যে ছেলেটি আজ নাবালক, সে বুঝতেই পারলো না কলম্বোয় কী ঘটে গেল! কলম্বোয় তৃতীয়দিন শেষে বাংলাদেশ ৭৫ রানে এগিয়ে। কলম্বোয় শততম টেস্টে ‘সর্বোচ্চ রান’ করার নজির গড়েছে বাংলাদেশ। কলম্বোয় মোসাদ্দেক নামের এক তরুণ অভিষেকে ৭৫ রান করেছেন। আর একজন সাকিব করেছেন ১১৬। সঙ্গে দেখিয়েছেন ‘অনেক কিছু’।
বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে বৃহস্পতিবার রাতে কী কী আলোচনা হয়েছিল, তা জানা সম্ভব নয়। তবে এতটুকু হলফ করে বলা যায়, সামারাবিরার ওই কথাটা নিয়ে একটু উশখুশ হয়েছে। সামারাবিরা সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, সাকিবের অমন ব্যাটিংয়ের কারণ তার জানা নেই। সাকিব ৮ বলে ১৮ করেছিলেন বলেই তিনি এমন মন্তব্য করেননি; বরং শট খেলার ধরন দেখে বিরক্ত ছিলেন।
শুক্রবার সেই সাকিব শতভাগ পাল্টে গেলেন। ক্রিকেটীয় ব্যাকরণের নির্যাস গিললেন সেঞ্চুরির পথে হাঁটতে হাঁটতে। ৫ উইকেট হারিয়ে দল যখন বিপদে, ঠিক সেখান থেকে খেললেন মনে রাখার মতো এক ইনিংস। এই ইনিংস নিয়ে বিশ্বক্রিকেটের রথীমহারথীরা হয়তো ‘টক-শো’ করবেন না, কিন্তু বঙ্গদেশে যে নাবালক আজ বেড়ে উঠছে নিশ্চয়ই সে একদিন ইউটিউব নামক যাদুর ঠিকানায় লিংক খুঁজবে। যদি সে ক্রিকেট ভালবাসতে চায়।
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে করেছিল ৩৩৮ রান। বাংলাদেশ রেকর্ড গড়ে ৪৬৭ রান তোলে। এর আগে কোন টেস্ট খেলুড়ে দল তাদের শততম টেস্টে এত রান করতে পারেনি। আগের রেকর্ডটি ছিল নিউজিল্যান্ডের। মাইলফলকের টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৪২২ রান করেছিল কিউইরা।
বাংলাদেশকে এই রেকর্ড গড়তে সাহায্য করেছে সাকিবের ওই ঐতিহাসিক শতক। টেস্টের ইতিহাসে নিজেদের শততম ম্যাচে সেঞ্চুরি করার নজির আছে মাত্র সাতজনের। অস্ট্রেলিয়ার দুজন তাদের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করেন। চার্লস কেল্লেওয়ে ১১৪, ওয়ারেন বার্সলে করেন ১২১। নিউজিল্যান্ডেরও দুজন নিজ দেশের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকান, বেভান কংডন ১২৬, ব্রিয়ান হ্যাস্টিংস ১০৫। পাকিস্তানের মাজিদ খানেরও এই কীর্তি আছে। তিনি করেছিলেন ১০৮। সাউথ আফ্রিকার ওয়াল্টার ওয়েড করেছিলেন ১২৫। জিম্বাবুয়ের গ্রায়েম ক্রেমারও নিজ দেশের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০২ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
সাকিব ফিরে যাওয়ার পর মিরাজকে নিয়ে সামনে যেতে থাকেন মোসাদ্দেক। হেরাথের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে ২৪ রান করে যান তরুণ অলরাউন্ডার মিরাজ। ঠিক পরের বলে মোস্তাফিজকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান হেরাথ। কিন্তু শুভাশিস রায় তাকে হতাশ করেন।
তৃতীয়দিন শেষে সাকিবকে ১০০’র ভেতর ৯৫ নম্বর দিলে মোসাদ্দেককে দিতে হবে সাড়ে ৯৪। একবারও মনে হয়নি অভিষেক টেস্টে ব্যাট করছেন। সাকিবের সঙ্গে ১৩১ রানের জুটি। মিরাজের সঙ্গে ৩৩ রানের। হেরাথ-সান্দাকান-লাকমাল তাকে আটকাতে বারবার কৌশল বদল করছিলেন। কিন্তু মোসাদ্দেক সুযোগ দেননি। যখন ফিরেছেন, তখন তার কিছু করার ছিল না। শেষ ব্যাটসম্যান শুভাশিস রায়কে বাঁচাতে বেশি বেশি স্ট্রাইক নিচ্ছিলেন। এক পর্যায় উপায় না দেখে রান বাড়ানোর দিকে মন দেন। হেরাথকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে যেয়ে স্টাম্পিং হন। পেছনে লিখে রেখে যান এক ভবিষ্যৎ কাণ্ডারির আগমনী বার্তা।
এখন তিনি ‘বালক-বীর’!