তিন প্রস্তুতি ম্যাচে তিনশ পেরোনো সংগ্রহ। আশা যোগাচ্ছে আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো কিছুর। দুটি আইরিশ ও একটি কিউই ম্যাচ জিতলেই আবার র্যাঙ্কিংয়ের ছয়ে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ। তাতে পরবর্তী ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি অংশ নেয়াও নিশ্চিত হবে। মিলবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দারুণ কিছু করার বাড়তি আত্মবিশ্বাসও। এমন অনেক সমীকরণ নিয়ে স্বাগতিকদের বিপক্ষে নামছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। টাইগার অধিনায়ক অবশ্য ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষ নয়, নিজেদের জন্য আইরিশ কন্ডিশনকেই বড় চ্যালেঞ্জ মানছেন।
ডাবলিনে শুক্রবার ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে টাইগাররা। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল পৌনে চারটায়। অবশ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে এই ম্যাচে খেলতে পারবেন না মাশরাফি।
আয়ারল্যান্ডের মাটিতে ২০১০ সালের পর ওয়ানডে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। এখানে রেকর্ড ভালো নয় টাইগারদের। তিন ম্যাচ খেলে দুটি হারের পিঠে একটি জয়। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে ডাবলিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭ উইকেটে হার; আবার আইরিশদের বিপক্ষেই পরের হারটি। ২০১০ সালে প্রথম ম্যাচে ৭ উইকেটে হারার পর দ্বিতীয়টিতে ৬ উইকেটে জিতেছিল লাল-সবুজরা।
সেই বাংলাদেশ এখন অনেক বদলে গেছে। তারপরও প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান রেখেই কন্ডিশনের বিষয়টি ভাবাচ্ছে মাশরাফিকে। নিজেদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট আখ্যা দিয়ে অধিনায়ক গত দুই-আড়াই বছরের উন্নতির ধারাটা ধরে রাখার কথা বললেন সংবাদ মাধ্যমে। এখানে ভালো করলে সেটার প্রভাব চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও কাজে দেবে বলে মত তার।
খেলোয়াড়রা সবাই ফিট আছে বলে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন মাশরাফি। আবহাওয়ার সঙ্গে তারা মানিয়ে নিয়েছে বলেও মত দলপতির। ইংল্যান্ডে বেশ ঠাণ্ডা ছিল, আয়ারল্যান্ডে অতটা নয়; প্রস্তুতিও ভালো হয়েছে জানালেন। সব মিলিয়েও হিসাবের খাতায় ওই কন্ডিশনের কথাই রাখছেন অধিনায়ক, ‘দেশের বাইরে খেলা যেকোনো দলের জন্যই চ্যালেঞ্জের। আয়ারল্যান্ড তো ভালোই করছে। চেনা কন্ডিশনে খেলবে তারা। সেরাটা দিতে চেষ্টা করবে। আমাদেরও সেরা ক্রিকেট খেলেই এগোতে হবে।’
মূল লড়াইয়ে নামার আগে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে উড়ন্ত পারফরম্যান্স ছিল বাংলাদেশের। বেলফাস্টের স্টোরমন্ট ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আয়ারল্যান্ড উলভসের বিপক্ষে ৩৯৪ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ গড়ার পর টাইগাররা প্রতিপক্ষকে ১৯৫ রানে গুটিয়ে দিয়ে ১৯৯ রানের জয়ে প্রস্তুতি সেরেছে। তার আগে সাসেক্সে দশদিনের প্রস্তুতি ক্যাম্প। দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ। তাতে দুর্দান্ত ছিল ব্যাটসম্যানদের প্রদর্শনী। বোলাররাও পিছিয়ে ছিলেন না। এবার সেটি আসল মঞ্চে টেনে আনার পালা।
ব্যাটিং-বোলিংয়ে ঝালিয়ে নিয়ে আদর্শ প্রস্তুতিই পেয়েছে বাংলাদেশ। চাপে থাকা মাহমুদউল্লাহ ঝোড়ো ক্যামিও খেলে তৃপ্তির কথা জানিয়েছেন ফেসবুকে। ত্রিদেশীয় সিরিজে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে যথার্থ এক প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছেন বলে মন্তব্য তার। সেটা শুক্রবারের ম্যাচেও করার প্রত্যয় তার।
মুশফিককে নিয়ে মাহমুদউল্লাহ আইরিশদের ওপর চড়াও হয়ে জুটিতে ৪৮ বলে ৯১ রান যোগ করেন। মাহমুদউল্লাহর ৩১ বলে ৪৯ সাজানো ইনিংস ৮ চার ও ১ ছয়ে। ৪ চার ও ২ ছয়ে ২৪ বলে ৪১ রান মুশফিকের। মুশফিক আগের দুই ম্যাচে অপরাজিত ১৩৪ ও ৪০ রানে নিজেকে ঝালিয়ে নিয়েছেন।
আগের দুই প্রস্তুতি ম্যাচে না খেলা তামিম ৮৬ রানে প্রস্তুতি সেরেছেন। পিঠের পুরনো চোটের কারণে সতর্ক ছিলেন। প্রস্তুতির ঘাটতিটা পোষানোর পাশাপাশি সেই অস্বস্তিটাও কেটেছে তার! উদ্বোধনী সঙ্গী সৌম্য এদিন ১৭ করলেও সাসেক্সের প্রস্তুতি ম্যাচে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে ছন্দে থাকার কথাই জানান দিয়েছেন।
ওয়ান ডাউনে যার ওপর ভরসা করবে দল, সেই সাব্বির রহমান সামর্থ্যের জানান দিয়ে ৮২ বলে সেঞ্চুরি তুলে স্বেচ্ছা অবসরে গিয়েছিলেন। মূল মঞ্চে ঝড় তুলতে প্রস্তুত তিনিও। মিডল অর্ডারের আরেক ভরসা সাকিব আইপিএল খেলে যেয়ে একটি প্রস্তুতি ম্যাচেই কেবল নেমেছেন। তাতে ২৭ বলে ৪৪ রানের ইনিংস সাজানোর পর বল হাতে দুই উইকেট। শ্রীলঙ্কায় শেষ টি-টুয়েন্টিতে ম্যাচসেরা হওয়া টাইগার অলরাউন্ডারও ভরসা যোগালেন, আইপিএলে বেঞ্চ গরম করতে হলেও ভাটা পড়েনি তার ক্রিকেটীয় ক্ষুধায়।
রান পেয়েছেন লোয়ার মিডলের প্রথম পছন্দ মোসাদ্দেকও। ইংল্যান্ডে প্রথম প্রস্তুতিতে নাসিরও কিছু রান করে সুযোগের অপেক্ষাতে। মিরাজ তো ব্যাটে-বলেই দারুণ করছেন গত কিছুদিন। টপ, মিডল ও লোয়ার অর্ডারে ভরসা যোগাচ্ছেন সকলেই। এমনকি তৃতীয় ওপেনার ইমরুল কায়েসও রানের ধারাবাহিকতায় আছেন। প্রস্তুতিতে ৯২ রান করে স্বেচ্ছায় ক্রিজ ছাড়ার একটি ইনিংস আছে তার নামের পাশে।
বোলিংয়েও মন্দ হয়নি প্রস্তুতি। চার পেসার হাত ঘুরিয়েছেন শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে। আইপিএল খেলে দেরিতে যোগ দেওয়া মোস্তাফিজ, দেশ থেকে ঘুরে যাওয়া মাশরাফি, সুযোগের অপেক্ষায় থাকা রুবেল দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। এই ম্যাচে না খেলা তাসকিন আহমেদ ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রস্তুতি ম্যাচে দারুণ করেছেন। শুভাশিসও পিছিয়ে ছিলেন না।
আত্মবিশ্বাসের পালে হাওয়া দিচ্ছে সাসেক্সে বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ডিউক অব নরফোক একাদশের বিপক্ষের পরফরম্যান্সটাও। হোভের সেন্ট্রাল ক্রিকেট গ্রাউন্ডে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে সাসেক্স একাদশকে তাসকিন-সানজামুলরা ১৮০ রানে অলআউট করে দিয়েছিলেন। এই দুই ম্যাচেই আগে ব্যাট করে যথাক্রমে ৭ উইকেটে ৩৪৫ এবং ৯ উইকেটে ৩১৪ রান তুলেছে টাইগাররা। ব্যাটে-বলে তাই পাল্লা দিয়েই প্রস্তুতি সারা গেছে বলা যায়।
আইরিশদের বিপক্ষে একাদশ কেমন হতে পারে তার একটি ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বেলফাস্টের প্রস্তুতি ম্যাচেই। সম্ভাব্য পছন্দের একাদশটাই এদিন নামিয়েছিলেন চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে। শুক্রবার সেখান থেকে যদিও একটি পরিবর্তন এনেই নামতে হবে। নিষেধাজ্ঞায় থাকা মাশরাফির জায়গায় ঢুকে যেতে পারেন তাসকিন।
সবমিলিয়ে সেরা একাদশ, সাইডবেঞ্চ, ব্যাটসম্যান, বোলার, অলরাউন্ডার; সেরা প্রস্তুতি সেরে রেখেছে সববিভাগই। এখন সেটি কেবল মাঠের পারফরম্যান্সে অনুদিত করার পালা টাইগারদের। তাতে সঙ্গী হচ্ছে সর্বশেষ লঙ্কা সফরে তিন ফরম্যাটে সিরিজ ড্র করার আত্মবিশ্বাস, গত বছর দুয়েক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দাপুটে বিচরণ থেকে পাওয়া রসদগুলোও সঙ্গেই থাকবে। এখন দুয়ে দুয়ে মিলে গেলে র্যাঙ্কিং ভাবনাটাও ঠিকানা পায়।