চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘এক দফা এক দাবি ইনস্টিটিউট অব ঢাবি’

সোমবারের মত আজ  মঙ্গলবার সকালেও  নীলক্ষেত মোড় অবরুদ্ধ করে ‘এক দফা এক দাবি ইনস্টিটিউট অব ঢাবি’ এমন স্লোগান দিতে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বুধবার শিক্ষার্থীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনের সমন্বয়ক তাড়িন সুলতানা ও সাবরিন সুলতানা সুমি নূর।

অবরোধের কারণে নিউ মার্কেটের ১ নম্বর গেইট, আজিমপুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মিরপুর রোডের দিকে চারটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আশপাশের বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।

আন্দোলনরত ক্লোথিং অ্যান্ড টেক্সটাইল বিভাগের ২য বর্ষের শিক্ষার্থী আদিবা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমরা দীর্ঘ দিন ধরে আশ্বাস পেয়ে আসছি, এখন পর্যন্ত তেমন কোন সুর্নিদিষ্ট ঘোষণা পাইনি। সুর্নিদিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আমরা ১১ তারিখের পরীক্ষা বর্জন করে এখানে যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্যই আন্দোলন করছি।

শিল্পকলা ও সৃজন শিক্ষা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া বলেন, আমরা খুব যুগোপযোগি ৫টি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছি। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন,রিসোর্স ম্যানেজম্যান্ট অ্যান্ড ইন্টারপ্রেনারশিপ, চাইল্ড ডেভলোপমেন্ট অ্যান্ড সোশাল রিলেশনশিপ, আর্ট অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ স্টাডিজ এবং ক্লোথিং অ্যান্ড টেক্সটাইল। সুতরাং ইনস্টিটিউটের দাবি যৌক্তিক।

“২০১৪ সালে আমারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইউনিটের অধীনে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি। আমাদের কাগজপত্র জমা দিতে হয় জীব বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে। আমরা গত ৪ অক্টোবর আন্দোলন থেকে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর  স্মারকলিপি দিয়েছিলাম এখন পর্যন্ত তেমন কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।”

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন,  ‘সমাজকল্যাণ, লেদার টেকনোলজি যদি আলাদা ইনস্টিটিউটের মর্যাদা পেতে পারে তাহলে আমরা পাবো না কেন? আমাদের সিলেবাস, পরীক্ষা,সবকিছু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রন করেতে পারলে ইনস্টিটিউট করতে বাধা কোথায় ?’ 

রির্সোস ম্যানেজম্যান্ট অ্যান্ড ইন্টারপ্রেনারশিপ বিভাগের ২য় বর্ষের বর্ষের শিক্ষার্থী মায়মুনা হায়দার চৌধুরী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ১৯৬১ সাল  প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিলো। কিন্তু আজও পর্যন্ত আলাদা ইনস্টিটিউটের মর্যাদা দেওয়া হয়নি। এর আগে ৪ অক্টোবর আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রণালয় ৬ সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। কমিটির ৭ দিনে রিপোর্ট দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোন রিপোর্ট দেয়নি। আমরা বাধ্য হয়েই ক্লাস ছেড়ে রাস্তায় নেমেছি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের পঠিত বিষয়ের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠিত বিষয়ের কোন মিল নেই।সুতরাং আমাদের অর্ন্তভুক্তি করলে তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।আমরা আস্বাস নিয়ে অনেক দিন থেকেছি কিন্তু এখন সুর্নিদিষ্ট সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

এ বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফাতিমা সুরাইয়া চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে মন্ত্রনালয়ের সাথে কথা বলেছি এবং আমাদের শিক্ষক স্ংকটসহ নানা ব্যাপারে সমস্যা রয়েছে।তবে এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান এখানে আমাদের তেমন কোন কিছুু করার নেই। তবে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত কমিটির প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের কিছুই বলার নেই।তবে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরানোর চেষ্ঠা করেছি।আমরা শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।

“শিক্ষার্থীরা আমাদের কোনও কথা শুনছে না। তারা নীলক্ষেত মোড় বন্ধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে প্রথমবর্ষের ইনকোর্স পরীক্ষাও স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।”

আন্দোলনের ব্যাপারে রির্সোস ম্যানেজম্যান্ট অ্যান্ড ইন্টারপ্রেনারশিপ বিভাগের অধ্যাপক রিনাত ফৌজিয়া বলেন, আমরাও আন্দোলনের ব্যাপারে ভীষণ বিব্রত অবস্থায় আছি।আমাদের শিক্ষার্থীরা বুঝতে চেষ্টাই করছেনা যে প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই গঠনগত ভাবে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাদানকল্প প্রতিষ্ঠান মাত্র। সমস্যা হয়েছে তিনটি পক্ষ থাকার কারণে।

তিনি বলেন, আমরা বেতন পাই সরকারি, আমাদের এখানে বিসিএস দিয়ে আসতে হয় অথাৎ এটি একটি সরকারি কলেজ। সে হিসাবে আমাদের সব কিছু মন্ত্রণালয় থেকে হয় আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাদানকল্প প্রতিষ্ঠান হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক কিছুু নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে নানা ধরণের সমস্যা আছে আমাদের।

“আমি এখানে যে বিষয় পড়ায় সে বিষয়ে নেদারল্যান্ডে থেকে একটি ডিগ্রিও নিয়ে আসছি কিন্তু আমি আজকে এখান থেকে বদলি হলে আমার এই জ্ঞান তেমন কাজে লাগবে না। সুতরাং আমাদের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্বীকৃতি দিলে আমরা জ্ঞানের আরো বেশি উন্নয়ন করতে পারবো।”

আন্দোলনের সমন্বয়ক সাবরিন সুলতানা সুমি নূর বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ধারাবাহিক আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। যতদিন দাবি আদায় না হবে ততদিন ক্লাস-পরীক্ষায় কোনো শিক্ষার্থী অংশ নেবেন না।

২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান কোর্সে অনুরূপ চার বছর মেয়াদি স্নাতক সম্মান কোর্স এবং এক বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করা হয়। অধিভুক্ত এ কলেজটিকে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথক ইনস্টিটিউট হিসেবে চালু করার দাবি জানিয়ে আসছেন ছাত্রীরা।