চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

এখন দায়িত্ব চক্রান্তটা খুঁজে বের করা: প্রধানমন্ত্রী

দীর্ঘদিন পরে হলেও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার পাওয়ায় বিচার বিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন আরেকটা দায়িত্ব রয়ে গেছে। চক্রান্তটা খুঁজে বের করা। এটা একদিন বের হবেই। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক প্রকাশিত স্মারকগ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু ও বিচার বিভাগ’ এবং মুজিববর্ষ স্মরণিকা ‘ন্যায় কন্ঠ’ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্ট জাজেস স্পোর্টস কমপ্লেক্সে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ন্যায়বিচার প্রাপ্তি জনগণের অধিকার। সেটা যেন সব সময় পায় সেটা আমরা চাই। আমার মতো বাবা-মা হারিয়ে যেন কাউকে বিচারের জন্য চোখের পানি ফেলতে না হয়।’

‘‘আমরা ভুক্তভোগী, আমরা জানি বিচার না পাওয়ার কষ্টটা কী? তবে যাই হোক, দীর্ঘদিন পরে হলেও এই হত্যার বিচার পেয়েছি। এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। তবে এখন আরেকটা দায়িত্ব রয়ে গেছে। চক্রান্তটা খুঁজে বের করা। এটা একদিন বের হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’’

বঙ্গবন্ধুর খুনিকে আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমেরিকা গণতন্ত্রের জন্য কথা বলে আর খুনিদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়। এটা কেন? আমি জানি না। তারা নাকি বিশ্বের সব থেকে গণতান্ত্রিক দেশ! তাদের কাছ থেকে আমাদের আইনের শাসনের সবক শুনতে হয়, গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়, ন্যায়বিচারের কথা শুনতে হয়, সেটিই আমার কাছে অবাক লাগে।’

সরকার প্রধান আরও বলেন, ‘আমি সরকারে আসার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যতজন রাষ্ট্রপতি এসেছেন, প্রত্যেকের কাছে বারবার অনুরোধ করেছি যে একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে আপনারা কীভাবে আশ্রয় দেন? আপনাদের জুডিশিয়ারি কীভাবে আশ্রয় দেয়? কীভাবে আপনারা একটা খুনিকে আশ্রয় দেন?’

আজকের অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এমন এক ব্যক্তিত্ব যাকে কোনো বিশেষণে বিশেষায়িত করে শেষ করা যাবেনা। আজ বিশ্বব্যাপী যেখানেই মুক্তির সংগ্রাম, সেখানেই অনুপ্রেরণা বঙ্গবন্ধু। তাই বলা যায়, এ মহান নেতা আমাদের জাতীয় জীবনে এক জ্যেতির্ময় আলোকবর্তিকা। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একে অপরের সঙ্গে এমনভাবে জড়িত, যার একটি বাদ দিয়ে অপরটি কল্পনা করা যায়না। শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নির্ভিক অবস্থানের কারনে তিনি শোষিত-নির্যাতিত বিশ্বমানব সমাজের সকল আন্দোলনের অনুপ্রেরণা ও অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রাতঃস্মরনীয় ও অনুকরনীয় হয়ে থাকবেন।’

গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করে ব্যাক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার সময় যে কয় ব্যক্তি বাংলাদেশকে অবৈধভাবে শাসন করেছেন সে সব স্বার্থান্বেষী মহল সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি নষ্ট করার ব্যাপারেও সচেষ্ট ছিল। তবে মুজিববর্ষে আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি অতীতের সব গ্লানি মুছে ফেলে সুপ্রিম কোর্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেল হত্যা মামলা ও যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের মামলার রায় দিয়ে সংবিধানকে সমুন্নত রেখে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃষ্টান্ত মূলক ভুমিকা রেখেছে। আর ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের কালো পাতা পাল্টে জনগণের ন্যায় বিচার প্রাপ্তির আশ্রয়স্থল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।’

স্মারকগ্রন্থ এবং স্মরণিকা প্রকাশ বিষয়ক সুপ্রিম কোর্ট জাজেস উপ-কমিটি আহ্বায়ক আপিল বিভাগের বিচারপতি মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক প্রকাশিত “বঙ্গবন্ধু ও বিচার বিভাগ” নামের এই গবেষণা মূলক গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর জীবনের প্রত্যেকটা মামলা- বিচার ও আদালত সম্পর্কিত ঘটনা প্রবাহ অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় সাধারনের বোধগম্য করে লেখা হয়েছে।’

আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন বিষয়ক সুপ্রিম কোর্ট জাজেস কমিটির সদস্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো: খসরুজ্জামান।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা।