জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষিত হওয়ার পর সরকারী চাকরীজীবীদের প্রায় সবাই নতুন স্কেলে বেতন তুলছেন করেছেন। পারেননি কেবল এমপিওভুক্ত সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী। বেতন কমিশন শুরু থেকেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ব্যাপারে রহস্যজনক ধুম্রজাল সৃষ্টি করেছে।
কমিশনের রিপোর্টে এ সংক্রান্ত পরিষ্কার কোন নির্দেশনা না থাকায় পরবর্তিতে এ বিষয়ে সচিব কমিটিও তা পাশ কাটিয়ে চূড়ান্ত বেতন স্কেল ঘোষণা করে। আর এতে সারাদেশে লক্ষ লক্ষ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মনে বিরাট প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সঙ্গত কারণেই তারা কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিল। ক্ষোভের তীব্র দাবানলে তৎক্ষণাৎ পানি ঢালে শিক্ষামন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত একটি সম্পূরক প্রজ্ঞাপণ।
যাতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদেরও সরকারী চাকরীজীবীদের অনুরূপ সময় অর্থাৎ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিলো, ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন স্কেলে বেতন-ভাতা দেওয়া হবে। যদিও প্রজ্ঞাপনের ভাষা ও কিছু বিষয়ে শিক্ষকদের মধ্যে চরম আপত্তি ও প্রতিবাদ দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন উদ্যোগে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ পেশাজীবী সংগঠনটি শান্ত হয়। নতুন আশা নিয়ে যার যার কর্মস্থলে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
ইতিমধ্যে অন্যান্য সকল চাকরীজীবীরাই নতুন স্কেলে বেতন তুলছেন। গত জানুয়ারী থেকেই তারা এ সুবিধা পাচ্ছেন। বাদ পড়েছেন কেবল এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। বিভিন্ন তথ্যসূত্র কখনো বা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সংবাদপত্রে খবর এসেছে জানুয়ারীর বেতনের সাথে ফেব্রুয়ারী মাস থেকেই নতুন স্কেলে বেতন পাচ্ছেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। ফেব্রুয়ারীতে তারা ঠিকই বেতন পেয়েছেন। তবে নতুন স্কেলে নয়। পুরাতন স্কেলে।
আবারো হতাশায় ভাঁজ পড়েছে লক্ষ লক্ষ শিক্ষকদের কপালে! কিছুদিন পর আবারো প্রচার হয়েছে, আর বিলম্ব নয়, ফেব্রুয়ারীর বেতনের সাথে মার্চ মাসে নতুন স্কেলে বেতন পাবেনই পাবেন। মার্চ মাসেও পুরাতন স্কেলেই বেতন হয়েছে। এবার বিষয়টিকে আর স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়া যাচ্ছে না। তাই সারাদেশের শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ এখন বিক্ষোভের বাতাবরণ দিচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনগুলো সারাদেশ থেকে অঞ্চল ভিত্তিক আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। হয়তো অনির্দিষ্টকাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণাও আসতে পারে।
বলাবাহুল্য, এমন কঠোর সিদ্ধান্তে কোটি কোটি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের ভয়াবহ ক্ষতির সমুহ সম্ভাবনা থাকলেও সামগ্রিক বিবেচনায় এমপিও শিক্ষকদের এর বিকল্প কিছু আছে বলে মনে হয় না। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এ নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহল কিংবা খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোন উদ্দ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না! প্রশ্নহলো, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নতুন স্কেলে বেতন দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের এমন লুকোচুরি করা কেনো? বলা হচ্ছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নতুন স্কেলে বেতন দেওয়ার জন্য সরকারের বিশাল অংকের টাকার প্রয়োজন। টাকার সংস্থান হলেই নাকি নতুন স্কেলে বেতন ছাড় দেওয়া হবে।
আসলে, এ ধরনের উদ্ভট যুক্তি অর্থহীন। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা অনেক আগে থেকেই জাতীয় স্কেলের অন্তর্ভুক্ত। তাদের বেতনের শতভাগ সরকারী কোষাগার থেকে প্রদান করা হয়। ভাতাদির কিছু অংশও দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া, নতুন স্কেলে বেতন প্রদানের সরকারী সিদ্ধান্ত মোতাবেকই গত ২০ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপণ জারি করা হয়েছে। এগুলো মীমাংসিত। তাহলে এখন আর টাল বাহানা কেনো করা হচ্ছে? শিক্ষকদের হতাশায় ফেলে আন্দোলনের মুখোমুখি করার যারা পায়তারা করছে, সরকার কি তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে ওয়াকিবহাল?
মনে হচ্ছে, কোথাও কোন গন্ডগোল হচ্ছে। ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। লক্ষ লক্ষ শিক্ষকদেরকে সরকারের মুখোমুখি করার পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে কিনা ভাববার অবকাশ আছে বৈকি! সরকার কি এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নিবে?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)