ব্রিটেনে ৬৫০ আসনের মধ্যে আজ নির্বাচনী লড়াই হবে। এবার কোনো দলই এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এবারের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্রিটিশ বাংলাদেশী অংশগ্রহণ করছেন। লেবার থেকে ৭ জন, লিবারেল ডেমক্র্যাট থেকে ৩ জন এবং কনজারভেটিভ থেকে ১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। স্কটল্যান্ডের এভারডিনশায়ারের একটি আসন থেকে সুমন হক লেবার থেকে নমিনেশন দাখিল করলে তা বাতিল হয়ে যায়। তাই এখন মোট ১১ জন বাংলাদেশী বংশদ্ভুত প্রার্থী ব্রিটিশ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এক নজরে দেখে নিন সেই সব বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রার্থীদের।
রুশনারা আলী:
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রথম বাংলাদেশী এমপি রুশনারা আলী। ২০১০ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত ব্রিটেনের জাতীয় নির্বাচনে বেথনালগ্রীন ও বো আসন থেকে তিনি বিজয়ের মাধ্যমে ইতিহাস গড়েন। প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশী এমপি হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয়া রুশনারা অক্সফোর্ডের ডিগ্রিধারী সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বুরকী গ্রামের মেয়ে । এবারও রুশনারা বেথনালগ্রীন ও বো আসন থেকে লেবার দলের প্রার্থী হয়েছেন।
টিউলিপ সিদ্দিক:
লন্ডনের হ্যাম্পট্যাড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে লেবার পার্টির হয়ে এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের মেরটন কাউন্সিলের মিচাম এলাকায় ১৯৮২ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ, ব্রুনেই, ভারত, সিঙ্গাপুর, স্পেনে বাল্যকাল কাটিয়েছেন। পশ্চিম লন্ডন থেকে ১৯৮৮ সালে তিনি উত্তর লন্ডনে চলে আসেন এবং এ-লেভেল সম্পন্ন করেন। টিউলিপ ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডন থেকে ইংরেজি সাহিত্যের উপর আন্ডারগ্রাজুয়েট ডিগ্রি এবং কিংস কলেজ অব লন্ডন থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১১ সালে তিনি পলিটিক্স, পলিসি অ্যান্ড গর্ভমেন্টের উপর দ্বিতীয়বারের মতো মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
ড. রূপা হক:
ড. রূপা হক লন্ডনের কিংস্টন ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার। পিএইচডি করেছেন কালচারাল স্টাডিজের উপর। ক্যামব্রিজ গ্র্যাজুয়েট ড. রূপা হক লেবার পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে। রূপার বাবা-মা ১৯৬০ সালে বৃটেনে আসেন। ১৯৭২ সালে লন্ডনের হেমারস্মিথে জন্ম নেয়া রূপা ১৯৯১ সালে লেবার পার্টির সদস্য হন। তিনি একাধারে লেখক, কলামিস্ট, মিউজিক ডিজে। রূপা হকের আদি বাড়ি পাবনায়।
মেরিনা আহমেদ:
লন্ডনের বেকেনহাম আসনে লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জের মেয়ে ব্যারিস্টার মেরিনা আহমেদ। মাত্র ৬ মাস বয়সে বাবা-মা’র সঙ্গে ব্রিটেনে আসেন মেরিনা। ইউনিভার্সিটি অব সারে থেকে ইংরেজি এবং ইতিহাসে স্নাতক মেরিনা আহমেদ সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা করেন। পরবর্তীতে ইউনিভার্সিটি অব বাথ থেকে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের ওপর পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিপ্লোমা করেন তিনি। দুই সন্তানের জননী মেরিনা আহমেদ দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে লেবার পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুল মিয়া:
ব্রিটেনের নর্থহ্যামটন শহরে বেড়ে ওঠা ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুল মিয়া লন্ডনের ওয়েলউইন অ্যান্ড হার্টফিল্ড আসন থেকে লেবার দলীয় প্রার্থী। ১৯৭২ সালে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর গ্রামে জন্ম নেয়া ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুল মিয়া ইউকে-বাংলাদেশ ক্যাটালিস্ট অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ইউকেবিসিসিআই)’র একজন পরিচালক।
আখলাকুল ইসলাম:
লুটন শহরের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী আখলাকুল ইসলাম লুটনের রিগেইট অ্যান্ড বেনস্ট্যাড আসনে প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। তরুণ রাজনীতিবিদ আখলাকুল ইসলাম ১৯৬০ সালে পরিবারের সঙ্গে ব্রিটেনে আসেন। তিনি ব্রিটিশ রেডক্রস ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশে তাদের বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জে।
এমরান হোসাইন:
ব্রিটেনের ব্রাডফোরড আসন থেকে লেবার পার্টির প্রার্থী হয়েছেন এমরান হোসাইন। চিকিৎসা শাস্ত্র নিয়ে অক্সফোর্ডে পড়াশুনা শেষে এখন রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়েও পড়াশুনা করছেন। এমরানের আদিনিবাস সিলেটের গোলাপগঞ্জে। কনজারভেটিভ দলের এক প্রার্থী।
মিনা রহমান:
কনজারভেটিভ দল থেকে লন্ডনের বার্কিং আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেটের ছাতকে জন্ম নেয়া মিনা রহমান। তিনি দলটির একমাত্র বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থী। মাত্র ২১ দিন বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে ব্রিটেনে আসেন মিনা। বিখ্যাত মালবারী গার্লস স্কুলে শিক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেন তিনি। বর্তমানে পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কমিউনিটি হাউজিং কোম্পানির ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন। দুই কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জননী মিনা রহমান বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।
আশুক আহমদ :
লুটন সাউথ আসনে ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী হয়েছেন আশুক আহমদ এমবিই। লুটন শহরের বাসিন্দা আশুক আহমদ ১৯৭৬ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। ২০০৯ সালে ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কর্তৃক সম্মানজনক ‘মেম্বার অব দ্য অর্ডার অব দ্য বৃটিশ অ্যাম্পায়ার’ (এমবিই) খেতাবে ভূষিত হন তিনি। আশুক আহমদের জন্ম সিলেটের বিয়ানীবাজারে।
সাদিক চৌধুরী:
মাত্র দুই মাস বয়সে মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান সাদিক চৌধুরী। এবার তিনি নর্থহ্যাম্পটন সাউথ আসনে লিবারেল ডেমোক্রেট দলের হয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২০০৭ সালে নর্থহ্যাম্পটনশায়ার কাউন্সিল নির্বাচনে প্রথম কোন বাংলাদেশী হিসেবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭৩ সালে সিলেটে জন্ম নেয়া প্রিন্স সাদিক পেশায় একজন ব্যবসায়ী। প্রিন্স সাদিক চৌধুরীর বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকে।
মোহাম্মদ সুলতান:
সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় জন্ম মোহাম্মদ সুলতানের। তরুণ বয়সে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। স্থানীয় বেনগোর সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবারের জাতীয় নির্বাচনে তিনি ওয়েলসের আরফন আসন থেকে লিবারেল ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী হয়েছেন। পেশায় তিনি একজন সফল রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী।