বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের সকল আয়োজন বন্ধ করতে নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।কারণ দেশব্যাপী দুর্যোগের ঘনঘটা। থেমে আছে সমাজের কুৎসিত অমানুষগুলোর দ্বারা শিশু ও নারী নির্যাতন। আপাতত প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে পুরনো রোগ সড়ক দুর্ঘটনা। চীনে যখন করোনাভাইরাসের কথা প্রথম জানা যায় তখন আমরা আদৌ ভাবিনি আজকের পরিস্থিতি।
ইটালি ফেরত বাংলাদেশি তিনজনকে করোনাভাইরাসে শনাক্ত করা হয় ৮মার্চ বিশ্ব নারী দিবসে।প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কিংবা যে যার মতো করে সেদিন নারী দিবস পালন করছিলেন। আমাদেরও ছোট্টো প্রতিষ্ঠান বিকাশ পাঠাগারে নারী দিবস পালন হলো না, হলো না মার্চে বইমেলাসহ নানা আয়োজন।
এরকম দুর্যোগের আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে সকাল ১০টা অথবা ১১টার দিকে এনা বাসের সাথে একটি কাভার্ড ভ্যানের সংঘর্ষ ঘটে। ঘটনাস্থলে ৩/৪জন নিহত হন। বিশজন গুরুতরভাবে আহত হলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।বিশজনের মধ্যে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্রী সাবরিনা রহমান মীম (নিকট আত্মীয়) অতি গুরুতরভাবে আহত হলে প্রথমে পঙ্গু হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ডাক্তাররা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেন। তিন সপ্তাহ আইসিইউ তে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে মীম ৮মার্চ পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিলেন। মীমের মায়ের আহাজারিতে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে সৃষ্টি হয়েছিল এক হ্দয় বিদারক পরিবেশের। মীমের দুর্ঘটনার আদি অন্ত জানতে পেরেছি আত্মীয়তার সূত্রে। বাকি ১৯ জনকে না জানি কী বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।
অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনাই ঘটছে চালকের গাফিলতির কারণে। চলন্তগাড়িতে মোবাইল ফোনে কথা বলা, ধুমপান এবং দুরপাল্লার বাসগুলো চালানো হয় গতিসীমা ছাড়িয়ে প্রতিযোগিতায়। সড়ক দুর্ঘটনার আলোচনাকে আজ আর সম্প্রসারিত করতে চাই না। চারদিকে দুঃসময়ের ভয়াবহতা।
এরকম যখন দুঃসময় আর তখনই মানুষের মানবিক গুণাবলির পরিচয় মেলে। আজ যারা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে, মরণব্যাধি থেকে মানুষকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন,তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এসেছেন। সর্বসাধারণের প্রতি মোটামুটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ঘরের বাইরে যাওয়ার উপর।মানুষ বাঁচতে চায়, বাঁচতে চায় মুমূর্ষু অবস্থায়ও। তাই লকডাউনের নির্দেশ অমান্য করছে না তেমন কেউ। করোনাভাইরাসে আক্রন্ত হয়ে সারাবিশ্ব আজ মহামারিতে প্রকম্পিত। যা থেকে রক্ষা পেতে এক মাত্র পথ আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন।রেডিও,টেলিভিশন, সংবাদপত্র, মাইকিংসহ সরকারি বেসরকারি নানান উপায়ে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে।
ঘরে বসেই সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে কিছু মানুষ নানান গুজবমূলক প্রচার করে জনগণকে বিভ্রান্তিতে ফেলছে। বিপদের দিনে সঠিক তথ্য ও পরামর্শ সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের মায়া পরিত্যাগ করে ডাক্তার নার্স চিকিৎসা ও সেবা প্রদান করছেন। সেনাবাহিনী দেশের দুর্যোগে সব সময় প্রস্তুত। আজও তারা সেই কাজটিই করছেন। সংবাদকর্মীরা ঝুঁকি নিয়েই খবর পৌঁছে দিচ্ছেন। পরিচ্ছন্নকর্মী, সিকিউরিটি গার্ড প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠাবান।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধ একটি অঘোষিত ও অদৃশ্য যুদ্ধ। এই যুদ্ধে যে সকল সাহসী ভাই বোনেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন, তাদের প্রতি আমি আমরা দেশবাসী কৃতজ্ঞ। ঘরে বসে আমাদের দায়িত্ব দোয়া ও প্রার্থনা করা সৃষ্টিকর্তা যেন বিশ্বের সকল মানুষকে কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা করেন। মানুষের বেঁচে থাকার বড় অবলম্বন আত্মবিশ্বাস। তাই আমরা বেঁচে থাকব আশা নিয়ে। আবার আকাশে নতুন সূর্য উদিত হবে আর প্রকৃতি দেবে বিশুদ্ধ বাতাস।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)