রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। এমন কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে ১৪ দল। তারা ১৪ দলের নেতা ও সংসদ সদস্যের হুমকিদাতাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে৷
এ ঘটনার সূত্রপাত গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে রাজশাহী মহানগরীর পবা নতুনপাড়া এলাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড গাঙপাড়া খালের দুই পাশের বাড়ি-ঘর স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করার পর। পুনর্বাসন না করে এই শীতের মধ্যে বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করার প্রতিবাদ জানান ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি গাঙপাড়া এলাকায় অবস্থান নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। এই অসহায় মানুষদের পক্ষ নেয়ার প্রেক্ষিতে হুমকিদাতা ফজলে হোসেন বাদশাকে গাঙপাড়া থেকে সরে না গেলে তার বিপদ হবে বলে হুমকি দেন৷ হুমকদাতা আরও বলেন, গাঙপাড়া থেকে সরে না গেলে তার প্রাণও থাকবে না।
এ ঘটনায় রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানায় অভিযোগও হয়েছে। ১৪ দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা ফজলে হোসেন বাদশাকে এভাবে হুমকি দেয়ায় রাজশাহীতে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ১৪ দলের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে৷ ক্ষমতায় ১৪ দলীয় জোট সংসদ সদস্যও ১৪ দলের তবু এমন হুমকি সত্যিই আশংকাজনক৷
১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম হুমকি দাতাকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। ১৪ দলের আরেক শীর্ষ নেতা ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ২২ ডিসেম্বর তীব্র শীতের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং রাজশাহী জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা রাজশাহী মহানগরের খালপাড়ের দু’পাশের বস্তি উচ্ছেদ করতে গেলে রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা শীতার্ত মানুষের কথা বিবেচনা করে বস্তি উচ্ছেদ কার্যক্রম স্থগিত করার অনুরোধ করেন। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সেসময় বস্তি উচ্ছেদ আপাতত স্থগিত হয়।ফজলে হোসেন বাদশা সেখানে অবস্থানকালীন সময়ে ০১৯৩৯৪৭২৮৫১ এ নম্বর থেকে কল করে তাকে সরে যেতে বলা হয়। না হলে বস্তিবাসী এবং তার সমস্যা হবে বলা হয়। সেই সঙ্গে ফজলে হোসেন বাদশাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়।
মেনন আরও বলেন, আমি এ ঘটনায় স্পিকার এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) বরাবর দুটো ডিও লেটার দিয়েছি। কিন্তু এখনও বাদশাকে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হুমকিদাতার মোবাইল নম্বরটিও পরিচিত। প্রয়োজনে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে দ্রুত শনাক্ত করাও সম্ভব। কিন্তু হুমকিদাতাকে গ্রেপ্তার দুরে থাক কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। আমি নিজেও এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছিলাম। তৎকালীন বিএনপি সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যার ফলে আমি গুলিবিদ্ধ হয়ে, দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর সুস্থ হই।
১৯৯২ সালে বিএনপি জোট যখন ক্ষমতায় ছিলে তখন মেনন সংসদ সদস্য ছিলেন৷ তখনকার ১৭ আগস্ট মেননকে সন্ত্রাসীরা রাজধানীর তোপখানা রোডে গুলি করেছিল৷ কেন একজন এমপি প্রশাসনের কাছে অসহায় হয়ে যাচ্ছে? কেন বারবার তাদের জীবন রক্ষার জন্য প্রশাসনের শরণাপন্ন হতে হয়? ১৯৯২ এ মেনন ছিলেন বিরোধী দলীয় এমপি, ২০১৯-এ বাদশা সরকার দলীয়৷ এরপও কেন তিনি প্রশাসনের কাছে অসহায়? তাহলে ক্ষমতার মূল কে?
এলাকার সংসদ সদস্যকে না জানিয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা কার নির্দেশে বস্তি উচ্ছেদ করতে গেল? শুধু হুমকিদাতাকে গ্রেপ্তার নয় এই নির্দেশনার মূল কোন মহল আগে সেটা চিহ্নিত করতে হবে৷ হুমকিদাতা হয়তো এই মহলেরই প্রতিনিধিত্ব করছে৷
১৯৯২ সালে এমনই হুমকির প্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় বিরোধী দলীয় এমপিকে সন্ত্রাসীরা গুলি করেছিল৷ তবে কি এবার সরকার দলীয় সাংসদের বেলায়ও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে? ১৪ দল হুমকিদাতাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়৷ এ দাবিটা তারা কার কাছে জানালো? তাদের দাবির পরও কেন হুমকিদাতা সন্ত্রাসীরা গ্রেপ্তার হলো না? প্রশাসনের অধীনে ১৪ দল না ১৪ দলের অধীনে প্রশাসন? একজন সরকার দলীয় এমপিরই যদি জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে তবে সাধারণ মানুষের বেলায় কী ঘটবে?
১৯৯২ সালে এমপি রাশেদ খান মেননের গুলিবিদ্ধ হওয়ার মত এমপি ফজলে হোসেন বাদশাও গুলিবিদ্ধ হোক জাতি এটা দেখতে চায় না৷ এই আশঙ্কা মিথ্যে প্রমাণিত হোক৷ বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে যখন ১৪ দল আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে নির্যাতিত হয়েছিল তখন এইসব প্রশাসন কোথায় ছিল? ১৯৯২ সালে মেননের হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিএনপি জোটের নির্দেশনায় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি৷ ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলা ও হামলাকারিদের বাঁচাতে জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছে৷ জঙ্গি বাংলা ভাইকে মিডিয়ার সৃষ্টি বলা হয়েছে৷ এসব কি প্রশাসনের নির্দেশে হয়েছে নাকি ৪ দলীয় জোটের নির্দেশে? তাহলে এখন ১৪ দল দাবি না জানিয়ে ১৪ দল নেতাকে হুমকিদাতাকে কেন গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিতে পারছে না? তবে কি ১৪ দলের চেয়ে প্রশাসনের ক্ষমতা বেশি? প্রশাসনের সবাই যদিও খারাপ নয়, তবে স্পর্ধার সীমা অতিক্রম করা প্রশাসনিক ব্যক্তিদের রাজনীতি, দল ও জোটের উর্ধ্বে নিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রের জন্য চরম হুমকি৷ এসব হুমকির প্রতিকার যারা করবে, তারাই হুমকি হলে মানুষ তখন যাবে কোথায়?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)