এখনও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক উইলিয়াম ল্যাসি সুইং।
মঙ্গলবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক কথা জানান তিনি।
উইলিয়াম ল্যাসি সুইং বলেন, ২৫ অাগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের প্রবেশ শুরু হয়ে এখনও তা চলমান রয়েছে। এই পর্যন্ত প্রায় ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। মিয়ানমার থেকে এখনও বড় সংখ্যক লোকজন বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। এটা অবশ্যই বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয়।
ইন্টার এজেন্সির বৈঠকে রোহিঙ্গাদের বিস্তারিত তুলে ধরা হবে জানিয়ে আইওএমের মহাপরিচালক বলেন, আগামি ২৩ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইন্টার এজেন্সির বৈঠক হবে। সেখানে আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা থাকবেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা, আন্তর্জাতিক শরনার্থী বিষয়ক সংস্থার প্রতিনিধি ও জাতীয় সংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার উপস্থিত থাকবেন। ওই বৈঠকে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। সেখানে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী বাসস্থানের জন্য সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হবে।
এই মূহুর্তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শরনার্থীদের নিয়ে যেসব সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যায় বাংলাদেশ-এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, নিজ দেশ মিয়ানমার ছেড়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। এত বড় সংখ্যক লোকজনের খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থানসহ অন্যান্য মৌলিক বিষয়গুলি নিশ্চিত করা অবশ্যই বড় চ্যালেঞ্জ।
এরপর ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে কী অবস্থায় আছে, তা সরেজমিনে দেখার জন্যই উইলিয়াম ল্যাসি সুয়িং বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি রোহিঙ্গাদের সরেজমিনে দেখেছেন। এসব দেখে করণীয় বিষয়ে ঠিক করবেন বলে জানিয়েছেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, কক্সবাজারে ওইসব এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ীভাবে আপাতত দেড় লাখ ঘর দরকার। ইতিমধ্যে এক লাখ ১০ হাজার ঘর তৈরি হয়ে গেছে। যার মধ্যে ৪৬ হাজার ঘর তৈরি করা হয়েছে আইওএমর সহযোগিতায়। বাকিটা করা হয়েছে সরকার ও অন্যান্যদের সহযোগিতায়। আর বাকি ঘরগুলো এই মাসের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে।
এছাড়া আইওএম রোহিঙ্গাদের বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে ১৫ হাজার ছাতা বা তাঁবু দিয়েছে। শোয়ার জন্য দিয়েছে ৪ হাজার ৬শ মাদুর। আর এক লাখ পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের ক্রোকারিজ পণ্য দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
ত্রানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের বাসস্থানও অন্যান্য বিষয় নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে আইওএম। ইতিমধ্যে ২শ কোটি টাকার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে তারা। আরো অর্থের জন্য সংস্থাটি ২৩ অক্টোবরের বৈঠকে উত্থাপন করবে বলে জানিয়েছে।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অস্থায়ী বাসস্থান উল্লেখ করে তিনি বলেন, কুতুবপালে তিন হাজার একর জায়গা জুড়ে রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্প করা হয়েছে। আর যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে ভাষানচরে তাদের সরিয়ে নেয়া হবে। এবং সেখানে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে আইএমও সহযোগিতা করবে।