নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে স্টুয়ার্ট ব্রড যখন আউট হলেন তখনো ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ৭৩ রান। শেষ পর্যন্ত শেষ জুটিতে ৭৬ রান তুলল ইংলিশরা। তাও আবার ৭৪ বলে। যার মধ্যে ৭৫ রানই স্টোকসের। ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ এনে দেয়া স্টোকস সেই ফাইনালকেই স্মরণ করিয়ে আরও একবার বীর বনে গেলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে। তার অপরাজিত ১৩৫ রানে ভর করে প্রায় অসম্ভবকে জয় করেছে স্বাগতিকরা। এক উইকেটে জিতে অ্যাশেজে সমতায় ইংল্যান্ড।
এক কথায় অস্ট্রেলিয়ার মুখের গ্রাস ছিনিয়ে নিয়েছেন স্টোকস। হেডিংলেতে নিশ্চিত হারা ম্যাচে ইংল্যান্ডকে জয় এনে দেন এই অলরাউন্ডার। যদিও এক্ষেত্রে ভাগ্যের কিছুটা সাহায্য পেলেন তিনি। সঙ্গে আম্পায়ারের বদান্যতা এবং নাথান লায়নের ঐতিহাসিক ভুলও ইংল্যান্ডের হাতে উত্তেজনাকর জয় তুলে দিতে সহায়তা করে।
মিডলস্টাম্পে লাগা বলও এলবি দেননি আম্পায়ার। দায় আছে অজিদেরও। ক্যাচ মিসের সঙ্গে ব্যর্থ হয়েছে ক্যাচ নিশ্চিত করতেও।
জয়ের জন্য চতুর্থ ইনিংসে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৩৫৯ রান। ইংল্যান্ড ৯ উইকেট হারায় ২৮৬ রানে। অর্থাৎ, জিততে হলে শেষ উইকেটে আরও ৭৩ রান তুলতে হতো। জ্যাক লিচকে সঙ্গে নিয়ে অসাধ্য সাধন করেন স্টোকস। এগারো নম্বর ব্যাটসম্যানকে যথাসম্ভব আড়াল করে স্টোকস টি-টুয়েন্টি ঢংয়ে ঝড় তোলেন। শেষমেশ শেষ উইকেট জুটিতে ৭৬ রানের পার্টনারশিপ গড়ে অস্ট্রেলিয়াকে হতাশায় ঠেলে দেন।
টার্গেট তাড়ার করা ইনিংসে দশম উইকেটে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। আগেরটি ছিল এই বছরই। সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার কুশল পেরেরা ও বিশ্ব ফার্নান্দো করেছিলেন ৭৮ রান। ৭৬ রানের মধ্যে জ্যাক লিচের অবদান মাত্র ১ রান। তবে ১৭ বল ক্রিজে কাটিয়ে তিনি স্টোকসকে মহানায়ক হয়ে উঠতে সাহায্য করেছেন।
স্টোকস ১১টি চার ও ৮টি ছক্কার সাহায্যে ২১৯ বলে ১৩৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। ইংল্যান্ড শেষ ইনিংসে ৯ উইকেটে ৩৬২ রান তুলে ম্যাচ জিতে যায়। লিডসে ১ উইকেটের উত্তেজক জয়ে চলতি অ্যাশেজ সিরিজে ইংল্যান্ড ১-১ সমতায় থাকল। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটি ড্র হয়।
অথচ শুরুটা দারুণ করেছিল অস্ট্রেলিয়া। এদিন মাত্র দুই রান করেই ফেরেন রুট (৭৭)। ৩৬ রান করে স্টোকসের বুকের পাথর কমান জনি বেয়ারস্টো। কিন্তু ব্যক্তিগত একটি করে রানে জস বাটলার ও ক্রিস ওকস ফিরলেও আবার বুক ভারী হয় বেনের। বোলিং নায়ক আর্চার করেন ১৫ রান। আর লিচ-স্টোকস কাব্য শুরুর আগে খাতা না খুলেই ফেরেন ব্রড।
৪ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সফল বোলার হ্যাজেলউড। দুটি উইকেট নিয়েছেন লায়ন।
ম্যাচের তৃতীয়দিন অধিনায়ক ছাঁটাইয়ের সার্বিক দাবি কিছুটা হলেও থিতিয়ে দিয়েছিলেন জো রুট! ৬৭ রানে ইংল্যান্ডের ইনিংস ভেঙে পড়ার পর রুটের বদলি খোঁজার জন্য সরব হয়েছিলেন ইংলিশ সাবেক ক্রিকেটাররা। ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে প্রবলভাবে ফিরে আসেন রুট। আগের দুই টেস্টে রান ছিল না তার। সেই তিনিই হেডিংলেতে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন।
প্রথম ইনিংসে ১৭৯ রানের পর অস্ট্রেলিয়া ২৪৬ রানে শেষ হয় দ্বিতীয় ইনিংসে। ৩৫৯ রানের টার্গেট সামনে নিয়ে ইংল্যান্ড তৃতীয় দিনের শেষ তোলে ১৩৪/২। শুরুতেই দুই ওপেনার ররি বার্নস (৭) ও জেসন রয় (৮) ফিরে যান। আবার ভাঙনের আশঙ্কা যখন বাড়ছিল, তখন রুট ও জো ডেনলি জুটিই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। রুট ৭৫ রানে নটআউট থেকে দিনশেষ করেন। ডেনলি শেষ পর্যন্ত ফিরে যান ৫০ রান করে। রুটের সঙ্গে ক্রিজে রয়ে যান বেন স্টোকস (২)।
তৃতীয়দিন শেষে একটাই প্রশ্ন, ইংল্যান্ড কি চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করে জিততে পারবে? হাতে দু’দিন সময় রয়েছে। ইংল্যান্ডের টেস্ট জয়ের ইতিহাস বলছিল, ৩৩২ রানের বেশি তাড়া করে কখনো টেস্ট জেতেনি তারা।
প্রথম দু’দিন হেডিংলের পিচে বাড়তি বাউন্স ও সুইং মিললেও তৃতীয়দিন কিন্তু সেই অর্থে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়নি। যত সময় গড়িয়েছে, ততই সহজ হচ্ছিল পিচ। যা ব্যাখ্যা করে সাবেকরা বলেছিলেন, এই রকম পিচে পরের দু’দিন খেলে সাড়ে তিনশোর বেশি রান তাড়া করে জেতা সম্ভব। কিন্তু তার জন্য দরকার অন্তত দুটো বড় রানের ইনিংস। রুটের ব্যাটে সেই স্বপ্নের ঝলকই দেখা যাচ্ছিল।
ইংল্যান্ডের দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার দুই পেসার জস হ্যাজেলউড ও প্যাট কামিন্স বার্তা দেয়ার চেষ্টা করলেও ইংল্যান্ড সামলে নেয় নিজেদের। আর সামনে প্রশ্ন থাকে চতুর্থ দিন কি ইংল্যান্ডকে জয়ের দরজা দেখাতে পারবেন রুট-স্টোকস?
প্রশ্নের উত্তর, পেরেছেন। তবে রুট নয়, বিশ্বকাপের পর আরও একবার বীর স্টোকস। ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য আর ৮ রান দরকার, তখন অবাক হয়ে এক ব্রিটিশ ভক্ত টুইট করলেন, হেডিংলিতে আমি কী দেখছি! ওই ভক্তের মতো কী কম অবাক ছিলেন ম্যাচের মহানায়ক স্টোকসও। শেষ বাউন্ডারি পর বুক চিতিয়ে উল্লাস করার পরই যে দৃষ্টিতে স্কোরবোর্ডের দিকে তাকালেন সেটাই তার প্রমাণ।