‘চলচ্চিত্রের নায়ক, নায়িকা, প্রযোজক, পরিচালকদের ঘর হলো এফডিসি। সেখানে থেকে শাবানা, ববিতা, রোজিনারা কিংবদন্তী হয়েছেন। সেই এফডিসি আজ গার্বেজে (ভাগাড়) পরিণত হয়েছে। এরজন্য রাজনীতির মানুষরা দায়ি নয়, চলচ্চিত্রের মানুষেরাই দায়ি।’
সামগ্রিকভাবে বাংলা চলচ্চিত্রের বর্তমান ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এভাবেই নিজের অভিমত ব্যক্ত করেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। বুধবার সন্ধ্যায় মুক্তি প্রতীক্ষিত ‘বীর’ ছবির ‘মিট দ্য প্রেস’-এর আয়োজন করে এসকে বিগ স্ক্রিন। সেখানেই এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
এফডিসির আভ্যন্তরিন রাজনীতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এফডিসিতে ৩২২ কোটি টাকা বরাদ্দের যে ১৫ তলা ভবনটি হবে সেটাও তো করতে পারছি না! কেন পারছি না? এই এফডিসি গারবেজে পরিণত হয়েছে! কারা এই ধ্বংস অবস্থার সৃষ্টি করেছে তাদের খুঁজে বের করেন। এফডিসিকে সিন্ডিকেট মুক্ত করেন। কোনো কাজই তো করা যায় না ওখানে। এখানে একজন আরেকজনের মুখ দেখে না।
এরপর তিনি এসব সমস্যার সমাধানের জন্য চলচ্চিত্র তথা এফডিসির সবাইকে একসঙ্গে বসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা বসে আমাদেরকে ডাকেন। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্যই উপস্থিত থাকবো।’
কথায় কথায় শুধু বলা হয়, সরকার করে দিবে। সরকার কী করে দিবে? সিনেমা হল বানিয়ে দেবে! আচ্ছা, আমরা সিনেমা হল বানিয়ে দিলাম। কিন্তু ছবি নাই তো, তাহলে সিনেমা হলে মানুষ যাবে কী দেখতে?-যোগ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সেন্সর বোর্ডে যখন ছবি আটকানো হয়, যে পরিমাণ তদবির আপনারা করেন এইগুলো যদি বলি মাথা খারাপ হয়ে যাবে! এই সমস্যার সমাধানের পথ আপনাদেরই খুঁজে বের করতে হবে। কারণ, এই শিল্পের আপনারাই ধারক বাহক। প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেলেই চলচ্চিত্র সংকট কেটে যাবে না। সংকট কাটাতে নিজেদেরকেও উদ্যোগী হতে হবে।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, চলচ্চিত্রে সংকট কাটবে ভালো সিনেমা নির্মাণ হলে। কিন্তু সেটা আমাদের হচ্ছে না। আগে সেগুলো ঠিক করতে হবে, তাহলেই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াবে। ছোটবেলায় আমিও হলে গিয়ে ছবি দেখেছি। কিন্তু এখন সব মানুষ হলে গিয়ে ছবি দেখে না। ভালো ছবি হলেও সেই মাপের ছবিই তো হচ্ছে না। হবেই বা কেন? আমাদের এখানে পুনের মতো ফিল্ম ইনস্টিটিউট নেই। সে কারণে, ভালো গল্পকার, পরিচালক তৈরি হচ্ছে না। শাকিবের উত্তরসূরি কে সেটাও আমরা জানিনা। ১৭ কোটি মানুষের দেশে ১৭ কোটি গল্প রয়েছে। প্রতিটি মানুষের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে একটা করে সিনেমার গল্প হয়।
এরআগে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন শাকিব খান। দেশসেরা এ নায়ক বলেন, এখন আর থেমে থাকার সময় নেই। কারণ পাশে পেয়েছি আমার বড় ভাই ফারুক সাহেব, আলমগীর সাহেবদের মতো বড় সুপাস্টারদের। তারা আমাকে যে পরিমান উৎসাহিত করছেন তাতে আমার আর বসে থাকার সময় নেই। এগিয়ে যেতে হবে দূর্বার গতিতে।
‘বলিউডের সুপারস্টাররা যেমন বছরে একটা কাজ করেন, আমার ইন্ডাস্ট্রিতে তো তেমন অবস্থা নেই। আগে যেমন প্রতি বছরে প্রায় ২০টি ছবিতে অভিনয় করতাম, নাওয়া খাওয়া ঘুম ফেলে দৈনিক তিনটি ছবির শুটিং করতাম সেভাবেই কাজ করলে যদি ইন্ডাস্ট্রির কিছু হয়!’
শাকিবের এমন বক্তব্যে মুগ্ধ হয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শাকিবের মধ্যে দম আছে। সেজন্য সে এতো খারাপ সময়ের মধ্যেও দূর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সফল হচ্ছে। সে বাংলাদেশের রকিং হিরো, নিউ ডায়ামেনশন। সবকিছু সম্ভব হচ্ছে, কারণ শাকিবের মধ্যে সাহস রয়েছে। হি ক্যান ডু এন্ড হি উইল! তিনি বলেন, আমার বক্তব্যে হয়তো কারও মন খারাপ হবে। কিন্তু বাস্তব যা দেখছি তাই বললাম।
কাজী হায়াৎ পরিচালিত শাকিব খান প্রযোজিত ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘বীর’ মুক্তি উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, শাকিব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কাজী হায়াৎ চিত্রনায়ক ফারুক, আলমগীর, মিশা সওদাগর, ইমন, নিরব, নাদিম, সোহানুর রহমান সোহান, মুশফিকুর রহমান গুলজার, খোরশেদ আলম খসরু, মালেক আফসারী প্রমুখ।