হাতে হাতকড়া পরানো হাসপাতালের বিছানায় শোয়া তরুণের নাম নাজমুল হোসাইন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪২তম ব্যাচের ছাত্র। তার অপরাধ; দুইদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন। ওই অন্দোলনের এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়া নাজমুলকে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। তবে হাতকড়া পরিয়ে। পুলিশের এমন মহৎ(!) কাজের উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। বলতে গেলে প্রায় প্রতিদিনই সারাদেশের কোথাও না কোথাও এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকে পুলিশের অতি উৎসাহী কিছু সদস্য। বছর দেড়েক আগে আমরা দেখেছি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে এক পা হারানো সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর ইশারায় কতটা দ্রুততার সঙ্গে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে নিয়েছিল পুলিশ। আমরা এও দেখেছি; গত বছর রংপুর চিনিকলের বিরোধপূর্ণ জমি দখলে নিতে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে সাঁওতালদের ওপর হামলা চালিয়েছিল পুলিশ। সেই হামলায় তিন সাঁওতাল নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছিল অনেকেই। এদের মধ্যে গুরুতর আহত তিন সাঁওতালকে হাসপাতালের বিছানায় কোমরে দড়ি আর হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছিল। সেদিন উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর সেই হাতকড়া খুলে নিতে হয়েছিল। আজ নাজমুল হোসাইনের ঘটনায় আবারও উচ্চ আদালত বিষয়টি নজরে নিয়ে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তলবের পাশাপাশি ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন। বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দেয়া রুলে জানতে চান, হাতকড়া পরানো অবস্থায় চিকিৎসাসেবা কেন বেআইনি হবে না। এই ঘটনায় আমরা লক্ষ্য করেছি সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তির তৎপরতায় জানাযার জন্য ক্যাম্পাসে নিহত শিক্ষার্থীর মরদেহ না এনে এক প্রকার লোকচক্ষুর আড়ালেই তাদের যার যার গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু মৃত দুই সহপাঠির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন আচরণ মেনে নিতে পারেননি বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ কয়েকটি দাবিতে তারা আন্দোলনে নেমে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। সেই অবস্থানে লাঠিপেটা করে-টিয়ারশেল চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভিসি ভবনের ভেতরে অবস্থান নেয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গভীর রাতে পুলিশ ডেকে পাঠায়। পুলিশ কয়েকজন ছাত্রীসহ ৪২ জনকে আটক করে নিয়ে যায়। তাদেরই একজন হাতকড়া পরানো নাজমুল। আমাদের প্রশ্ন: নিহত দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ নিয়ে কেন এমন আচরণ করা হলো? কেন তাদের মরদেহ জানাযার জন্য ক্যাম্পাসে আনতে দেয়া হলো না? কেন ছাত্রদেরকে বিক্ষুব্ধ করে তোলা হলো? এর পেছনে কারা ছিলো? আমরা বলতে চাই প্রতিবাদী একজন অসুস্থ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে হাতকড়া পরিয়ে পুলিশ ঘৃণ্যতম কাজ করেছে। ভবিষ্যতে যেন আর কোন নাজমুল এমন অবস্থার শিকার না হন- সেজন্য পুলিশ প্রশাসনকে কড়া উদ্যোগ নিতে হবে।