সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট এবং ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট এবং বৈশাখী ভাতা প্রদানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
গণভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষা সচিব মো: সোহরাব হোসাইন এ প্রেক্ষিতে তার তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বেসরকারি শিক্ষাখাতে এই ঘটনাকে ‘বিপ্লব’ হিসেবে তুলনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘোষণার ফলে এমপিওভুক্ত প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী প্রতিবছর সরকারি শিক্ষকদের মতো বৈশাখী ভাতা ও পাঁচ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পাবেন।
উল্লেখ্য, ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের জন্য সরকারের বছরে ব্যয় হবে ৫৩১ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা। এবং ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা বাবদ বছরে ব্যয় হবে ১৭৭ কোটি ২৭ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা।
২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সরকার এই খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রেখে দিয়েছে।
এছাড়াও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ফান্ডে মোট ৭৭৭ কোটি টাকা বিশেষ অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর মধ্যে অবসর সুবিধার জন্য ৫৪২ কোটি টাকা ও কল্যাণ ফান্ডে ২৩৫ কোটি টাকা। এই ৭৭৭ কোটি টাকার মধ্যে দুটি ফান্ডে দশ কোটি টাকা করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিজস্ব তহবিল থেকে অনুদান দিয়েছেন।
পুরো বিষয়টিই বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য এক ঐতিহাসিক ঘটনা। বর্তমান সরকার বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য যে সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, তার দারুণ সুফল ভোগ করবেন দেশের প্রায় পাঁচলক্ষ শিক্ষক-কর্মচারী।
প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার ফলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি চাকুরদের ন্যায় অনুরূপ হারে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি পাবেন যা তাদের এর আগে প্রাপ্ত বেতনভাতা কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হবে।
উল্লেখ্য, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এতদিন শুধু বেতন স্কেলের শতভাগ বেতন প্লাস ১০০০ টাকা বাড়িভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা বাবদ ভাতা পেতেন। কোন ইনক্রিমেন্ট না থাকায়, তাদের বেতন বাড়ার কোন সুযোগ ছিল না।
২০১৫ সালে পে-স্কেল ঘোষণার আগে এমপিও শিক্ষকরা তাদের চাকরিকালীন কেবল একটি ইনক্রিমেন্ট ও একটিমাত্র টাইমস্কেল পেতেন।
সর্বশেষ পে-স্কেলে টাইমস্কেল বন্ধ করে বার্ষিক ৫% ইনক্রিমেন্ট চালু করা হলেও এমপিও শিক্ষকরা এই সুবিধা থেকে এতদিন বঞ্চিত ছিলেন। একটি মাত্র টাইমস্কেল ইনক্রিমেন্ট থেকে বঞ্চিত হয়ে বেসরকারি এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের চোখে হতাশার অন্ধকার নেমে এসেছিল। ক্ষোভে দুঃখে শিক্ষক-কর্মচারীরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনের পথে পা বাড়ায়।
চলতি বছরের শুরুর দিকে সারাদেশ থেকে হাজার হাজার শিক্ষক কর্মচারী ঢাকায় জড়ো হয়ে আন্দোলন করার এক পর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হয়ে দাবি পূরণের আশ্বাস দেন।
তারপর অনেকদিন, অনেকমাস পার হলেও দাবি পূরণের কোন লক্ষণ ফুটে উঠেনি। এদিকে সরকারঘেঁষা বিভিন্ন শিক্ষক সংঘটনের শীর্ষনেতারা কেবল আশ্বাসের বাণী শুনিয়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু কোন সুখবর দিতে পারেননি।
অবশেষে অন্ধকার কেটে নতুন আলোর প্রভা নিয়ে আসে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দূরদর্শী ও সফল রাষ্ট্রনায়ক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ঘোষণায়।
বলাবাহুল্য, এমপিও শিক্ষকদের পেশাগত আত্মবিশ্বাসের স্তম্ভটি এখন অনেক মজবুত। সরকারি শিক্ষকদের সাথে এমপিও শিক্ষকদের চাকরিকালীন সুযোগ সুবিধার দীর্ঘদিনের ‘বৈষম্য-রেখাটা অনেকটাই সংকুচিত হয়ে যাবে ৫% বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট বাস্তবায়নের ফলে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই মাস থেকেই তা কার্যকর হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে আদেশ জারিও হয়েছে।
পত্রিকার খবর অনুযায়ী নভেম্বর মাসের বেতনের সাথে এরিয়া সহকারে ৫% ইনক্রিমেন্ট পাবেন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা।
বাকি যেটুকু পার্থক্য তা বাড়িভাড়া আর মেডিকেল ভাতায়। সরকার এ বিষয়টিতে আন্তরিকভাবে নজর দিলে তাও ঘুচে ফেলা মোটেও অসম্ভব কিছু না। এজন্য কেবল সরকারের সদিচ্ছা আর সাহসী নেতৃত্বের দরকার।
আশার কথা হল, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সেই নেতৃত্বগুণ এখন প্রমাণিত সত্য। ভবিষ্যতে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের নামের আগে ‘বে’ কথাটি উঠে যাবে, সেই দিন নিশ্চয়ই বেশি দূরে নয়। সেই শুভক্ষণের অপেক্ষায় থাকবে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ৯৭ ভাগ বাস্তবায়নকারী এমপিওভুক্ত ৫ লক্ষ শিক্ষক-কর্মচারী।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)