চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

এখন বিএনপি কি ভারতের দালালি করছে?

গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে বিএনপি নেতা রিজভীর একটা বক্তব্য এখনো কানে বাজে। রিজভী তখন বলেছিলেন: পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করতেই ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারত হস্তক্ষেপ করেছিল। ওই সময় গয়েশ্বর চন্দ্র, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির নেতাদের অন্য বক্তব্যগুলোও ছিল বেশ উস্কানিমূলক, যা কোনভাবেই স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না।

চলতি বছরেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে বিজেপির আমন্ত্রণে একটি প্রতিনিধি দলের দিল্লি সফর এবং মাস খানেকের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পশ্চিমবঙ্গ সফরেও নানা কথা বলেছে তারা। বাংলাদেশের এক শ্রেণীর টকশো বুদ্ধিজীবিদের কারণে উক্ত সকল উস্কানিমূলক বক্তব্যগুলো স্বীকৃতি পেয়েছিল পলিটিকাল বক্তব্য বলে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপির আদর্শিক প্যাটার্ন কী? ভারতের দালালীর ঠিকাদারি গ্রহণ করতে নয়াদিল্লীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা? অন্তত দ্য হিন্দু পত্রিকার ভাষ্যমতে এরকম কিছুই মনে হয়। ওই পত্রিকার ভাষ্যমতে, বিএনপি নয়াদিল্লীতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে যেন ভারত সরকার বিএনপিকে নিজেদের স্বার্থ আদায়ের জন্য দালাল হিসেবে নিয়োগ দেয়।

সম্পর্কের বহু রকম প্রকারভেদ আছে। কিছু সম্পর্ক হয় আদর্শের জায়গা থেকে, কিছু সম্পর্ক থাকে জন্মের সময় থেকে। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্কটা হলো জন্ম জন্মান্তরের। সেই হিসেবে বাংলাদেশ জন্মের ভূমিকার সাথে জড়িত বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের সম্পর্ক। এখন এটাকে যারা দালালী হিসেবে চিহ্নিত করে নিজেরা দালাল হতে উঠে পরে লবিং করছে, বরাবরের মত তাদের বিষয়েই প্রশ্ন রাখতে হয়, বাংলাদেশ জন্মে তাদের ভূমিকা কী ছিল? বাংলাদেশ যারা শোষণ করে খেয়েছিল তাদের সাথে এদের তফাৎ কী? তাছাড়া ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কিংবা আওয়ামী লীগের সম্পর্ক তিস্তা চুক্তি কিংবা সীমান্তে গরু চোরাকারবারি হত্যা দিয়ে যারা বিচার করে তাদের উদ্দেশ্য কী?

বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতি সম্বন্ধে কিছুটা জেনেছিলাম। ওই পররাষ্ট্র নীতির মূল স্লোগান ছিল, কারো সাথে শত্রুতা নয় সকলের সাথে বন্ধুত্ব করেই চলতে হবে। আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ওই পথেই আছে। এখন বঙ্গবন্ধুর দেখানো পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করে পান থেকে চুন খসলেই আওয়ামী লীগকে পেতে হয় ভারতের দালাল উপাধি! যারা এই উপাধি বণ্টন করে তারা মোটেও বাংলাদেশী নয় বা বাংলাদেশকে তারা ধারণ করে না।

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ধারণা, ওই নির্বাচনে ভারত কল কাঠি নেড়েছিল। যদিও সম্পূর্ণ ভুলে ভরা ধারণা এটা। কারণ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটা হয়েছিল বাংলাদেশে। নির্বাচনের সুবিধাভোগী হয়েছে বাংলাদেশের জনগণ। সেখানে অযথা ভারতকে টেনে এনে জোড়া লাগিয়ে বক্তব্য বিবৃতি দেওয়ার আগে বিএনপির মনে রাখা উচিত ছিল ২০০৮ সালের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের পরে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে দেওয়া বেগম জিয়ার বক্তব্য, তারপর থেকে পুরো ৫ টা বছর সারাদেশের মানুষকে গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে জ্বালা যন্ত্রণার মধ্যে ফেলে বিষিয়ে তোলা, সাথে ছিল জাতীয় ইস্যু যুদ্ধাপরাধীর বিচারকে বিতর্কিত ইস্যুতে রূপান্তরিত করে যুদ্ধাপরাধী সাইদিকে চাঁদে পাঠিয়ে পেট্রোল বোমার আগুনে বাঙালীকে ঝলসে পুড়িয়ে দেওয়া। সকল ক্রিয়ার কিন্তু একটি প্রতিক্রিয়া আছে। সেটা মনে হয় বিএনপি ভুলে গিয়েছিল। যার ফলে বিএনপির উপর পাবলিক বিরক্তি থেকেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সংসদ এখনো টিকে আছে।

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে নাকি দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে এই প্রশ্নের উত্তর বিএনপিকে খুঁজে নিতে হবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাসহ বাংলাদেশের প্রভাবশালী বিদেশী বন্ধুদের কাছ থেকে। যেখানে কানাডার ফেডারেল আদালতসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রাদেশিক আদালতে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে কাউন্ট করছে সেখানে একমাত্র ভারতের সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার টিকে আছে, গল্পটা একদম ছোট মানুষি। প্রজ্ঞা নীতি ও দর্শনের জায়গায় দাঁড়িয়ে যেসব অভিযোগ কেবল বিএনপির মত নাবালক দল করতে পারে বলে বিশ্বাস করি।

অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, সারাবিশ্বেই চলতি দশকের শুরু থেকে ডানপন্থী রক্ষণশীল সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো ক্ষমতা ভোগের কল কব্জা হয়ে উঠেছে সেখানে বিএনপির এই অবস্থা কেন? বিএনপির উচিত সেই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা।

তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেই, বিএনপি ভারতের দালালীর পূর্ণাঙ্গ লাইসেন্স পেল। তারপরেও বহির্বিশ্বে তার কোন প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। কারণ খুব স্পষ্ট। সারা পৃথিবীর রাজনীতির বিভক্ত দুই ভাগের এক ভাগেও বিএনপির অবস্থান ভালো নয়। সেখানে বিএনপির লবিংয়ে মুগ্ধ হয়ে ভারত বিএনপিকে দালাল হিসেবে নিয়োগ দিলেও খুব বেশি উপকার করে দিতে পারবে বলেও মনে হয় না।

আমাদের এই প্রজন্মের অনেকেই জানে না একসময়ের প্রভাবশালী মুসলিম লীগ নামক একটি দল কিভাবে ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছিল। অন্তত তাদের সামনে সুযোগ এসেছে যে বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলের ভ্যানিশ হওয়া দেখে তা বুঝে নেওয়া। কিভাবে একটি রাজনৈতিক দল ধুলোয় মিশে যায়।

সেদিন এক নিরপেক্ষ ভদ্রলোক বলছিলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় আওয়ামীলীগের ভুল ত্রুটি আছে, সেসব নিয়ে অনেক কিছু বলার আছে। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে বিএনপি, মির্জা ফখরুল, রুহুল কবির রিজভী, খন্দকার মোশাররফ, তারেক জিয়ারা যখন নীতিবাক্য বলে তখন আওয়ামী লীগের ভুল ত্রুটিগুলোও জায়েজ মনে হয়। কারণ একটা মুখ দিয়ে তারা যা বলে সেম টাইম তাদের শরীর দিয়ে তা তারা ভঙ্গ করে। এই হলো অবস্থা।

বিএনপি-জামাত ঘরানার লোকদের একটা ধারণা আছে যে সুষ্ঠু নির্বাচন মানেই বিএনপির ক্ষমতা নিশ্চিত। এটা হলো গোফে তেল দেওয়ার মতো। এখন থেকে এটা বাদ দিতে হবে। আওয়ামী লীগের পরাজয় মানেই সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে বা হবে এই ধারণা থেকে তাদের বের হয়ে আসতে হবে।

বিএনপিকে বলতে চাই, বিদেশীদের দালালী চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিন। দেশটা আমাদের, এই দেশের ক্ষমতায় কারা থাকবে কারা যাবে সেটা নির্ণয় আমরা করবো। অবশ্যই কোন বিদেশী শক্তি নয়। বিদেশী যারা আছে, বাংলাদেশ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে তারা কেবল আমাদের উন্নয়ন সহযোগী বন্ধু প্রতিম, মোটেও তারা আমাদের প্রভু নয়।

বিদেশী প্রভুরা আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে এই ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে বাংলাদেশের সকল জনগণ নিয়ে ভাবুন, তারা যদি আপনার পক্ষে দাঁড়ায় তখন বিদেশী লাগবে না। এই জনগণ যদি আপনার পক্ষে না দাঁড়ায় তাহলে কোন বিদেশী শক্তির পক্ষে সম্ভব নয় বাংলাদেশে আপনাদের দলকে ক্ষমতায় রাখা। সেটা ভারত, পাকিস্তান, চীন, আমেরিকা কারোর পক্ষেই সম্ভব হবে না।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)