আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনে দায়িত্বরত কর্মকর্তারাও নৌকার পক্ষে কাজের মাধ্যমে কমিশন নিজেই নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন।
রিজভী বলেন, আগামী তিন সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মেয়র ও কয়েকজন সংসদ সদস্য ব্যাপকভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নৌকা মার্কার পক্ষে প্রচারণা তো চালাচ্ছেনই, এর উপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, সরকারী কলেজ শিক্ষক, সিভিল সার্জনসহ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যক্ষভাবে নৌকা মার্কার পক্ষে কাজ করছে। এমনকি নির্বাচনের দায়িত্বরত কর্মকর্তারাও নৌকার পক্ষে কাজ করছে। নির্বাচন কমিশন নিজেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে।
তিনি বলেন, বিএনপি’র পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে গ্রেফতার, গণগ্রেফতার, হয়রানী, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় বাধাসহ নানা বিষয়ে কমিশনের অভিযোগের পাহাড় জমা হলেও গতকাল ইসি সচিব বলেছেন-সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। অথচ কমিশনের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছিল-তিন সিটি নির্বাচনে কাউকেই গ্রেফতার করা যাবে না। ইসি সচিবের এই বক্তব্য পক্ষপাতমূলক এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তরায়।
বিএনপি নেতা বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন যতই ঘনিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের ক্যাডার’রা ভোটারশুন্য নির্বাচন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুলিশ এই প্রস্তুতিতে সহায়তা করছে। পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র উচিঁয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মারধর করছে এবং পুলিশকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিচ্ছে। সরকার দলীয় প্রার্থীর নির্দেশে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও তাদের অঙ্গ এবং সহযোগি সংগঠনের সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা বিএনপি’র গণসংযোগ ও পাড়া মহল্লায় নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন এবং নারী কর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। এ নিয়ে রাজশাহী নির্বাচন কমিশন অফিসে প্রতিনিয়ত অভিযোগ করলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
“আগামী তিন সিটির নির্বাচনে এখনই ক্ষমতাসীনদের দাপট ও দৌরাত্ম যে বিভৎস রুপ নিয়েছে তাতে এইচ টি ইমাম সাহেবের আগামী তিন সিটির বেটার নির্বাচনের আভাস পাওয়া যায়’-বলেন রিজভী।
রিজভীর দাবী, আওয়ামী লীগের কোন ভোট নেই, পরাজয় নিশ্চিত জেনেই সন্ত্রাসের ওপর তারা নির্ভর করেছে। পাড়া মহল্লায় ধানের শীষের গণজোয়ার বইছে। ভোটারগণ আগামী ৩০ জুলাই শতবাধা উপেক্ষা করে এর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। রাজশাহীতে গণগ্রেফতার করেও সরকার দলীয় প্রার্থী পার পাবে না। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা সরকারী সন্ত্রাসীদের বাধা অতিক্রম করে সাধারণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়া নিশ্চিৎ করবে এবং ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করবে।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, গতকাল কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে সকাল ৮টায় ভোট শুরুর পর থেকে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে বিএনপি’র এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। ভোটকেন্দ্রে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রিজাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ব্যালট পেপার ছিনতাই, জাল ভোট প্রদান, নৌকা প্রতীকে জোর করে সীল মারা, প্রায় সকল কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্র দখল করে জালভোটের মহৌৎসব চলেছে কক্সবাজার পৌর নির্বাচনে, যা আপনারা আজকের গণমাধ্যমে ছবিসহ প্রত্যক্ষ করেছেন। এছাড়া গতকাল নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার পৌরসভা নির্বাচন অনুুষ্ঠিত হয়। ভোটের দিনের আগে থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম চলে। ভোটারদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, বিএনপি’র এজেন্টদের মারপিট করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া,ব্যালট পেপার ছিনতাই ও জাল ভোট প্রদানের মহৌৎসবে মেতে ওঠে সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা।
রিজভী বলেন, দেশে এখন গায়েবী শাসন চলছে। চারিদিকে এখন শুধু গায়েবের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। এদেশে মানুষ গায়েব হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ গায়েব হয়, সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকের লাখ লাখ কোটি টাকা গায়েব হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট থেকে সোনা গায়েব হয়, সোনা গায়েব হয়ে মিশ্র ধাতুতে পরিণত হয়, শেয়ার বাজারের টাকা গায়েব হয়, এখন অমূল্য সম্পদ দেশের খনি থেকে লাখ লাখ টন কয়লাও গায়েব হয়ে গেছে। এ নিয়ে এতো আলোড়ন তৈরি হলেও সরকার তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। বিদ্যুত ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজে। এই লাখ লাখ টন কয়লা গায়েবের দায় তিনি এড়িয়ে যেতে পারেন না। সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দেশ হলে প্রধানমন্ত্রী এতবড় কেলেঙ্কারির দায়ে পদত্যাগ করতেন। কিন্তু বাংলাদেশের অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাকে যক্ষের ধনের মতো ভালবাসেন, তাই তিনি সব বিসর্জন দেবেন, কিন্তু ক্ষমতা ছাড়বেন না।