বিএফইউজে’র সভাপতি সাংবাদিক নেতা আলতাফ মাহমুদ মারা গেছেন। রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তিনি মারা যান। এই সাংবাদিক নেতাকে নিয়ে অতীত স্মরণ করেছেন সাংবাদিকরা।
সাংবাদিক সুমী খান বলেন, মেরুদন্ডের হাড় ক্ষয়ের কারণে বাস অথবা রিক্সাতে উঠতে পারতেন না। শতভাগ সৎ এই নেতার নিজের একটি গাড়ি নেই, একটি বাড়ি নেই। বিএফইউজে এবং ডিই্উজে সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতিদিন রামপুরা বাসা থেকে হেঁটে প্রেসক্লাবে আসতেন। আবার প্রেসক্লাব থেকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যেতেন।
তিনি আরো বলেছেন, পরাধীন দেশে ২ আনা দিয়ে ছাত্রলীগের সদস্য হয়েছিলেন আলতাফ মাহমুদ। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর যিনি বঙ্গবন্ধুর ছবি বুকে নিয়ে রাজপথে প্রতিবাদ করেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর এই একনিষ্ঠ সৈনিক এতো বছর সাংবাদিকতা করে ও একটি প্লট বা একটি বাড়ি করতে পারেন নি।
ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদ বলেন, টকশো কিংবা অন্য কোনো অনুষ্ঠানের জন্য টেলিভিশন অফিসে এসেছেন তারা। তারা সব বড় ব্যক্তিত্ব। সংবাদকক্ষের ভিতর দিয়ে যাচ্ছেন স্টুডিওর দিকে। নিজেদের মধ্যে কথায় মশগুল। চারপাশ থেকে একঝাঁক ছোটকর্মী তাদের দেখছে। কেউ চোরা চোখে, কেউ সরাসরি। আড়ষ্টভাবে এইসব লোক থেকে সরিয়ে রাখছে নিজেদের। সবার ভিতরে এইসব লোকের একটু শুভেচ্ছা, একটু কুশলকথা, একটু হাসি পাওয়ার জন্য চাপা ক্ষুধা। কিন্তু এইসব বড় বড় অতিথির তাতে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। একজন, শুধু একজনই ব্যতিক্রম। তিনি আলতাফ মাহমুদ। বড় মানুষের সারি থেকে বেরিয়ে তিনি কর্মীদের কাছে চলে এলেন। হাসি, কুশলকথা, শুভেচ্ছা আর হাতমেলানো। ব্যস্ত সংবাদকক্ষে ছড়িয়ে দিলেন হঠাৎ উচ্ছ্বাস। যারা এতক্ষণ নিজেদের চুনোপুঁটি ভাবছিল, তারা তার এই শুভেচ্ছা বিনিময়ে হয়ে উঠল বানের পানিতে ভাসা পুঁটি মাছের মতো উল্লসিত-রঙিন।
ষড়ৈশ্বর্য আরো বলেন, ‘আলতাফ মাহমুদ খুব কিছু করতে পারেননি। না নিজের জন্য, না অন্যের জন্য। খুব কঠিন তো, খুব কঠিন আমাদের সমাজে ভালোভাবে ভালো কিছু করা। খারাপভাবে খারাপ কিছু করা তো তারচেয়ে অনেক সহজ। রাষ্ট্রের দণ্ডমুণ্ডের কর্তাও হয়ত তাকে চিনতেন। কিন্তু ঈশ্বর কনভিন্স করার জন্য শয়তান যতটুকু পারে, আদম কি ততটুকু পারে? চেহারার মধ্যেই আলতাফ মাহমুদের একটা ভালো মানুষের অমায়িক ব্যর্থতার ছাপ ছিল। আমাদের সমাজে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যে মানুষগুলো নিজের ভিতরের বাধায় ক্ষমতা ও বিত্তের সুযোগ লুফে নিতে পারেন না তিনি বোধহয় তাদের দলের। এই কারণেই তাকে ভালো লাগত। আলতাফ ভাই, সালাম, নমস্তে।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, নেতা আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। প্রিয় নেতার মৃত্যুতে গোটা সাংবাদিক সমাজের এক অপূরনীয় ক্ষতি হল। যা আর কোনভাবেই পূরণ হওয়া নয়। আর ব্যক্তিগতভাবে আমি হারালাম একজন অভিভাবক।
স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছিলাম-নেতার চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটাতে সাংবাদিক সংগঠনগুলো যাতে এগিয়ে আসে। বলেছিলাম সরকার কেন এখনও তার চিকিৎসার ব্যয়ভার যোগাচ্ছে না। স্ট্যাটাসের পরদির জানতে পেরেছি, নেতার চিকিৎসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দশ লাখ টাকা দিয়েছেন।
ডাক্তার বলেছিল চিকিৎসার জন্য আলতাফ ভাইকে বিদেশ নিতে। চেন্নাইতে নিতে হলে প্রয়োজন ছিল ৫০ লাখ টাকার। আলতা্ফ ভাইয়ের পরিবার থেকে জানতে পেরেছি, টাকার অভাবে নেতাকে বাইরে নেয়া সম্ভব হয়নি। খুব কষ্ট পেয়েছি-এমন কথা শুনে।
যে নেতা সারাটি জীবন সাংবাদিক সমাজের জন্য কাজ করেছেন; যে নেতা বিএফইউজে’র সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন-সেই নেতাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে অর্থের অভাব !!!!!!!!! নেতা চলে গেলেন—-রেখে গেলেন গোটা সাংবাদিক সমাজের জন্য একরাশ লজ্জার পাহাড়।
আর সহস্র কোটি টাকা দিলেও গোটা সাংবাদিক সমাজ আর একটি আলতাফ মাহমুদ পাবে না।
মিলন ফারাবি বলেন, তাঁর নেতাগিরিতে ব্যাক্তি আমি কি পাইনি – সেই হিসেবপাতি নয়– তিনি নেতাগিরি করে কি পেয়েছেন– তারও হিসাবপাতি নয় —
খুব খোলা গলায় আমি বলব– চারপাশের শত হামুখ সাংবাদিক নেতার মধ্যে তিনি বিরলপ্রজ। বিরলজন।
একজন নেতার পক্ষে যতটা নির্লোভ, সাদামাটা হওয়া মানবিকভাবে সম্ভব, আলতাফ মাহমুদভাই সেই দাবি অবশ্যই মিটিয়েছেন।
হেলাল উদ্দিন বলেন, আলতাফ ভাই সারাজীবনই বলতে গেলে শাজাহানপুর রেল কলোনীর নীচতালায় একটি ছোট্ট বাসায় অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। ভোগ বিলাস কি জিনিষ জানতেন না। সাংবাদিক সমাজের প্রিয় এই নেতার সততা আর নীতি নিয়ে তার শত্রুরাউ কিছু বলতে পারবে না। ধান্ধাবাজী, চাদাবাজী, ব্লাকমেলিং, অন্যায় সুবিধা গ্রহণ-এসবের তিনি ঘোর বিরোধী। তার একমাত্র সম্পদ তার মেধাবী সন্তানরা। ত্যাগী আর নির্লোভী এই নেতার শুণ্যস্থান কেউ পুরণ করতে পারবে কি?