রাজনীতিতে থেকেও বরাবরই রাজনীতিতে কিছুটা নিষ্ক্রিয় সাবেক মেয়র মনজুর আলম।নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে রাজনীতি থেকেই অবসর নেয়ার ঘোষণা
দিয়ে আবারো আলোচিত তিনি। তার ঘনিষ্ঠরা ধারণা করছেন, নিজ দলের নেতা-কর্মীদের অসহযোগিতামূলক আচরণই তাকে নির্বাচনের সঙ্গে রাজনীতি বিমুখও করেছে।
চট্টগ্রামের সাবেক মেয়রের রাজনীতি ছাড়ার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে এই কারণে
যে, তিনি কখনোই সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলেন না। চারবার কাউন্সিলর ও দুইবার
মেয়র পদে নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা থাকলেও দলীয় রাজনীতিতে কখনোই তেমন সক্রিয় ছিলেন না মনজুর
আলম।
চট্টগ্রামের অভিজাত ব্যবসায়ী আবদুল হাকিম কন্ট্রাকটরের চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে
তিনি একজন। তাদের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম মোস্তফা হাকিম গ্রুপ। একজন ‘অসফল’ মেয়র হিসেবে পরিচিতি থাকলেও গত ১০ বছরে তাদের পারিবারিক ব্যবসার পরিধি বেড়েছে বহুগুণ।
কাউন্সিলর থাকাকালীন তিনি চট্টগ্রামের
প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর একান্ত সান্নিধ্যলাভ করে কয়েকবার
ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সক্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা না হয়েও তিনি হয়ে
ওঠেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীদের অন্যতম। আওয়ামী লীগের একজন নিভৃতচারী নেতা হিসেবেই
তার পরিচিতি ছিলো।
দৃশ্যপট বদলে যায় ২০০৭ সালের
ওয়ান ইলেভেনের পর। মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রেফতার হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়র হন। এরপর
অওয়ামী লীগ ২০০৮’এ ক্ষমতায় এলে ২০১০ সালের মেয়র নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী
হিসেবে নিজের রাজনৈতিক ‘গুরু’কে পরাজিত করে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন।
তখন তিনি বিএনপি
সমর্থিত মেয়র থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে আওয়ামী লীগ পরিবারের একজন বলেই উল্লেখ
করেছিলেন।
মেয়র থাকার সময় মনজুর আলমের
রাজনৈতিক সক্রিয়তা চোখে পড়ার মতো ছিলো না। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পদে থাকলেও
তিনি রাজনীতিতে তার পুরনো স্বভাবের ব্যত্যয় ঘটাননি। সিটি মেয়র হিসেবে বিএনপির রাজনীতিতে
সক্রিয় না থাকায় দলের ভেতর তাকে নিয়ে ক্ষোভ ছিলো।
মেয়র হিসেবেও মনজুর আলম তার
নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর তুলনায় ছিলেন নিষ্প্রভ।চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে তিনি উল্লেখযোগ্য
অবদান রাখতে পারেননি বলে বন্দরনগরীতে কথা চালু আছে।
তবে তার সময়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ছিলো উপেক্ষিত। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই চট্টগ্রামের সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলেছে।
অনেকটা অলংকার হিসেবে তিনি মেয়র পদে ছিলেন।
বিএনপির নেতা-কর্মীরাও তার বিরুদ্ধে
প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতেন। বিএনপি নেতা হিসেবে তিনি শুধু গত বছর ১৫ আগস্ট বিএনপি
চেয়ারপার্সনের ‘জন্মদিনে’ কেক কেটেছিলেন।
এরপর এবারের সিটি নির্বাচনে অনেকটা
দলীয় কোন্দল থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে তাকে বিএনপি আবারও মনোনয়ন দেয়। কিন্তু বিএনপির
একটি বড় অংশ আশা করেছিলো আন্দোলনের নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন মনোনয়ন পাবেন। ফলে মনজুর আলম
নিজ দল বিএনপি থেকে তেমন সহযোগিতা পাননি।
বিএনপি নেতা-কর্মীদের আরেকটি ক্ষোভের কারণ এই যে মনজুর আলমের বড় ভাইয়ের ছেলে আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য। গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে
তার ভাইপো দিদারুল আলম চট্টগ্রাম-৮ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তার এই আওয়ামী ইমেজ এবং সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে তিনি বিএনপিতে অনেকটা কোণঠাসা ছিলেন।
তবে চট্টগ্রামের মানুষ মনে করেন, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কোনো
দলের রাজনীতিতেই সফল হতে পারেননি মনজুর আলম।নএকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত
হওয়ার পর এবং মেয়র থাকার সময় তিনি কেবল রুটিন দায়িত্বই পালন করে গেছেন।
মঙ্গলবার বিএনপি যখন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় তখন তিনি রাজনীতি থেকেই অবসরের ঘোষণা দেন। পরে আর এ বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম-৮ আসনের
আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এই নির্বাচনের আগে বিএনপির
দু’জন বড় মাপের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। তাদের বাদ দিয়ে মনজুর আলমকে
সমর্থন দিলেও বিএনপির পক্ষ থেকে হয়তো সহযোগিতা পাননি তিনি।
তিনি বলেন: পদত্যাগ তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে পারিবারিকভাবে আমরা আওয়ামী লীগের মানুষ। আমার দাদা মরহুম আবদুল হাকিম কনট্রাকটর চট্টগ্রামে
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। মাঝখানে হয়তো ভুলবশত: তিনি বিএনপিতে গিয়েছিলেন।
তবে চট্টগ্রামের রাজনীতির নাড়ি-নক্ষত্রের খবর রাখেন এমন মানুষেরা বলছেন, হঠাৎ করে চট্টগ্রামের
রাজনীতিতে মনজুর আলম একজন আলোচিত ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন, তেমনি হঠাৎ করে তার রাজনীতি
থেকে নির্বাসনে যাওয়াটাও একেবারেই অনাকাঙ্খিত ছিল না।