ভারতীয় পত্রিকায় দেয়া আপনার সাক্ষাৎকার পড়লাম। বলেছেন জামায়াত কে মনোনয়ন দেবে এটা আগে যদি জানতেন তাহলে বিএনপির দায়িত্ব আপনি নিতেন না। আপনার এই নির্জলা বচন বিশ্বাস করে নিতে বলছেন? বলতে পারেন কেন আপনার এই বক্তব্য বিশ্বাস করে নিতে হবে? আপনার মনে আছে ১৩ ডিসেম্বর সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজারের কথা, আপনি সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন জামায়াত বলতে কোন শব্দ নেই। আপনার মনে আছে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রায়ের বাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের কথা। এক সাংবাদিক আপনাকে জামায়াতের সাথে জোট নিয়ে প্রশ্ন করেছিল, উত্তরে আপনি কি বলেছেন? চুপ করো। এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার জন্য কত পয়সা পেয়েছো? কোন পত্রিকায় কাজ করো, তোমাকে চিনে রাখবো। খামোশ। এইতো…? আপনাকে জিজ্ঞেস করতে পারি? কেন সেদিন বাংলাদেশের সাংবাদিককে যেই ভূমিতে আপনার জন্ম সেই দেশের সাংবাদিককে বলেছিলেন, পয়সার কথা, চিনে রাখার কথা, চুপ করার কথা, পরিশেষে খামোশ থাকার কথা।
অপরদিকে ভিনদেশী একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে কেন বললেন জামায়াত কে মনোনয়ন দিবে আগে জানলে বিএনপির দায়িত্ব নিতেন না। এর ভিতরে আবার কোন সতী সাবিত্রির গল্প গিলিয়েছেন ভারতীয় মিডিয়াকে। শুধু তাই নয়, আপনি ভারতীয় সেই গণমাধ্যমকে এটাও বলেছেন, আপনার ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে যদি সরকারে জামায়াতের কোন ভূমিকা থকে তাহলে আপনি সরে যাবেন। আপনি একজন প্রবীণ ব্যক্তি, বিদেশ বরেণ্য আইনজীবী। একটা জিনিস বুঝলাম না, আপনি যখন বের হয়ে যাবেন অভিমান করে, তখন আপনার এই অভিমানের মূল্য কত হবে? যেখানে আপনি নির্বাচনে কোনো প্রার্থী হন নাই, সেখানে আপনি সরকার থেকে বের হয়ে গেলেই কি বা থেকে গেলেই কি? তাছাড়া আপনার কি মনে হয়, বিএনপি জামায়াতের নেতৃত্বাধীন আপনার ঐক্যফ্রন্ট যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে সেই সরকারের কোন ভূমিকায় আপনাকে রাখবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার দণ্ডিত পলাতক অপরাধী তারেক রহমান। আশা করি এখন ভেবে দেখবেন এবং বিএনপি জামায়াতের নেতৃত্বাধীন আপনার ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে পরে মিলিয়ে নিবেন।
যাই হোক একই প্রশ্ন আজকে আমাদের সেই সাংবাদিকের পক্ষ থেকে যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করি, কয় পয়সা কম পেয়ে আজকে আপনার উপলব্ধি হলো জামায়াত কে মনোনয়ন দেবে আগে জানলে আপনি বিএনপির দ্বায়িত্ব নিতেন না। পাশাপশি আপনি চুপ করেন এবং খামোশ হোন। তাছাড়া ভারতীয় গণমাধ্যমের সংবাদ কর্মীকে আপনি আপনার উপলব্ধির কথা বলেছেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকের অপরাধটা কি ছিল? কেনো সেদিন বাংলাদেশের গণমাধ্যম কর্মীর সাথে দুর্ব্যবহার করেছিলেন? চিনে নিবেন বলে কেনো হুমকি দিয়ে আমাদের সাংবাদিকের জীবন হুমকির মাঝে ঠেলে দিলেন? উত্তর কি দিবেন? জানি উত্তর নাই আপনার। কারণ, আপনি বাংলাদেশের খেয়ে-পড়ে বড় হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু বাংলাদেশের প্রতি আপনার জবাবদিহিতা, ইতোপূর্বের দেশেপ্রেম কিংবা দেশের জনগণের প্রতি আপনার দায়বদদ্ধতা একেবারেই নেই। আপনি হলেন একজন আইনজীবী, এই দেশ আপনার কাছ থেকে কিছুই পায়নি। এই দেশের জন্য আপনি কিছুই করেননি। ইচ্ছে ছিল কি না সেটা ভিন্ন বিষয়, কিন্তু আপনি একজন বড় মাপের উকিল যিনি নির্ধারিত ফি পেলেই কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন যে কারো পক্ষ নিয়ে। অন্যথায় নয়। যেমনটা করেছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি বিদেশী তেল কোম্পানীর হয়ে।
ডঃ কামাল হোসেন সাহেব, শুনতে কটু লাগলেও বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি নামক দলটি যেই দলের বিরুদ্ধে আপনি বরাবর সোচ্চার ছিলেন তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য, যখন শুনলাম সেই বিএনপি আপনাকে মনোনীত করেছে তাদের জীবন বাঁচাতে পরিকল্পনায় আপনার নেতৃত্ত্বে মালয়েশিয়ার মাহাথির স্টাইলে একটা বিপ্লব হবে বাংলাদেশে। বার বার খুঁজেছি, একটা মালয়েশিয়া গড়তে একজন মাহাথিরের যা ভূমিকা। বাংলাদেশ গড়তে আপনার কোন ভুমিকা আছে কি না সেটা খোঁজার জন্য। খুঁজে পেলাম আপনি একজন আইনজীবী, স্বাধীন বাংলাদেশে নতুন সংবিধান প্রনয়ণে বঙ্গবন্ধু যেই কমিটি করে দিয়েছিল সেই কমিটির একজন সদস্য। এর বাইরে বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রী ছিলেন আবার পাল্টা হিসেবে সেই মন্ত্রিসভায় আপনার পাশেই বসত একজন খন্দকার মোস্তাক যিনি একাধারে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, বঙ্গবন্ধুর কাছে চলে গিয়েছিলেন এবং পরে বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেছিল গভীর প্ল্যান করে। কাজেই সংবিধান প্রনয়ণ কমিটির সদস্য এবং মন্ত্রীসভার সদস্য ছাড়া আপনার ইতিবাচক আর কিছু খুঁজে পাইনি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আপনার গুরত্ত্বপূর্ণ ভুমিকা? সেই আর মনে করার প্রয়োজনবোধ করছি না, কারণ বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যাকাণ্ডের পরে আপনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে লন্ডন থাকা অবস্থায় একটা বিবৃতি পর্যন্ত দিতে রাজি হন নাই। অথচ তারপরেও কথায় কথায় বঙ্গবন্ধুকেই সামনে টেনে এনে কথা বলেন। যা একদম হাস্যকর। যাই হোক এন্টি আওয়ামী লীগ হিসেবে বিএনপির মত একটি রাজনৈতিক দল আপনার নেতৃত্বে প্রথমে মালয়েশিয়া স্টাইল এবং পরে মালদ্বীপ স্টাইলে শেখ হাসিনা সরকারের পতন করতে অনেক দেন দরবারের পরে জোট গঠন করলো।
তারপরেও ঐক্যফ্রন্টের শুরুর দিকে স্বাগত জানিয়েছিলাম, কারণ গণতন্ত্রের স্বার্থেই শক্তিশালী বিরোধীদলের প্রয়োজন আছে বাংলাদেশে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা, দেশ বিরোধী নিবন্ধন হারানোর যুদ্ধাপরাধের দায়ে আদালত কর্তৃক অভিযুক্ত দল জামায়াতের থাবা থেকে থেকে মুক্ত হয়ে যদি বিএনপি নতুন একটি ধারায় আপনার ডঃ কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সামনে এগিয়ে যায় তাহলে মন্দ হয় না। কিন্তু হায়, আপনি শুরুর দিকে বললেন জামায়াতের সাথে জোট প্রশ্নই ওঠে না, মনোনয়ন ঘোষণার পরে বললেন আমরা বিএনপির সাথে জোট করেছি, মনোনয়ন দাখিলের পরে বললেন জামায়াত নামের কোনো দল আছে নাকি, মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পরে বললেন চুপ করো চিনে নিবো, খামোশ। আজকে আপনার উপলব্ধি হলো, ভুল করেছেন। ধারণা করি জোট করার আগে বিএনপির সাথে আপনার যেই অংকের দফা রফা হয়েছিল আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতের করুণ পরিনতি বুঝেই সম্ভবত বিএনপি জামায়াত এখন আপনার ম্যাজিকে কাজ হচ্ছে না চিন্তা করে আপনার চুক্তির অর্থ পরিশোধ করতে গড়িমসি করছে, যার ফলে আপনি তুললেন নতুন বেহালার করুণ সুর জামায়াতকে মনোনয়ন দিবে জানলে বিএনপির দায়িত্ব নিতেন না। পরিশেষে একটি নিবেদন। আপনি যদি নিজের কাছে সৎ থাকেন তবে এখনত জানেন আপনার নেতৃত্বে জামায়াত ২৫টি আসনে নির্বাচন করছে। তো এখন সরে দাঁড়িয়ে নিজের কথাকে সত্যে পরিণত করেন।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)