানিয়েছে, দ্রুতই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে হজ নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যর কারণে বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদের পর লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর পাশাপাশি দল থেকেও বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ।
নয় মাস কারাগারেও থাকতে হয় তাকে। দল থেকে বহিষ্কারের পর লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ বাতিলের জন্য স্পিকারের কাছে চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ।
তার সদস্য পদ রাখা না রাখার সমাধান করতে ইসিকে চিঠি দেন স্পিকার। নির্বাচন কমিশন ১৬ জুলাই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং লতিফ সিদ্দিকীকে ২ আগস্টের মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থন করে চিঠির জবাব দিতে বলে। এদিন দুপুরে লতিফ সিদ্দিকীর প্রতিনিধি তার অবস্থান ব্যাখ্যা করে ইসির চিঠির জবাব দেন।
বেলা আড়াইটার দিকে দলের অবস্থান জানিয়ে ইসিতে চিঠির জবাব দিতে আসে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি বলেন, টাঙ্গাইল ৪ আসনে নির্বাচিত জনাব লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে উপরোক্ত বিষয়াদি বিবেচনাপূর্বক সংসদসদস্যপদ বাতিলের জন্য বিনীত অনুরোধ জানিয়েছি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে একটি শুনানির ব্যবস্থা করবেন। সেই শুনানিতে আমরাও আসবো।
তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, আইন অনুযায়ী লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ বাতিলের এখতিয়ার তাদের। শুনানি হবে কি না, শিগগিরই তা জানানো হবে।
নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আত্নপক্ষ সমর্থনের সুযোগ তাকে দিতে হবে। আমরা সেটা দিয়েছি। এখন আমরা দেখবো, তিনি যে জবাব দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে জবাব দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত যে বিধি ও আইন আছে সব মিলিয়ে একটি সিদ্ধান্ত হবে। এমন হতে পারে শুধ কাগজ দেখে তারা সিদ্ধান্ত দিতে পারেন বা এমন হতে পারে যে উভয়পক্ষকে তারা শুনানি দেবেন।
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ভিত্তিহীন উল্লেখ করে লিখিত জবাবে লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, এ জন্য তাকে দল থেকে বহিষ্কারের এখতিয়ার আওয়ামী লীগের নেই।
এর আগে গত ১৩ জুলাই আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদের বিষয়ে মতামত জানাতে নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কারের চিঠি স্পিকারের কাছে পাঠানো হয় গত ৭ জুলাই। দল থেকে পাঠানো এ চিঠি স্পিকারের দপ্তরে পৌঁছানো হয় সংসদ সচিবালয়ের মাধ্যমে।
ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে আটকের প্রায় ৯ মাস গত ২৯ জুন জামিনে মুক্ত হন লতিফ সিদ্দিকী। এরপর থেকেই তিনি সংসদের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এই চেষ্টার মধ্যেই স্পিকারের কাছে চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ।
গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে প্রবাসীদের এক অনুষ্ঠানে হজ ও তাবলিগ জামায়াত নিয়ে মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েন তখনকার টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী। এরপর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে তার বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা হয়।
বিভিন্ন ইসলামপন্থি দলগুলোর আন্দোলনের হুমকি ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমালোচনার মুখে মন্ত্রিত্ব হারাতে হয় তাকে।
২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর রাতে ভারত হয়ে দেশে ফেরেন লতিফ সিদ্দিকী। পরদিন তিনি আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান।