বাজারে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও চালের দাম বেড়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা। আর এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে চালের দামের এই চিত্র পাওয়া গেছে।
চালের দাম বৃদ্ধির জন্য পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা দায়ী করছেন মিল মালিকদের। তারা বলছেন, মিল মালিকরা দাম বাড়ালে তাদেরও বাড়াতে হয়। দাম ওঠানামা নির্ভর করে মিল মালিকদের মর্জির ওপর। তারা কারসাজি করে দাম বাড়ান।
তবে মিল মালিকরা বলছেন, কৃষকের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করার জন্য মাঝেমধ্যে ২/১ টাকা দাম বাড়ে। এছাড়া দাম একেবারে কমে গেলে ব্যবসায়ীরা চোরাই পথে চাল রপ্তানি করে দিতে পারে। এসব কারণে দাম বাড়তে পারে।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৫ দিনের ব্যবধানে ৩ দফায় বেড়েছে মিনিকেট চালের দাম। প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় বেড়েছে প্রায় ২শ’ টাকা। আর খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে প্রায় ৪ থেকে ৫ টাকা। এছাড়া অন্যান্য চালের দামও মানভেদে প্রতিবস্তায় বেড়েছে প্রায় ১শ’ থেকে দেড়শ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিনিকেট চাল এখন মৌসুমের শেষ পর্যায়ে। এপ্রিলের দিকে মিনিকেট চালের নতুন ধান আসবে। বোরো ধান উঠার আগে এই দাম কমার সম্ভাবনা কম।
কারওয়ান বাজারে চাল ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মোল্লা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমরা পাইকারি আনি মিল মালিকদের থেকে। তারা দাম বাড়ালে আমাদেরকেও বাড়াতে হয়। দাম বাড়ছে কেন এর জবাব মিলাররা ভালভাবে বলতে পারবেন।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির বাজার দরের তালিকায়ও দেখা গেছে, চালের দাম বাড়ছে।
সংস্থাটির তথ্যমতে, সরু চালের কেজি ৫২ থেকে ৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর এক মাস আগে ছিল ৪৫ থেকে ৬০ টাকা। এই হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ২ টাকা আর মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৫ টাকা।
নাজিরশাইল ও মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, যা গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৫২ আর এক মাস আগে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ২ আর মাসের ব্যবধানে ৫ টাকা বেড়েছে।
এছাড়া মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না) ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে।
গত বছর চাল রপ্তানি করা হবে বলেও জানিয়েছে সরকার। দাম না পেয়ে কৃষক ধান পুড়িয়েছে এমন খবরও শোনা গেছে। এরপরও চালের দাম বাড়ছে কেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি জাকির হোসাইন রনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, গত বছর কৃষক তাদের উৎপাদনের চেয়ে অর্ধেক দামে ধান বিক্রি করেছে, দাম না পেয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে, পুড়িয়ে ফেলছে। সেই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।
‘সরকার তো চালের দাম বেঁধে দেয় না। দাম নির্ভর করে চাহিদা ও যোগানের ওপর। অনেক সময় চাহিদা বাড়ে আবার যোগান কমে যায়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে দাম বেড়ে যায়। এছাড়া কখনো কখনো মিল মালিকেরা চালের দাম কৌশলে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে। এসব কারণে দাম বেড়ে যায়।’
রনি বলেন, বোরো এবং আমন দুই মৌসুমই শেষ হয়েছে। চালও কমে আসছে। এখন চিকন চাল মানুষ বেশি খাচ্ছে। তাই এর দাম বাড়তি। এই বাড়তি দাম খুব বেশি দিন স্থায়ী হবে না। হাওরে বন্যার কারণে ২০১৭ সালে লাফিয়ে লাফিয়ে চালের দাম যে হারে বেড়েছে, সে রকম কোনো কিছু হবে না। দুইএক টাকা দাম বাড়তেই পারে। এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
তবে কৃষককে বাঁচাতে দাম বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন বাংলাদেশ রাইস মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবু।
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, চালের দাম কমে গেলে কৃষক ধান উৎপাদন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। অন্যদিকে চালের মূল্য না পেলে ব্যবসায়ীরা অবৈধপথে চাল রপ্তানি করে দিতে পারে। তাই চালের দাম এখন যে অবস্থায় আছে তা বেশি নয়। সবাইকে মনে রাখতে হবে কৃষককে বাঁচানো সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। দাম কমে গেলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
বাজারে কয়েকদিন ধরে চিনির দামও বাড়তি। দাম এক মাসের মধ্যে চিনির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা। এর আগে যে চিনি বাজারে ৫৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৭ টাকা। আর প্যাকেট জাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকায়।
একইভাবে গত সপ্তাহের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে তেল। বর্তমানে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ৯৮ টাকায়। খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। আর প্রতি কেজি পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। যা এর আগে বাজারে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়াও সবজির বাজার গত সপ্তাহের মতই স্থিতিশীল দেখা গেছে। সব ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে ৫০ টাকার মধ্যে।