চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘এজিএম না হলে আইসিসির দুয়ার বন্ধ হয়ে যাবে’

বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ও সাবেক পরিচালক মোবাশ্বের হোসেনের আইনি নোটিশের জবাবে নিজেদের অবস্থানে অবিচল থাকার কথা বলেছেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের সামনে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন, ২ অক্টোবরই এজিএম করা হবে।

২০১২ সালে সংশোধিত বিসিবির গঠনতন্ত্র এবং সে অনুযায়ী করা কাউন্সিলর তালিকাকে অবৈধ উল্লেখ করে বিসিবি সভাপতিকে চিঠি দিয়েছেন সাবের হোসেন চৌধুরী। তাতে বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও বিশেষ সভা আয়োজন না করার আহ্বান জানিয়েছেন। তার আগে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের আইনজীবীর দেওয়া আইনি নোটিশ পাঠানো হয় বিসিবি কার্যালয়ে। মামলার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন মোবাশ্বের। এসবেই বিচলতি না হতে বলছেন নাজমুল হাসান।

তার নেতৃত্বাধীন বর্তমান বোর্ডের আগামী কার্যক্রম নিয়ে বিসিবি সভাপতি বললেন, ‘এজিএম যথাসময়েই হবে। এ নিয়ে আদালত থেকে কিছু বলেনি। একজন চিঠি দেবে, উকিল নোটিশ পাঠাবে, আর আমরা সব বন্ধ করে দেব? বন্ধ করলে প্রভাবটা কী হবে সেটা দেখেছেন? ১০ অক্টোবর আইসিসির মিটিং। আমরা ৮ মিলিয়ন থেকে যে ১৬ মিলিয়ন অর্থ পাব, সেই সিদ্ধান্ত হবে এই মিটিংয়ে। নির্বাচনের প্রক্রিয়া ঠিক না থাকে তাহলে ওখানে তো আমাদের ঢুকতেই দেবে। যদি বলেন অ্যাডহক কমিটি করবে, আইসিসি সেটাও অনুমোদন করবে না। এসব প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তারা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা বন্ধ করতে চায়। বাংলাদেশকে দেশে-বিদেশে ছোট করতে চায়।’

গত ২৬ জুলাই দেওয়া বিসিবির গঠনতন্ত্র-সংক্রান্ত এক মামলার রায়ের ওপর ভিত্তি করে ১৬ সেপ্টেম্বর সাত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। ২০১৩-এর বোর্ড নির্বাচন এবং বর্তমান পরিচালনা পর্ষদকে অবৈধ দাবি করে বার্ষিক সাধারণ সভা ও বিশেষ সভা আয়োজনের প্রস্তুতিসহ বিসিবির সব কার্যক্রম বন্ধ করতে বলা হয় ওই নোটিশে।

যার প্রতিক্রিয়াতেই বিসিবি সভাপতি মুখ খুললেন, ‘এখানে দুটি চিঠি এসেছে। একটা সাবের হোসেন এমপির, আরেকটা লিগ্যাল নোটিশ। ওনারা যে বিষয়ে মামলাটা করেছেন বা চাচ্ছেন, সেটা হচ্ছে ২০০৮ সালের সংবিধানকে তারা ধরে নিচ্ছেন ওটা বৈধ। সেটার আলোকে যেন নির্বাচনটা হয়। প্রথম কথা হচ্ছে, দুজনের কেউ ২০০৮-এর কাউন্সিলর নন। ওই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যদি নির্বাচন হয়, ওনারা কেউই কাউন্সিলর নন। কাজেই তারা কেউ নির্বাচনে আসছেন না। ব্যাপারটা বোঝেন, ওনাদের কিন্তু পরিচালক হয়ে বা বোর্ডে আসার ইচ্ছা নেই। তাহলে এসব কেন করছেন?’

২০০৮ সালের গঠনতন্ত্রে ফিরে যেতে হলে বাংলাদেশের ক্রিকেট কতটা বিপদে পড়বে সেটির ব্যাখ্যাও দিলেন নাজমুল হাসান, ‘আগেও বলেছি, ওনারা যে ২০০৮ সালের গঠনতন্ত্রের কথা বলছেন, সেটা অনুমোদিত নয়। এটা সরাসরি আইসিসির নিয়মভঙ্গ করে। এটাতে ফিরে যাওয়া মানে আইসিসি থেকে বাংলাদেশকে বহিষ্কার বা স্থগিত করে দেওয়ার রাস্তা করা। আমাদের খেলাধুলা ও আর্থিক সব সুবিধা বন্ধ হবে।’

বিপদটা আরও ভালো করে বোঝাতে শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক অবস্থাটা মনে করিয়ে দিলেন বিসিবি বস, ‘এখনকার যিনি শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট, ওই দেশের পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার, আইসিসি ওনাকে পর্যন্ত চার মাস আইসিসিতে ঢুকতেই দেয়নি। বোর্ড মিটিংয়ে তাদের কোনও প্রতিনিধিই ছিল না। তাদের টাকা-পয়সা পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যতদিন না পর্যন্ত নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন করে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন।’

নাজমুল হাসান দাবি করেন সাবের হোসেন ও মোবাশ্বের হোসেন ২০১২ সালের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিলর হয়েছেন। এরপরও তারা যেটা করছেন সেটিকে ভণ্ডামি উল্লেখ করে বিসিবি সভাপতি বললেন, ‘সাবের হোসেন চৌধুরী আমাকে একটা চিঠি দিয়েছিলেন, এজিএম করি না কেন? মোবাশ্বের সাহেবকে টকশোতে বলতে দেখেছি, এজিএম করে না। এসব ভণ্ডামি মনে করি! এখন এজিএম ডাকলাম, সঙ্গে সঙ্গে এটা বন্ধ করার চেষ্টা করছে। ওদের উদ্দেশ্য এসব কিছু না। উদ্দেশ্য অন্য। আপিল বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, আমাদের যদি কোনও পরিবর্তন করতে হয় নিজেরাই করব এবং এনএসসিতে অনুমোদনের জন্য পাঠাব। আমরা বেআইনি কিছু করব না, এটা নিশ্চিত থাকতে পারেন।’

২০১২ সালের ১ মার্চ গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছিল বিসিবি। সেটি অনুমোদন না দিয়ে কিছু সংশোধনী এনে ওই বছরের নভেম্বরে নতুন গঠনতন্ত্র তৈরি করে এনএসসি। ডিসেম্বরে এনএসসির সংশোধিত গঠনতন্ত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন বিসিবির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য প্রয়াত ইউসুফ জামিল বাবু ও মোবাশ্বের হোসেন। ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট রায় দেন, এনএসসির সংশোধিত গঠনতন্ত্র অবৈধ। পরদিনই হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে এনএসসি ও বিসিবি। ওই বছর ২৫ জুলাই আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। পরে দেশের স্বার্থ বিবেচনায় এনএসসির সংশোধিত গঠনতন্ত্রেই নির্বাচনের অনুমতি পায় বিসিবি।