চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

এবার নিউট্রন নক্ষত্রের সংঘর্ষে সৃষ্ট মহাকর্ষ তরঙ্গ পাকড়াও

‘নজিরবিহীন’, ‘তুলনাহীন’, ‘অতি-রোমাঞ্চকর’, ‘অতিকাঙ্ক্ষিত’। নতুন উৎস থেকে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করার ঘোষণার পর লাইগোর বিজ্ঞানীরা এভাবেই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

সোমবার আন্তর্জাতিক এ সংঘ ঘোষণা করে, এবার জোড়া নিউট্রন নক্ষত্রের সংঘর্ষে সৃষ্ট মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ধরতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা।

লেজার ইন্টারোফেরোমিটার গ্রাভিটেশনাল-ওয়েভ অবজারভেটরি বা লাইগো নিজস্ব সাইটে এক বিবৃতিতে অধুনা আবিষ্কারের কথা ঘোষণা দেয়। গত বছর তারা ঘোষণা করেছিল, জোড়া কৃষ্ণগহ্বরের সংর্ষষে সৃষ্ট মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করা গেছে।

প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন এমন তরঙ্গের কথা ১৯১৬ সালে অনুমান করেছিলেন। আইনস্টাইনের তরঙ্গ শনাক্ত করার স্বীকৃতিস্বরূপ লাইগোর শীর্ষ তিন বিজ্ঞানী এবার পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। সহস্রাধিক বিজ্ঞানীর এ সংঘে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই মার্কিন বিজ্ঞানীও রয়েছেন।

লাইগো ডট অর্গ বিবৃতিতে জানিয়েছে, চলতি বছর ১৭ আগস্ট তারা নতুন করে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ধরতে পেরেছে। এই আবিষ্কারের সবচেয়ে বড় তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, নিউট্রন তারকা দুটোর সংঘর্ষকে তারা একই সঙ্গে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ এবং আলো হিসেবে দেখতে পেয়েছেন। লাইগো বলছে, এভাবে এই প্রথম কোনো মহাজাগতিক ঘটনা দেখতে পেল মানুষ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে লাইগোর দুই বিজ্ঞানী নতুন এই ঘোষণার কথা দিন দশেক আগেই এই লেখককে জানিয়েছিলেন। তারা অবশ্য ঠিক কী ঘোষণা করা হবে- সেটাও প্রকাশ করতে চাননি।

নিউট্রন নক্ষত্ররা হলো সবচেয়ে ছোট্ট কিংন্ত সবচেয়ে ঘন ও ভারী সূর্য। এরকম তারার দুই প্রান্তের ব্যবধান মাত্র ২০ কিলোমিটার। কিন্তু এতই ঘন যে, এক চা চামচে যতটুকু নিউট্রন তারার পদার্থ রাখা যায় তারই ভর হবে একশ কোটি টনেরও বেশি।

এরকমই দুটো নিউট্রন নক্ষত্রের সংঘর্ষে সৃষ্ট হওয়া মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ধরেছে লাইগো। এছাড়া এতে ইউরোপের ভার্গো অবজারভেটরি এবং আরও ৭০টি আন্তর্জাতিক অবজারভেটরি এই আবিষ্কার ও গবেষণায় সম্পৃক্ত রয়েছে।

১৭ আগস্ট লাইগোর ডিটেক্টরে যে মহাজাগতিক সংকেতটি পাওয়া যায় তার বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবী থেকে ১৩ কোটি আলোকবর্ষ দূরে দুটো নিউট্রন নক্ষত্রের সংঘর্ষ হয়েছিল। তখন যে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ তৈরি হয়েছিল এবং ছড়িয়ে পড়েছিল, এ বছর সেই তরঙ্গগুলোই তারা পাকড়াও করেছেন। ওই দুটো নক্ষত্রের একটির ভর আমাদের সূর্যের চেয়ে সামান্য বেশি। আরেকটি সূর্যের চেয়ে দেড়গুণের কিছু ভারী। এদের সংঘর্ষে সৃষ্ট আইনস্টাইনীয় তরঙ্গকে বিজ্ঞানীরা প্রায় ১০০ সেকেন্ড ধরে দেখেছেন। পাশাপাশি একই ঘটনা বিজ্ঞানীরা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ দেখার পর দুই সেকেন্ড ধরে আলোর রূপে দেখেছেন। এমন ঘটনা এই প্রথম।

এর আগে যে দুই কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষ থেকে সৃষ্ট মহাকর্ষীয় তরঙ্গ বিজ্ঞানীরা ধরেছিলেন সেগুলো আরও ভারী ছিল। এবং ওই সংঘর্ষ হয়েছিল একশ কোটি আলোকবর্ষের দূরে।

২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি লাইগো আনুষ্ঠানিকভাবে আাইনস্টাইনের তরঙ্গ ধরার কথা প্রকাশ করেছিল। তবে ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর হচ্ছে ‘বিজ্ঞানের বড়দিন’, যেদিন জার্মানিতে গবেষণাকালে লাইগো ইতালীয় বিজ্ঞানী মার্কো ড্রাগো এই তরঙ্গ প্রথম অবলোকন করেন। আর এই মহাআবিষ্কারের কৃতিত্বস্বরূপ এ বছর নোবেল পেয়েছেন রাইনার উইস, ব্যারি ব্যারিশ ও কিপ থর্ন।

লাইগোতে যুক্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই বিজ্ঞানীর একজন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী সেলিম শাহরিয়ার। অপরজন হলেন যুক্তরাষ্ট্রের অরিগন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী দীপঙ্কর তালুকদার।

মহাকর্ষীয় তরঙ্গ খুবই দুর্বল। এরা সাধারণত বস্তুর সঙ্গে কোনো মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত হয় না। ফলে আমাদের চারপাশে সব সময়ই থাকা সত্ত্বেও আমরা তাদের অনুভব করতে পারি না।