চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

একজন ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর মুক্তিযুদ্ধ

একাত্তরের ভয়াবহ ধর্ষণ সম্পর্কে একমাত্র জবানবন্দি-দানকারী ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী শাহরিয়ার কবিরের সম্পাদনায় ‘একাত্তরের দুঃসহ স্মৃতি’ বইতে তার সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘রাতে ফিদাইর (উচ্চ পদস্থ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা) চিঠি নিয়ে ক্যাপ্টেন সুলতান, লে. কোরবান আর বেঙ্গল ট্রেডার্সও অবাঙালি মালিক ইউসুফ এরা আমাকে যশোরে নিয়ে যায়। যাওয়ার পথে গাড়ির ভেতরে তারা আমাকে ধর্ষণ করেছে। নির্মম, নৃশংস নির্যাতনের পর এক পর্যায়ে আমার বোধশক্তি লোপ পায়। ২৮ ঘণ্টা চেতনাহীন ছিলাম।’

১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বর্বর নির্যাতনের শিকার হন ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী।  একমাত্র তিনিই সেই সব সবার সামনে তুলে মুখ ফুটে বলেছেন। বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, তার ধারণা ছিলো, তার অকপট বক্তব্য শুনে আরো অনেকে এগিয়ে আসবে। বাস্তবে আসলে তা দেখা যায়নি।  পরবর্তীকালে খুব কম সংখ্যক নারী একাত্তরের ভয়াবহতা তুলে ধরার সাহস করতে পেরেছিলেন।

দীর্ঘ সময় একাই পথ পাড়ি দেন ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। মা প্রগতিশীল এবং ভাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও যুদ্ধ থেকে ফিরে অনেকটাই একা হয়ে পড়েন তিনি। তবে নিজের দেয়া সাক্ষাৎকারে বারবরই বলেছেন, সেই সময়ের চূড়ান্ত অপমানই তার চলার পথে পাথেয় হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের পর নির্যাতিত নারীদের তালিকা করলেও তা নষ্ট করে দেয়া হয়। নির্যাতিতদের নাম প্রকাশ হলে সামাজিকভাবে তারা হেয় হবেন এই আশঙ্কা থেকেই ওই সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিনী বলেন, তাদেরকে বোঝাতে হবে নিজেদেরকে বীরাঙ্গনা হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জার কিছু নেই। এটা তাদের জন্যই গর্ব। বাংলাদেশের স্বাধীনতার গর্ব। লাখো লাখো মানুষ দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। আমরাও দেশের জন্য এই ত্যাগ স্বীকার করেছি। এতে লজ্জার কিছু নেই।

২০১০ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পদক পান এই মহিয়সী নারী। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের হাতে নির্যাতিত ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিনী বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয় সরকার। ২০১৬ সালের অগাস্টে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৩৫তম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

৬ মার্চ মঙ্গলবার দুপুর পৌনে একটার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী।