ঈদ আসলেই বিকাশ প্রতারক চক্র দেশব্যাপী সক্রিয় হয়ে সহজ-সরল মানুষদের টাকা হাতিয়ে নেয় নানা কৌশলে। এরকমই দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরীর ডাবল মুরিং এলাকায়। কেবল রমজান মাসেই এই এলাকায় ৫০ জনেরও বেশি ব্যক্তির কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটান পুলিশ (সিএমপি) বলছে বিকাশ প্রতারকদের প্রচলিত কথা “ভুলে আপনার নাম্বারে টাকা পাঠানো হয়েছে” এই পদ্ধতির সঙ্গে “পুরস্কার জিতেছেন” এরকম লোভ দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা।
বিকাশ প্রতারণায় আরেকটি প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে ভুয়া ম্যাসেজ দিয়ে টাকা ফেরত চাওয়া। গত ৮ জুন এই পদ্ধতির প্রতারণার শিকার হন সিএমপি’র এক পুলিশ সদস্যের বাবা।
এই প্রতারণার বিরুদ্ধে ডবল মুরিং থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে রবিউল আউয়াল নামের ওই পুলিশ সদস্য জানান, ‘গত ৮ জুন দুপুর আনুমানিক সময় ১২ টার দিকে আমি আমার গ্রামের বাড়িতে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর জন্য ডবলমুরিং থানাধীন মনছুরাবাদ ঝলক হোটেলের পাশে ‘বিছমিল্লাহ টেলিকম’ নামের দোকানে যাই। সেখানে ওই দোকানের একটি নম্বর থেকে আমার বাবার বিকাশ নম্বরে ১৫ হাজার এবং আরেকটি নাম্বার থেকে ৫ হাজার ৪০০ টাকা পাঠাই। সেদিনই বিকাল আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে আমার বাবার বিকাশ নম্বরে ০১৯১১৫৬২৪২০ এবং ০১৯৯৪৮৮৯০৭৮৯ নম্বর থেকে ১০ হাজার ৭০০ টাকার একটি এস.এম.এস আসে। এর পর পরই অজ্ঞাতনামা একজন ব্যক্তি ০১৯৯৪৮৮৯০৭৮৯ নম্বর থেকে আমার বাবাকে ফোন করে বলে “আপনার কাছে ১০ হাজার ২০০ টাকা বেশি গিয়েছে, আপনি ওই টাকা ফেরত দিলে আমি উপকৃত হবো।”
এই কথা শুনে সরল বিশ্বাসে আমার বাবা ওই টাকা পাঠিয়ে দেন। কিন্তু বাবা একাউন্ট ব্যালেন্স চেক করে দেখতে পান যে তাঁর একাউন্টে ১০ হাজার ২০০ টাকা আছে। এটা জেনে আমার বাবা ওই নম্বরে ফোন করলে তারা বলে বোধ হয় ভুলে বেশি টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন। তখন টাকা ফেরতে পাঠাতে তারা আমার বাবাকে একটি সংখ্যা চাপতে বলে। বাবা তাদের কথামত সংখ্যা চাপলে অবশিষ্ট ১০ হাজার ২০০ টাকাও হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা।’
সম্প্রতি বিকাশ প্রতারণার শিকার হওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন ডবলমুরিং থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এস আই) কিশোর মজুমদার।
বিকাশ প্রতারণার বিষয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: ১৫-২০ লাখ টাকার পুরস্কার-লটারি জিতেছেন জানিয়ে প্রতারকরা ফোন করে বিকাশে ভ্যাটসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে টাকা দাবি করে। অনেকেই লোভের বশে তাদের টাকা পাঠায়। তারা একেকটি নাম্বারে ১৫ হাজার , ১০ হাজার এরকম টাকা পাঠাতে বলে।
এর পেছনে চট্টগ্রামের কোন চক্র জড়িত কিনা খতিয়ে দেখে পুলিশ বলছে ফরিদপুর, বগুড়া জেলা থেকে এসব ফোন কল এসেছে। জড়িতদের আটক করতে ইতোমধ্যে সিএমপি’র তদন্ত কর্মকর্তারা এই জেলাগুলোর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে জানান এস আই কিশোর।
কোন ফোন কল ও এস.এম.এস দেখেই নিজের ব্যালেন্স খতিয়ে না দেখে অপরিচিত কোন নম্বরে বিকাশে টাকা না পাঠাতে পরামর্শ দিয়েছেন সিএমপি’র এই পুলিশ সদস্য।