চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

এক বছররেও ভাঙা হয়নি জাদু’র ঘর!

গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেন মহাসড়ক করার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই এ মহাসড়কের দু’পাশে রাতারাতি গড়ে উঠে স্থাপনা। পাল্টে যেতে থাকে চিত্র। এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারি ও স্থানীয় দালাল চক্রের সহায়তায় প্রভাবশালী একটি মহল সরকারের কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে নিচু জমি, ধান ক্ষেত, ডোবা-নালা এমনকি পুকুরের ওপর তৈরি করে দরজা-জানালা বিহীন বসবাস অযোগ্য শতশত টিনের আধা-পাকা স্থাপনা।

ওই ঘোষণার পর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে এসে এসব অবৈধ স্থাপনার সত্যতা পান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি এসব স্থাপনা ভেঙে ফেলার নির্দেশও দেন। সেই নির্দেশের এক বছর অতিবাহিত হলেও অজ্ঞাত কারণে তার বাস্তবায়ন হয়নি।

রাতারাতি তৈরি হওয়া অদ্ভুত স্থাপনা নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। শুরুর দিকে এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তর লেখালেখিও হয় পত্র-পত্রিকায়। সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন, কিসের স্থাপনা এগুলো? কেনো তা তৈরি করা হয়েছে?

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার সোহাগপুরে দেখা গেলো এমনি এক দৃশ্য। পাঁচ ফুট উচ্চতার একটি স্থাপনার চারদিকে কচুরিপানায় ঘেরা। সামনে একদল কৌতূহলী মানুষ গাড়ি থামিয়ে ঘরটিকে দেখছেন। কেউ একজন একটু কাছ থেকে দেখার লোভ সামলাতে পারলেন না। দেখলেন, তিন ইঞ্চি ইটের গাঁথুনীর দেয়াল, বাঁশের ফ্রেমের ওপর নড়বড়ে ঢেউটিন, কোনো দরজা নেই, নেই কোনো জানালাও।

আরেকটু উকি দিয়ে দেখলেন, ভিতরে সবটুকোই ফাঁকা! জনে জনে প্রশ্ন করছেন কিসের ঘর এগুলো? স্থানীয়দের মধ্যে একজন তাদের কৌতুহল মিটিয়ে বলেন এর নাম “জাদু’র ঘর”।

জানা যায়, চলতি বছরের ২৮ আগস্ট টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পরিদর্শনে আসেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এসময় তিনি ৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের চার লেনের কাজ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ শুরু করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

জমি অধিগ্রহণ ও রাস্তার দু’পাশের গাছকাটার মধ্যে দিয়ে চার লেনের কাজ আরো আগে থেকেই শুরু করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এসময় সাংবাদিকরা তাকে রাতারাতি গড়ে উঠা স্থাপনার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সকল অবৈধ স্থাপনা যথাসময়ে ভেঙে ফেলা হবে।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ লাল হোসেন বলেন, ভাঙার জন্য আলাদা বরাদ্দ নেই। এসব স্থাপনা যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তৈরি করা তা সহজেই অনুমেয়। তাই এগুলোকে চিহ্নিত করে মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। অর্থ দেওয়ার সময় সব অবৈধ স্থাপনাকে বাদ দিতে বলা হবে।

গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক চার লেনে উন্নতীকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৫ ফ্লাইওভার, ২৬টি সেতু এবং ৬০টি কালভার্ট নির্মাণ।

ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষ ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গন্ধু সেতু মহাসড়ক চার লেনের কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করেছে। আব্দুল মোনায়েম, রেজা কনস্ট্রাকশন ও মীর আকতার নামে তিনটি কোম্পানি মহাসড়ক চার লেনের মূল কাজ করবে।

চলতি মাসেই ওই ৩ প্রতিষ্ঠানকে ৩ বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কার্যাদেশ দেওয়া হবে। সার্ক হাইওয়ে করিডোর ৪, এশিয়ান হাইওয়ে ২ এবং এশিয়ান হাইওয়ে ৪১-এর অংশ হিসেবে ব্যবহৃত করার পরিকল্পনা রেখেই মহাসড়কটির কাজ বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণ, মহাসড়কের দু’পাশে থাকা গাছ কাটার মধ্য দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে।