সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডাব্লিউএইচও) একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকায় উঠে এসেছে দশটি বিষয়ের নাম যেগুলো এবছর মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। স্বাস্থ্য উন্নয়ন সম্পর্কিত কাজ যারা করেন, তাদের সুবিধার্থে এই তালিকা প্রকাশ করেছে ডাব্লিউএইচও। জেনে নিন তালিকার দশটি বিষয় সম্পর্কে।
অ্যান্টি ভ্যাকসিন মুভমেন্ট: পুরা বিশ্বের ভ্যাকসিন দেয়া নিয়ে আছে নানা ভ্রান্ত ধারণা। অনেকেই মনে করেন ভ্যাকসিন এর কারণে নানা শারীরিক সমস্যা হতে পারে শিশুর। ডাব্লিউএইচওর জরিপে দেখা গেছে ভ্যাকসিন ভীতির কারণে ২০১৮ সালে হাম এর প্রকোপ বেড়ে গেছে ৩০%।
ড্রাগ রেজিসটেন্ট সুপারবাগ: বিজ্ঞান এগিয়ে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে মাইক্রোবিস এবং সুপারবাগও শক্তিশালী হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে কিছু ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া এখন অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসটেন্ট হয়ে গেছে। ফলে টিবির মতো ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়াও এমন কিছু অসুখ হচ্ছে যেগুলো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেও ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু এবং বৃদ্ধরা ঝুঁকিতে আছেন। অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে ভবিষ্যতে এধরনের জীবাণুর প্রকোপ কমানোর চেষ্টা করা উচিত বলে মনে করছে ডাব্লিউএইচও।
বায়ু দূষণ: যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একিউআই সূচকে ৩০০ পয়েন্ট মানেই বাতাস বিপদজনক সীমা অতিক্রম করা, সেখানে ঢাকার বাতাস সম্প্রতি ৬০০ পয়েন্টও পার করেছে৷ সূচকে ঢাকা ৩০০ থেকে ৫০০ পয়েন্টের মধ্যে সবসময়ই আছে। ঢাকার বাতাস আছে প্রচুর ওজোন গ্যাস, হাইড্রোজেন সালফাইড, সিসা, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড। বিষাক্ত এইসব মাইক্রোপলিউট্যান্ট ছাড়াও আছে নানা রকম জীবাণু। ফুসফুস, ব্রেইন এবং শরীরের নানা স্থানের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে বায়ু দূষণের ফলে।
জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যে শুধু প্রকৃতির উপরে পড়ে তা কিন্তু নয়। বন্যা, ধূলি ঝড়, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে নানা রোগ ছড়ায় মহামারী আকারে। এছাড়াও খাবারের উপরেও পড়ে বিরূপ প্রভাব।
ফ্লু মহামারী: ফ্লু এর ভাইরাস এখন অনেক শক্তিশালী হয়ে গেছে। ওষুধেও ভালো হয় না, তাই চিকিৎসায় সফলতা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া খুব সহজ। তাই কোনো ধরণের ফ্লু এর প্রকোপ বেড়ে গেলে তা মহামারী আঁকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ডাব্লিউএইচও।
ইবোলা: ইবোলা ছোঁয়াচে রোগ। ইবোলা ভাইরাস খুব দ্রুত ছড়ায়। ঘনবসতি এলাকায় খুব দ্রুত এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই রোগে সচেতনতা জরুরী। নাহলে মহামারী আঁকার ধারণ করতে পারে।
ক্যানসার-ডায়াবেটিকস-হার্টের সমস্যা: পুরো বিশ্বেই ক্যানসার, হার্টের সমস্যা এবং ডায়াবেটিকস এর প্রকোপ বেড়েছে। অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে এই রোগগুলোতে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়েছে অনেক। ডাব্লিউএইচওর জরিপে দেখা গেছে ২৫-৪০ বছর বয়সী ১৫ মিলিয়ন মানুষ এই রোগগুলোতে ভুগে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাই সুস্থ জীবনযাপনের জন্য সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছে ডাব্লিউএইচও।
ডেঙ্গু: অসচেতনতা এবং অপরিচ্ছন্নতার জন্য মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। ডেঙ্গুর জীবাণু অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং দ্রুত প্লাটিলেট কমিয়ে রোগীর জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে পারে। তাই বর্ষায় এই ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত এবং অন্য সময়েও মশার আবাসস্থল ধ্বংস করে দেয়া উচিত।
এইচআইভি: ডাব্লিউএইচওর মতে, পৃথিবীতে ২৭ মিলিয়নের বেশী মানুষের শরীরে এইচআইভি ইনফেকশন আছে। এর মধ্যে ১৫-২৪ বছর বয়সী নারীর সংখ্যা বেশী। তাই এই ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানো জরুরী। টাইমস অব ইন্ডিয়া