একাদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম অনলাইনে হওয়ার কারণে এবার ভর্তি বাণিজ্য হয়নি। প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার কোচিং বাজার এবার তাই প্রচন্ড ধাক্কা খেয়েছে। ধাক্কা খেয়েছে স্বজনপ্রীতি আর ভর্তি কার্যক্রমে আমলা ও ছাত্রনেতাদের দৌরাত্মও।
ভুলে ভরা মেধা তালিকা প্রকাশের পর এই কার্যক্রমে যাওয়া ঠিক হয়েছে কিনা তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুললেও শতাংশ হিসেবে কতো ভাগ ভুল হলো এ বিশ্লেষণে কেউই যাননি বলে সংশ্লিষ্টরা পাল্টা অভিযোগ করেছেন।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে বলছে, ১১ লাখ ৫৬ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করে। এর মধ্যে ৯ লাখ ২৩ হাজার ১০৫ জন শিক্ষার্থী ৫ জুলাইয়ের আগেই তাদের কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করেছে।
কিছু ভুলের কারণে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নিজেই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়েছেন। তার হিসাব মতে, ২ লাখ ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী এখনো ভর্তি হতে পারেনি। তবে কোনো কলেজে ভর্তির আবেদনই করেনি ৬২ হাজার শিক্ষার্থী ।
সফটওয়্যার ত্রুটির কথা বলে বুয়েটকেও প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ বুয়েট যা করেছে তার সবই হয়েছে বোর্ডগুলোর দেওয়া তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর।
যেমন ঢাকা বিজ্ঞান কলেজে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অথচ ওই কলেজে বাণিজ্য বিভাগই নেই। বিজ্ঞান কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলেও মাত্র ৭/৮ জন শিক্ষার্থীকে বাণিজ্য বিভাগে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ঢালাও নেতিবাচক মন্তব্য হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শন বিভাগ থেকে যদি বলা হয় বিজ্ঞান কলেজে বাণিজ্য বিভাগও আছে তাহলে বুয়েটের আদৌ কি কিছু করার আছে?
২০০৮ সালে বিজ্ঞান কলেজে বাণিজ্য বিভাগের অনুমোদন দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীও ভর্তি করা হয়। এর কয়েক বছর পর বোর্ডের অনুমতি ছাড়া বাণিজ্য বিভাগ খোলায় বাণিজ্য বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধের সেই তথ্য নেই বোর্ডের কাছে। আর বোর্ডও তা সরবরাহ করেনি বুয়েটকে।
একইভাবে নারায়ণগঞ্জ কলেজে ছাত্রী ভর্তির মেধা তালিকা প্রকাশ করা হলেও প্রায় ১৮শ ছাত্রকে সেখানে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়নি। কারণ ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ভর্তির অনুমোদন নেই। অথচ কলেজ থেকে বোর্ডে তথ্য দেওয়া হয়েছে, কলেজটি সহশিক্ষা কার্যক্রমে পরিচালিত হয়। এ কারণে শিক্ষার্থীরাও বিভ্রান্ত হয়ে ওই কলেজে আবেদন করে।
অনলাইনে ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণে দোকানের ওপর নির্ভরশীলতা ছিলো বলেও ভুল হয়েছে অনেক। তবে ৫ জুলাইয়ের আগেই ৮৫ ভাগ শিক্ষার্থীর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার অর্থ হচ্ছে ভুলের সংখ্যা কম, এমন দাবি সংশ্লিষ্টদের।
মাত্র ১শ’ ৫০ টাকা দিয়ে একটি কলেজে ভর্তির আবেদন করা গেছে এবার। শিক্ষামন্ত্রী এবং সচিব নজরুল ইসলাম খান দু’জনই বলেছেন, ভর্তির সময় যে চক্রটি ভর্তির বিনিময়ে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করে এবার তারা কাছে আসতে পারেনি। কোচিং প্রতিষ্ঠানগুলোও ব্যবসা করতে পারেনি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই পদ্ধতির কারণে সরকারি কলেজগুলোতে ভর্তির চক্র পুরোপুরি নির্মল হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটিকে বাধাগ্রস্ত করতে শীর্ষ বেশ কয়েকটি কলেজের অসহযোগিতার কথাও জানান তিনি।
আর শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী লাভবান হয়েছে। আর যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেটা অনিচ্ছাকৃত। তবে ভবিষ্যতে এরকম ভুলের আর কোনো সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।