বাংলা সংগীত জগতের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব কুমার বিশ্বজিৎ। অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান তিনি উপহার দিয়েছেন। তবে তিনি শুধু কণ্ঠশিল্পীই নন, একাধারে গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। গানের জন্য একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই শিল্পীর গাওয়া ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে’, ‘তুমি রোজ বিকেলে’ কিংবা ‘ভিটা নাইরে’র মতো গান এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে! করোনাকালীন এই কঠিন সময়ে অন্যসবার মতো তিনিও পরিবার ও দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এজন্য কাজও করছেন না। তারপরও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা থেকেই সম্মুখযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাতেই একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। নতুন সেই গান ও এই সময় নিয়ে কথা বললেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে:
এই সময়ে কেউ আসলে ভালো নেই, নানা শঙ্কায় মানুষের মন। আপনি কেমন আছেন?
ওই সবার মতোই আমিও আছি। এরমধ্যেতো আমার পরিবারেরও অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হলো। আমার ছোট বোন, তার হাজব্যান্ড, আমার স্ত্রীর বড় ভাই। তো সব মিলিয়ে এক ধরনের দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে আসলে। আমার স্ত্রীও করোনার জন্য আমেরিকায় আটকে আছে, দেশে ফিরতে পারছে না। এসব নানা শঙ্কার মধ্যে নিজেকে ফিট রাখার চ্যালেঞ্জ, শারীরিক ও মানসিকভাবে! বলা যায়, এক ধরনের যুদ্ধাবস্থার মধ্যেই আছি। মেন্টালি এক ধরনের ডিপ্রেসনতো আছেই।
করোনায় এ অবস্থার মধ্যেও অনেকে টুকটাক কাজ করছেন। শুনছি আপনারও একটি গান আসছে সামনে?
টুকটাক কিছু কাজতো আসলে করেছিই। যে কাজটার কথা শুনছেন, সেটা আসলে একদম আমার নিজের কমিটমেন্ট এর জায়গা থেকে করা। ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সম্মুখযোদ্ধাদের নিয়ে গানটি করেছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই করোনাকালীন সময়ে যে মানুষগুলো আমাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই মূলত এই উদ্যোগ। চিরকুটের ইমনের কম্পোজিশন দারুণ হয়েছে। আমাদের ভয়েস নেয়া শেষ। এখন বাকি কাজ শেষ হলেই গানটি সবাই দেখতে ও শুনতে পারবেন।
এছাড়া সামনে আপনার সলো কোনো কাজ শ্রোতা দর্শক পাবেন?
আসলে করোনার কারণে আমি একটু সেফটি মেইন্টেন করছি। স্টুডিও আমার নিজেরই, কিন্তু দুই পক্ষেরই সাবধানতার কথা বিবেচনা করে এই সময়ে বাইরের রেকর্ডিস্ট আনতে চাচ্ছি না। এই সময়টাকেই আসলে আমার কাছে সিকিউরড মনে হচ্ছে না। আর এ কারণে অনেকগুলো কাজ আমি করতেও পারিনি, আর সেইভাবে নন প্রফেশনালি কাজ করাটা আমার পছন্দও নয়। কারণ এই জায়গায় এসে যেন তেন প্রকারে কাজ করাটা আমি মনে করি না আমার জন্য উচিত হবে। ক’দিন পরেই হয়তো এই ক্রান্তিকালটা চলে যাবে, তখন হয়তো আমার নিজের কাছেই ওই কাজটিকে যাতনা মনে হবে যে, ওই কাজটি আমি কেন করলাম! এজন্য আপাতত কাজ করছি না। সামনে হয়তো অবস্থা স্বাভাবিক হলে আমিও স্বাভাবিক পদ্ধতিতে কাজ করবো।
সিনেমার পাশাপাশি এখন সিনেমার গানেরও সমালোচনা হয়। আগের মতো এখন সিনেমার গানও হচ্ছে না। এই অবস্থা কেন সৃষ্টি হলো। আপনার পর্যবেক্ষণ কী বলে আসলে?
আমি একটা কথাই বলতে চাই, যেটা নিয়ে প্রেডিকশান বা বিশেষ পর্যবেক্ষণের দরকার নাই। সংগীত এমন একটা জিনিষ, এটা সময়ই বলে দিবে যে সেই সৃষ্টিটা কতোটুকু যোগ্য! এখানে মনে হয় না আর কিছু বলার আছে। এটা সৃষ্টিশীল একটি মাধ্যম। সৃষ্টি যদি সেই মানের হয়, সে যোগ্যতার হয়- তাহলে সময়ই নির্ধারণ করে দিবে সেই সৃষ্টির প্রাপ্তি কতোটুকু, যোগ্যতা কতোটুকু।
এই সময়ে গানের কপিরাইট সংক্রান্ত আইনগুলো নিয়ে মাঝেমধ্যেই কথা উঠছে। এ ব্যাপারগুলো সংগীতের জন্য কতোটা মঙ্গল বয়ে আনবে বলে মনে করেন?
এটা তো দারুণ ব্যাপার। যিনি সৃষ্টি করবেন, তার রাইট থাকবে না- তা কী হয় নাকি! অবশ্যই এগুলো একটা সিস্টেমের মধ্যে আসা উচিত। কারণ শিল্প সংস্কৃতির লোকজন সব সময়ই অবহেলিত হয়। অথচ তার সৃষ্টিই কিন্তু তার সম্পদ, তারা যদি তাদের সৃষ্টির সেই ফসল বংশ পরম্পরায় না পায়, তাহলে তো সেই সৃষ্টির ভেল্যু থাকলো না। একজনের সৃষ্টির ফসল আরেকজন ভোগ করবে, এটাতো মস্ত অন্যায়। তাই আমিও মনে করি, এসবকিছু একটা সিস্টেমে আসা উচিত। এটাকে আমি সাধুবাদ জানাই।