পাঁচ বছর আগে ১৬ দিন ধরে রানা প্লাজায় নিহত ২৯১ জনের মরদেহ দাফন করা হয়েছিল জুরাইন কবরস্থানে। সেদিন কবরস্থানের ইনচার্জ হিসেবে সেসব মরদেহের জানাযা, দাফন এবং দোয়া পরিচালনা করেছিলেন মোহাম্মদ শোয়াইব হোসেন।
চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে তিনি তুলে ধরেছেন ২০১৩ সালের সেই দুঃসহ বেদনা ভরা দিনগুলোর কথা।
মঙ্গলবার জুরাইন কবরস্থানে গিয়ে দেখা গেলো; দুই সারিতে কবর দেয়া সেইসব নিহত কোনো নাম ফলক নেই। কাশফুলের মতো ছোট ছোট ঘাসফুলে ঢেকে আছে জায়গাটি। কংক্রিটে চাপা পড়ে থেতলে যাওয়া ‘ফুলগুলোকে’ স্মরণ করে সকাল থেকে নানা শ্রমিক ও পেশাজীবী সংগঠনের দেয়া ফুলগুলো কড়া রোদেও তাজা রয়েছে। মাইকে ভেসে আসছে কোরআন তিলাওয়াতের শব্দ।
কবরগুলোর ওপরে দেয়া কালো ব্যানার এবং নানা সংগঠনের টাঙানো ব্যানারগুলো জানান দিচ্ছে ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনার পর পার হয়ে গেছে পাঁচটি বছর। দেশ শোক-বিভীষিকা কাটিয়ে পিষে যাওয়া পোশাক শ্রমিকদের ভুলতে বসলেও ২৯১ জনের জানাযা দেয়া, দাফন করা মানুষ সেই দিনগুলোর কথা ভুলতে পারেন না।
মোহাম্মদ শোয়াইব হোসেন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এতো মানুষের জানাযা, দাফনের সময় কবরস্থানের দায়িত্বে থাকা মানুষরা কান্না আটকে রাখতে পারেননি জানিয়ে তিনি বলেন: মে মাসের ৫ তারিখ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ২৯১ জনের মরদেহ এখানে দাফন করেছিলাম আমরা। সবারই জানাযা, দাফন এবং তাদের জন্য দোয়া করা হয়েছে এখানেই। একবার ৪০টি, ২০টি করে মরদেহ আসছে। এতো মানুষের এসঙ্গে জানাযা আগে পড়াইনি। আমি কান্না আটকে রাখতে পারিনি।
আজ স্বজনদের কেউ এখানে এসেছেন কিনা এমন খোঁজ করছিলেন সংবাদকর্মীরা। অবশেষে একজনের দেখা মিললো। রানা প্লাজার চতুর্থ তলায় কাজ করা নাতিন হেলেনা এখানেই শায়িত আছে বলে বিশ্বাস করেন বৃদ্ধা হাজেরা খাতুন। তবে নাতিনের কবর কোথায় তার সঠিক স্থানটি মনে করতে পারেন না হাজেরা।
জামালপুর থেকে সাভারে এসে রানা প্লাজায় কাজ নিয়েছিলো তার নাতিন। নাতিনকে ছাড়াও ওই ট্র্যাজেডিতে নাতির স্ত্রী সুলতানা পারভীনও নিহত হন বলে জানান তিনি। তবে পারভীনকে এখানে কবর দেয়া হয়নি।
শ্রমিক সংগঠনগুলো সকালেই নিহতদের কবরে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে ওই ট্র্যাজেডির জন্য দায়ীদের বিচার এবং হতাহতদের পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে কবরস্থান থেকে চলে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে নিহতদের কবরে পুষ্পাঞ্জলি দিতে আসেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র নেতারা। পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের পর দোয়া পাঠ এবং মোনাজাত করেন তারা।