গত প্রায় সাত বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সুদৃঢ় অবস্থানের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে জামাতিরা আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়ছে। স্থানীয় অনেক আওয়ামী লীগ নেতা দলে নিজের গ্রুপ ভারী করার জন্য দলের নীতিবিরুদ্ধ এই কাজটি করেছেন এবং করছেন। জামাতিরা দলে ঢুকে কোন্দল সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগারদেরই খুন করছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগে জামাতি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এগিয়ে আসলেন খোদ দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেদারল্যান্ডস সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কার করেই জানিয়ে দিলেন বিএনপি-জামায়াতের লোক আর আওয়ামী লীগে গ্রহণ করা হবে না। খুবই যৌক্তিক। জামায়াতের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতির এ অবস্থান নতুন নয়। কিন্তু তারপরও দলের নেতারা কেনো বার বার জামাতিদের দলে ভেড়াচ্ছেন? যারা জামাতিদের দলে নিচ্ছেন তারা কি আওয়ামী লীগের আদর্শ এমনকি দলের সভাপতির মনোভাব বোঝেন না? না কি বুঝেও না বোঝার ভান করছেন অথবা নিজেদের স্বার্থেই জামাতিদের দলে টানছেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের অবস্থা যত সুদৃঢ় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্নস্থানে জামাতিরা সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগে ঢুকছে। খোদ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ কুষ্টিয়ায় জামায়াত নেতাকে আওয়ামী লীগে যোগদান করান। হানিফের হাতে ফুল দিয়ে মামলার আসামী ওই জামায়াত নেতা হানিফকে যে ফুল বানিয়েছেন সেটা তিনি বুঝতে পেরেছেন কিনা জানিনা। তবে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কর্মীরা সেটা বুঝেছিলেন ঠিকই। জামায়াত নেতাকে আওয়ামী লীগে যোগদান করানোর ঘটনায় হানিফ সাহেব বেশ আলোচিতই হয়েছিলেন। এই মুহূর্তেও হানিফ সাহেব এক আলোচিত নামই বটে।
শুধু আওয়ামী লীগ নেতারাই নন ছাত্রলীগ নেতারাও কম যান না। তবে ছাত্রলীগ শিবির না টানলেও দলে টেনেছে ছাত্রদল ক্যাডার। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগের হাত ধরে ছাত্রলীগে এসছিলো নড়াইল ভিক্টেরিয়া কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাকিব।
এইতো কয়েকদিন আগেই লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের এমপি আবদুল্লাহ আল মামুন রীতিমতো মঞ্চ তৈরি করে আলো জালিয়ে রাতের আধার দূর করে এক জামাতিকে দলে ভেড়ালেন। এমপি সাহেব একজন পুরোনো আওয়ামী লীগার। উনি কি একবারও দলের পুরোনো কর্মীদের কথা চিন্তা করেছেন? একবারও কি ভেবেছেন যে জামায়াত সুযোগ পেলেই আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে সেই জামাতিদের দলে ভেড়ালে কতটা কষ্ট পেতে পারে কর্মীরা। আওয়ামী লীগের কর্মীরা। স্থানীয় পর্যায়ে জামাতিদের আওয়ামী লীগে ভেড়ানোর এরকম ঘটনা অনেক আছে।
বিভিন্ন জায়গায় এই জামাতিরাই আওয়ামী লীগে কোন্দল তৈরি করছে, খুন খারাবি করছে। যাদের যা অভ্যাস।
২০০১ সালের নির্বাচনের পর জামাতি তাণ্ডবে বহু আওয়ামী লীগ কর্মী এমনকি সমর্থকরা এলাকাছাড়া হয়েছেন। স্থানীয় পর্যায়ের অনেক আওয়ামী লীগ কর্মীকে বলতে শুনেছি দুঃসময়ে জামাতিদের হাতে মার খেতে হয়েছে, বাড়ি ছাড়া হতে হয়েছে। আর এখন দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিভিন্ন জায়গায় জামাতিদের দলে ভিড়িয়ে তাদের হাতে এখনও মার খাচ্ছে আওয়ামী লীগাররা।
যে নেতারা পুরোনো কর্মীদের ভুলে জামাতিদের কাছে টেনে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে চান তাদের ভেবে দেখা উচিত জামাতি খপ্পড়ে পড়ে আপনি যে কোনো সময় হারিয়ে যেতে পারেন। আর দলের ক্ষতির কথাই যদি বলি তাহলে সেটা আপনারা ভাবছেনই না।
এসব কারণে স্বাধীনতার স্বপক্ষের দলটির বিরুদ্ধে কম সমালোচনা হয়নি। ক’দিন আগেই এক আলোচনায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির এবং সাবেক ডেপুটি স্পিকার মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল শওকত আলী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জামাতিকরণের অভিযোগ করেছিলেন। তারা সতর্কও করে দিয়ে তারা বলেছিলেন এখনই ব্যবস্থা না নিলেও আওয়ামী লীগের অবস্থা বিএনপির মতো হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী সবই জানেন। আর জানেন বলেই সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, অনেক সময় গ্রুপিংয়ে দল ভারী করার জন্য এদেরকে দলে নেয়া হচ্ছে। তাই প্রধানমন্ত্রী সাফ বলে দিয়েছেন, বিএনপি-জামায়াতের কাউকে আর আওয়ামী লীগে গ্রহণ করা হবে না। নেতাকর্মীদের প্রতি এটা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশ।
প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার সংলাপ প্রস্তাবের বিষয়টিও উঠে আসে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কতগুলো অভিযোগ আনেন। নির্বাচনের আগে ও পরে আগুন সন্ত্রাসের কথা তুলে ধরে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে বিএনপিকে পরামর্শ দেন। একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচারপ্রক্রিয়াকে সমর্থন করার কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপিকে বারবার জামায়াতকে তালাক দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বিএনপিকে জামাত থেকে সরে আসতে বলেছেন আজকের সংবাদ সম্মেলনেই। এ অবস্থায় যদি জামাতিদের আওয়ামী লীগে ভেড়ানো হয় তাহলে যারা জামাতিদের দলে আনছেন তারা দলের নীতির বিরুদ্ধেই তা করছেন সে এমপি হোক, কেন্দ্রীয় নেতাই হোক কিংবা সহযোগী সংগঠনের যে কেউ। এখনই জামাতি অনুপ্রবেশ বন্ধ করা না গেলে আখেরে আওয়ামী লীগেরই ক্ষতি। জামাতি থাবায় রক্তাক্ত হতে পারে আওয়ামী লীগই।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)