বাঙালির শোকের মাস আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এ মাসে বিপথগামী কিছু সেনা সদস্যের হাতে খুন হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেখানেই থেমে থাকেনি খুনিদের দল। বাংলাদেশের উল্টোপথে যাত্রা ঠেকানোর দল আওয়ামী লীগের সমাবেশে ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট আবারও মরণঘাতী হামলা চালানো হয়। সেবারের টার্গেট ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেদিনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন: ‘‘সমাবেশ শেষ করা মাত্র একজন ফটোগ্রাফার এসে ছবি নিতে না পারার কথা জানাতেই তিনি থমকে দাঁড়ালেন। মাইকটি তিনি হাত থেকে রাখতেও পারেননি তখনই গ্রেনেড হামলা শুরু হয়ে যায়। গ্রেনেড বিস্ফোরিত হবার শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে হানিফ ভাইসহ (সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) কয়েকজন ঘিরে ফেলেন।
আমি দেখলাম আমার গায়ে শুধু রক্ত আর রক্ত। অর্থাৎ ঐ যে স্প্রিন্টারগুলো সব এসে আঘাত করছে হানিফ ভাইয়ের মাথায় ও গায়ে। যেহেতু সে ধরে রেখেছে তার রক্তে আমার শরীর ভেসে যাচ্ছে। তিনটি গ্রেনেড ফোটার পর কয়েক সেকেন্ড বিরতি দিয়ে আবার। মনে হচ্ছে যেন এর শেষ নেই, কেয়ামতের মতো। চারিদিকে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। জানি না, আল্লাহ কিভাবে হাতে তুলে আমাকে বাঁচালেন। আমার গায়ে একটাও স্প্রিন্টার লাগেনি। কিন্তু আওয়াজে ডান দিকের কানে আর শুনতে পাচ্ছিলাম না।
যখন আমি গাড়িতে উঠতে যাব, দরজাটা খুলে মাহবুব দাঁড়ানো (২১ আগস্ট শহিদ, তাঁর দেহরক্ষী) তখনই গুলি আসলো এবং সেই গুলিতে মাহবুব মারা গেল। আরো কয়েকটি গুলি এসে গাড়িতেও লাগলো (বুলেট প্রুফ গাড়ি)। যেখানে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে সাধারণত পুলিশ এগিয়ে আসে সাহায্য করতে, যারা আহত বা তাদেরকে রক্ষা করতে। এইখানে দেখা গেল উল্টো। বরং আমাদের নেতাকর্মী দূরে যারা ছিল তারা যখন ছুটে আসছে তাদেরকে আসতে দেয়া হচ্ছে না বরং টিয়ারগ্যাস মারা হচ্ছে, লাঠিচার্জ করছে পুলিশ। তার মানেটা কী? যারা আক্রমণকারী এদেরকে রক্ষা করা, এদেরকে রেসকিউ করার জন্যই এই টিয়ারগ্যাস মারা, লাঠিচার্জ করা।
সব থেকে দুর্ভাগ্যের বিষয় বিএনপিমনা ডাক্তারদের কেউ সেদিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিল না। আর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কোন আহতকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বলেছে এখানে ইমর্জেন্সিতে চিকিৎসা নিতে পারবে না। সেটা সম্পূর্ন বন্ধ। আর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিএনপিমনা কোন একটা ডাক্তারও সেদিন ওখানে কোন চিকিৎসা করেনি। আমাদের ডাক্তার রোকেয়া আইভি রহমানসহ প্রায় ৭০ জনকে নিজে একা অ্যানেস্থেসিয়া দিয়েছে।’’
গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বক্তব্যে সেদিনের ঘটনাবলী উঠে এসেছে। সেই হামলায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের কথাও গণমাধ্যমে উঠে আসছে। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের এ কান্না হয়তো কোনদিনও শেষ হবে না। এছাড়া আহত অনেকেই এখনও পঙ্গুত্ব বরণ কিংবা স্প্রিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন। এ হত্যাকাণ্ডের মামলার রায় কার্যকরের মাধ্যমে তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব করা যেতে পারে। এছাড়া রায় পুরোপুরি কার্যকর হলে ভবিষ্যতের জন্যও রাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এটি একটি বার্তা হয়ে থাকবে।