ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিপুল আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও শুধু মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বাধার কারণে বহু বছর ধরে আটকে রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি। এর ফলে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে। অন্যদিকে হুমকির মুখে রয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর জীববৈচিত্র্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গত মেয়াদেই চুক্তিটি হওয়ার কথা থাকলেও মমতা ব্যানার্জির ক্রমাগত অনাগ্রহের কারণে সেটি আর হয়ে ওঠেনি। পশ্চিমবঙ্গকে অগ্রাহ্য করে কেন্দ্রীয় সরকার এই চুক্তি করবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের আগের মেয়াদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।
তবে এবার পরিস্থিতি কিছুটা হলেও ভিন্ন। ভারতে এসেছে নতুন সরকার। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার এবার পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান শক্ত করতে পেরেছে। পেয়েছে ১৮টি আসন।ফলে মোদির মন্ত্রিসভায় পশ্চিমবঙ্গের দুই সংসদ সদস্য এবার স্থান পেয়েছেন। ভারী শিল্প ও জন উদ্যোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন গায়ক থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা বাবুল সুপ্রিয়। পশ্চিমবঙ্গের নারী ও শিশু উন্নয়ন বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে দেবশ্রী চৌধুরীকে।
দায়িত্ব গ্রহণ করে সম্প্রতি দেবশ্রী চৌধুরী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে সতর্ক করে বলেছেন: তার সরকার কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলো রাজ্যের মানুষের কাছে পৌঁছাতে না দিলে তিনি তীব্র প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হবেন। দেবশ্রী চৌধুরী মেনে নেন সামনের রাস্তায় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
তিনি বলেন: আমি এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি। আমি চেষ্টা করছি যত বেশি সম্ভব কাজ করতে।
অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন: কেন্দ্রীয় সরকার নতুন মেয়াদে কথার সঙ্গে কাজেও কঠোর থাকলে হয়তো এবার তিস্তা চুক্তি আলোর মুখ দেখতেও পারে।
দেবশ্রী চৌধুরী যদি মমতাকে অগ্রাহ্য করে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করেন তবে তার মধ্যে তিস্তা চুক্তিও পড়ে যায়।
তবে কি তিস্তা চুক্তি এবার বাস্তবায়নের সম্ভাবনা থাকছে? এমন প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন: মমতাকে তিনি অগ্রাহ্য করবেন এ কথাটাকে খুব বেশি গুরুত্বের সাথে নেওয়ার কিছু নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, মমতাকে অগ্রাহ্য করে তিস্তার পানি চুক্তি খুব কঠিন। আমি বলবো প্রায় অসম্ভব। কারণ, বাংলাদেশে আমরা খুব একটা খোঁজ খবর রাখি না যে, ভারতেও কিন্তু আন্ত:রাজ্যে পানি নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রবল। শুধু ভারত-বাংলাদেশ সমস্যাই নয়। আর মুখ্যমন্ত্রীরা সংবিধান অনুযায়ী খুব ভালো ক্ষমতা রাখেন। আমার মনে হয় না বিজেপির নতুন সরকার এত মাত্রায় মমতার উপর চড়াও হবেন।
‘দ্বিতীয়ত, দুই বছরের মাথায় বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনের পরিসংখ্যান কী হবে তার উপরও অনেকখানি নির্ভর করবে। কারণ, বিজেপি সভাপতি পূর্ণোদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়বেন পশ্চিমবঙ্গের উপর, যাতে তারা বিধানসভার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। মমতা ব্যানার্জির ভবিষ্যত কতখানি তা এখন বলতে পারবো না’, এমনটাই বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপক।
নরেন্দ্র মোদী দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন। তবে কি তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা থাকে না? এমন প্রশ্নে এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন: এটা হয়তো হতে পারে যে মোদির তো আসলে জয় করার কিছু নাই। এখন হলো মোদির লিগ্যাসি তৈরি করার সময়। আসলে সাউথ এশিয়ার মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক থেকে যদি মোদি সরকার এই জিনিসটাকে মূল্যায়ন করার দিকে যায় তাহলে আমি অবাক হবো না। কিন্তু শুরুতে যেটা বলেছি, মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে আমার যতোই নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ থাকুক, মমতাকে মাইনাস করে তিস্তার পানি আমার কাছে অত সহজ মনে হয় না। কারণ, তখন তিনি ওই পলিটিকসে চলে যেতে পারেন যে, ‘জান দেব কিন্তু তিস্তা দিব না’। বিজেপি তো সেটাও ক্যালকুলেশনে রাখবে।