মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিশেষণে ভরপুর থাকছেন বেশ আপনি বিশেষত: ইদানিংকালে। সুবিশেষণ প্রয়োগ করছেন অনেকে মন থেকে আর অনেকেই চিরায়ত ধান্দাবাজি-তেলবাজি থেকে। আর প্রতিপক্ষতো কুবিশেষণের ফোয়ারা বইয়ে দিচ্ছেন যে কোনো সুযোগে।
অধমের সালাম ও যথাযথ সম্মান নেবেন। আপনি আপনার শাসনকার্যের প্রতিফল হিসাবে সম্প্রতি ‘পরিবেশ’ ইস্যুতে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’-এ ভূষিত হয়েছেন। পৃথিবীতে সকল সরকারই শাসন-প্রয়োজনে ‘মানবাধিকার লংঘন’ করে চলে দেদার। উন্নয়ন-প্রয়োজনে ‘পরিবেশ লংঘন’ও করে চলেছে বেশুমার। বিশেষত: ‘সুপারপাওয়ার’ হবার দৌড়ে যারা উন্মাদসম, তাদেরতো কথাই নেই। এমনি অবস্থায় ক্রমাগত সাতবছর সরকারের প্রধান নির্বাহী ক্ষমতায় থাকার পরও পরিবেশ-অনুকূল সর্বোচ্চ জাতিসংঘ পদকটি পেলেন, বিষয়টিকে হাল্কা করে দেখছেন ‘সুশীল সংঘের’ অনেক ভ্রাতা ও ভগিনী, কিন্তু হাল্কা করে দেখার অবকাশ আছে বলে মনে করি না।
তা পুঁচকে শব্দ ও বাক্য উৎপাদক হিসাবে হাল্কা-গভীর যেভাবেই দেখি না কেন, জগতে ‘তাহার কি-ই বা মূল্য রহিয়াছে!’ জগতে ব্যক্তি হিসাবে ‘চ্যম্পিয়ন’ হতে আসেন কেউ কেউ। বাকি সবাই মোটামুটি ছোট বড় ‘পিয়ন’। তবে ‘পিয়ন’ কথাটি কোনোক্রমেই তুচ্ছার্থে ব্যবহার করছিনা প্রধানমন্ত্রী! এই পিয়নরা আছে বলেই কেউ কেউ চ্যাম্পিয়ন। এই পিয়নরা ‘সভ্যতার’ ভার বহন করে চলেছে সেই কবে থেকে। রাজা-রাণীরা বহুকাল রাজত্ব চালিয়েছেন এদের ভুলিয়ে-ভালিয়ে, এদের দারিদ্র্য ব্যবহার করে। আবার বিপ্লবী জনপ্রিয় চ্যম্পিয়নরা এদের উদ্বুদ্ধ করেছেন, মাঠে নামিয়েছেন আদর্শিক ইস্যু তুলে ধরে।
আজ ২১ অক্টোবর ২০১৫ এর সকালে একজন ‘পিয়ন’ হিসাবে আপনার মতো একজন গর্বিত চ্যাম্পিয়নের দরবারে কিছু বিনীত বচন নিবেদন করতে বাসনা প্রকাশ করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ধরেই নিলাম আপনার অনুমতি পেয়ে গেছি। আপনি অভয়ও প্রদান করেছেন। অতএব শুরু হলো ‘পিয়ন-নিবেদন’।
হে মাননীয়, পরিবেশ চ্যাম্পিয়ন পদকটি পাবার পর তৃপ্ত, খুশি এবং আস্থাব্যঞ্জক আপনার বক্তব্য খুব মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করেছি। সে বক্তব্যের দিগন্ত পরিবেশের নানা প্রান্ত ছুঁয়েছে। সে বক্তব্য আমার মতো যারা নানাভাবে দেশের শুভ এবং মঙ্গলের লক্ষ্যে পিয়নসম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজ করে চলেছে, তাদের খুশিই হবার কথা, সে খুশি আমরা হয়েছি আন্তরিকভাবেই। কিন্তু এই বাংলাদেশে এতো কোটি মানুষের দেশে জীবন-জীবিকার এই মস্ত, জটিল এবং অসচেতন প্রান্তরে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের হাল শক্ত হাতে ধরে উজানে নাও চালানো যে কতোটা কঠিন, সেটা ভেবেই বিব্রত থাকি সদা। ‘পিয়ন’দেরতো এমনিই দশা!
রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিবেশের কথা আজ না হয় শেলফেই তুলে রাখলাম। আজ শুধু প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রসঙ্গ নিয়েই কিঞ্চিৎ নিবেদন রাখি। জানি এবং বুঝি, এতো গিজগিজ মানুষের দেশে প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখা হিমালয়-হিন্দুকুশ-আল্পস প্রভৃতি পর্বতের সম্মিলিত আকারের চেয়েও বড় এক কাজ। তবুও ‘চ্যম্পিয়ন’ হবার ‘দায়’ অনেক। সেই পটভূমিতেই আজকের নিবেদন-পসরা।
গঙ্গাকে ‘পবিত্রতম’ নদী হিসাবে গণ্য করেন কোটি কোটি বিশ্বাসীরা বিশ্ব জুড়ে। গঙ্গার তীরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের গর্ব, গৌরব ও পুণ্য অর্জনের সেই প্রথা আজ আর নেই। অতিব বেদনা, পরিতাপ এবং লজ্জ্বার সঙ্গে উল্লেখ করছি, বাস্তবে গঙ্গা হচ্ছে সেই কোটি কোটি বিশ্বাসীদেরই ‘অবদানে’ পুষ্ট পৃথিবীর ‘দূষিততম’ নদী। ভারতের বিশাল নির্বাচনী বিজয়ে ক্ষমতাসীন মোদী সরকার গঙ্গা বিশুদ্ধকরণের এক মহা ধুমধাম প্রকল্প বাদ্য বাজিয়েই চলেছেন। কেউ কেউ বলছেন গঙ্গাকে বিশুদ্ধকরণের এই মহাযজ্ঞ শেষ হওয়া দিল্লী দূরস্ত! কেননা এ যে শত বছরের অবিবেচক, অসচেতন, দায়িত্বজ্ঞানহীন জঞ্জালের স্তুপ। সেই গঙ্গা নাম বদলে পদ্মা হয়ে বাংলাদেশে ঐ দূষিত পানি নিয়ে যায় বঙ্গোপসাগরে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গঙ্গার কথাটুকু তুললাম কিন্তু আমাদের রাজধানী ঢাকার প্রধান নদী বুড়িগঙ্গার প্রসঙ্গে আসার জন্যই। নদীর ইতিহাসে কেমন করে কোন গতিপথ পরিবর্তনের কোনো কালে এই বুড়িগঙ্গা নামধারী নদীটুকু এখানে এই ঢাকা শহরকে আবেষ্টন করার সুযোগ পেলো, তার সবটুকু জানিনা। তবে এটুকু জানি একদিন বর্তমান মুন্সীগঞ্জের কাছাকাছি এক জায়গা পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের বিস্তৃতি ছিলো। এই বুড়িগঙ্গার তীরে বাংলার নবাব-নায়েব-গোমস্তা-পাইক-পেয়াদা এবং জনগণের কতো যে কাহিনী। এই বুড়িগঙ্গাকে আমরা ঢাকা শহরের বর্জ্য ফেলার এক স্থায়ী ভাগাড়ে পরিণত করেছি। এই বুড়িগঙ্গায় চামড়া কারখানাগুলোর ভয়ংকর বিপজ্জনক রাসায়নিক বর্জ্যর দূষণ চলছে কতোটা কাল। এই বুড়িগঙ্গার দু’পাশেই খলনায়কদের দখল অভিযান চলছে কতোদিন ধরে।
পৃথিবীতে চারপাশেই নদী আছে এমন শহর-নগর-মহানগর ক’টি আছে বলুন! আমাদের ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ঘিরে বুড়িগঙ্গা-তুরাগ-বালু-শীতলক্ষ্যা-ধলেশ্বরীর এক চিত্তমনোরম নদীবেষ্টনী। আহা, এই বেষ্টনী জুড়ে মহানগর পরিবহনের চমৎকার বিন্যাসে আমরা পৃথিবীসেরা পর্যটন প্রান্তর গড়ে তুলতে পারি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ সবকিছু আপনি আমাদের মতো ‘পিয়ন’দের চেয়ে অনেক অনেক ভালো জানেন। কিন্তু তবুও এই কলাম-পিয়নের ছোট্ট বিনীত নিবেদন:
* আপনার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার প্রাপ্তি উপলক্ষ্যে আপনি প্রথম এবং প্রধান অগ্রাধিকারের প্রকল্প হিসাবে ‘ঢাকা নদী বেষ্টনী’ কার্যক্রমকে চিহ্নিত করে অবিলম্বে ঘোষণা দিন। একেবারে সময় নির্দ্দিষ্ট করে কেমন করে বর্জ্যপ্রণালী বন্ধ করে, চামড়া শিল্প পুনর্বাসিত করে, চারপাশের নদী সকল প্রকার দখলবাজদের হাত থেকে উদ্ধার করে পৃথিবীসেরা নয়নমনোহর এক নব ঢাকা সৃজন করুন হে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
* ঢাকা মহানগরীতে উন্মুক্ত স্থান এবং খেলার মাঠের একান্ত অভাব। এই অভাব মেটাতে ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ হিসাবে একটি নবপরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন দেশবাসীকে উপহার দিন। ড্যাপ নবায়ন প্রক্রিয়ায় ঢাকা মহানগরীকে নিঃশ্বাস নেবার সুযোগ করে দিন। কয়েকঘণ্টার বৃষ্টিতে ঢাকা মহানগরী যেন ইতালির ভেনিস নগরীতে রূপান্তরিত আর না হয়, সে জন্য সময়-সুনির্দ্দিষ্ট পরিকল্পনা ও বাস্তবানুগ ব্যবস্থাপনার রূপরেখা ঘোষণা করুন।
* খুব বেশী আকাশচারী স্বাপ্নিক প্রত্যাশা কিংবা দাবী পেশ করছিনা। সারাদেশেই নদীনালা খালবিল হাওর-বাওর জলাভূমিতে চলছে দখলের একপ্রকার বাধাহীন উৎসব। দূষণের মহোৎসব। শুধু আটটি বিভাগে বড় রকমের দূষণ-দখলমুক্ত জলাভূমি প্রকল্পের ঘোষণা দিন অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প হিসাবে। ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার প্রাপ্তি উপলক্ষে জনগণকে নূন্যতম এই উপহারটুকু বিশেষ অনুষ্ঠান করে জাতিকে ঘোষণা দিন। ওরা হাজারে হাজারে আপনাকে সম্বর্ধনা দিয়েছে জাতিসংঘ থেকে বিজয়িনী আপনার প্রত্যাবর্তনের পর রাজধানী ঢাকাতে। বিনিময়ে আপনি দিন বিশেষ উপহার। সময়-সুনির্দ্দিষ্ট উপহার। পিয়নের এই আব্দার অবশ্য আপনার দৃষ্টিতে পড়বে কিনা জানিনা। কেননা আপনার চারপাশেও যে শুধু ব্যক্তিগত ‘চাই-চাই’ ওয়ালাদের ভারি দেয়াল। আর ঐ দখল-দূষণের মহাজনরাতো ক্রমাগতভাবে খোদ মহান জাতীয় সংসদকেই গ্রাস করে চলেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবার আপনাকে আরো দু’টো ইস্যু নিয়ে কিঞ্চিৎ পিয়ন-বচন শোনাতে ব্যাকুল হয়ে পড়েছি : *বনভূমি ইস্যুটি নিয়ে কিছু কথা বলবো কী? আপনি চমৎকার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন দেশের এক চতুর্থাংশ আপনার সরকার বনজঙ্গল দিয়ে ঢেকে দেবে। এমন ঘোষণায় কেউ যদি খুশি না হয়, তাহলে তার সরল অন্তর নেই।
রাজধানী ঢাকার অদূরে ভাওয়ালের গড়। শালগাছের অরণ্য। একটু দূরেই মধুপুরের বন। এই দু’টি বন মানুষের লোভের কাছে মর্মান্তিকভাবে পরাজিত। এই বনভূমির গভীরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ হিসাবে একটি শুভেচ্ছা সফর আয়োজন করুন। দেখবেন ভিতরে ভিতরে দু’টি বিশাল বনই ফোকলা হয়ে গেছে। এই দু’টো বনভূমি দখল ও ধ্বংস করার বড় বড় আয়োজনে যেসব রুই-কাতলা-বোয়াল তাদের অনেককেই আপনি চেনেন এবং জানেন। কারখানা করার নামে ক্ষমতাসীন বড় আওয়ামী নেতা ভবিষ্যতের নিরাপত্তার ঢাল স্বরূপ বিএনপিওয়ালাকে অংশীদার করে নিয়েছেন। এসবক্ষেত্রে ‘জাতীয় সমঝোতা’ যে কতো দ্রুত গড়ে উঠছে। এবার চলুন সিলেট কিংবা চট্টগ্রামের পার্বত্য প্রান্তরে। সেখানে দখল এবং বৃক্ষকর্তনের দক্ষযজ্ঞ বহুকাল ধরে। বনভূমির চরিত্র নষ্ট করে সবখানেই নানাবিধ বনভূমির সাথে মেলেনা এমন কিছুর অবাধ চাষাবাদ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বনভূমি রক্ষায়, বনভূমি সৃজনে আপনি বিশেষ কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন এই প্রত্যাশা রইলো। বাংলাদেশ যত্রতত্র বড় বড় ঘোষণা আর ফাঁকা বুলির অভয়ারণ্য। নিশ্চয়ই অমন গ্লানি থেকে চ্যাম্পিয়ন আপনি বাংলাদেশকে রক্ষা করবেন। প্রতিপক্ষের কাছে কিছু আশা করিনা। এক ক্ষমতায় থাকার জন্য হাজার হাজার বৃক্ষ কেটে ব্যারিকেড করেছে। আপনার কাছে আশা করি। যদিও এই সত্যটুকু জানবেন, বিরোধী পক্ষের কেটে ফেলা গাছগুলো পরে অনেক ক্ষেত্রে নিলামে বিক্রি করেছে প্রশাসন নয়, ক্ষমতাসীন দলীয় নানা পুঙ্গবেরাই।
আপনাকে এবার সংবেদনশীল ‘সুন্দরবন’ ইস্যু নিয়ে কিছু বলবো। যদি সুযোগ হয় মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করবেন। পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ, লবণাক্ততাসহিষ্ণু ঐতিহ্যবাহী এই বনভূমিটি ঠিক যেন জননীরই মতো। বড় মানুষের লোভ এবং ছোট মানুষের প্রয়োজন এই বিশেষ ঐতিহ্যবাহী, কল্যাণ ও মঙ্গলের উৎস বনভূমিকে বিপন্ন করে তুলেছে। এই বনভূমির যেন ক্ষতি না হয় সেজন্য সকলপ্রকার উন্নয়ন কার্যক্রমেই আমরা মহা হুঁশিয়ার থাকবো।
বস্তুত: সকলপ্রকার উন্নয়নেই আমরা পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনা সুনিশ্চিত করবো। কার্বন নিঃসরণের দৈত্যকে আমরা বধ করবো।
বিদ্যুৎ আমাদের চাই। অবশ্যই চাই। তবে নিশ্চয়ই বাংলাদেশের বিনিময়ে নয়। কখনো যদি প্রশ্ন ওঠে, তুমি বিদ্যুৎ নাকি বাংলাদেশ, যে কোন একটি নিতে পারবে, তাহলে উত্তরে অবশ্যই আমরা সমস্বরে বলে উঠবো ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’। বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশীপ কোম্পানি দেখলাম এক বিশাল যুক্তির বহর দিয়েছে আজকের পত্রিকায়। তর্কের খাতিরে সব মেনে নিলাম। কয়লা ঢেকেঢুকে নিয়ে আসা হবে। কালো নয় সব সাদা ধূঁয়া থাকবে। বিশাল উঁচু চিমনি থাকবে। অন্য কাউকে ‘উন্নয়নবিরোধী’, ‘দেশবিরোধী’ বলার আগে হে কোম্পানি, একটু ভেবে চিন্তে কথা বলুন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিতর্ক যখন উঠেছেই, কী এমন ক্ষতি-বৃদ্ধি হয়, যদি শুধুমাত্র আরও দশটি কিলোমিটার পিছিয়ে সুন্দরবন থেকে চব্বিশ কিলোমিটার দূরে বিদ্যুৎপ্রকল্পটি নিয়ে আসা হয়। এটা নিয়ে জেদাজেদি না করে মানুষের মনের সন্দেহ দূর করে দিননা। ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ তাহলে যে ‘চ্যাম্পিয়ন অব হার্ট’ হিসাবেও ইতিহাসে উল্লেখিত হয়ে থাকবেন। বর্তমান বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিকল্পিত রামপালের জায়গাটিতে একটি সোলার প্ল্যান্ট বসিয়ে বিকল্প বিদ্যুতের আয়োজন করুন। প্রতিবাদীদের মাথায় লাঠি ভেঙেতো যুক্তি প্রতিষ্ঠিত করা যাবেনা হে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
এবার হে ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’, কথা বলছি আরেকটি সংবেদনশীল ইস্যু নিয়ে। পৃথিবীর সব শক্তিশালী উজান অঞ্চলের একই ধর্ম। ভারত আমাদের শক্তিশালী উজান দেশ। সুতরাং অভিন্ন নদী নিয়ে আমরা ভয়ংকর সংকটে আছি। গণচীন ভারতের শক্তিশালী উজান দেশ। সেখানে ভাটির ভারতও সংকটে পড়ছে নিয়ত। জানি বড় প্রতিবেশীকে বিক্ষুব্ধ রেখে পথ চলা বুদ্ধিমানের-বুদ্ধিমতীর কাজ নয়। তবুও জানি, সবশেষে আপনার দৃঢ় মেরুদ- ক্লিন্টন দম্পতিকে চিরশত্রু বানিয়ে দিয়েছে। ভারতের সঙ্গেও আপনি ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাবার পথ পছন্দ করেননা। টিপাইমুখ বাঁধের প্রশ্নে ভারত অনেক চাপ দিলেও কূটনীতির কৌশলে আপনি তা ঠেকিয়ে রেখেছেন অনেক বুদ্ধি করে। বাংলাদেশের জনগণও ভারতকে আপাত নিরস্ত করতে সক্ষম হয়েছে।
কিন্তু থলে থেকে ভারত পুনরায় তাদের আন্তঃনদী সংযোগের বেড়ালটি বের করছে। আমাদের বাংলাদেশের পানির অর্ধেকের উৎস ব্রহ্মপুত্র। তিনভাগের একভাগের উৎস গঙ্গা। ভারত ঐ প্রকল্প দিয়ে ব্রহ্মপুত্র-পদ্মার পানি দক্ষিণ ভারতে নিয়ে যেতে চায়। ঐ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে।
হে চ্যাম্পিয়ন, আপনি বুদ্ধি ও কূটনীতি দিয়ে লড়ুন। আমরা পিয়ন-পানিসংগ্রামীরা হাজারে হাজারে আছি মাঠে ময়দানে। যেভাবে টিপাইমুখ বাঁধ ঠেকিয়েছি, সেভাবেই ঠৈকাতে হবে ভারতের পুনঃবেড়াল আন্তঃনদী সংযোগ নামের মহা তোঘলকী প্রকল্প। বিনীত ইতি।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)