বেশ কিছুদিন ধরে দেশে ভাস্কর্য ও মূর্তি বিষয়ক বিতর্ক চলছে। মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য করার পর দেশজুড়ে এর প্রতিবাদ শুরু হয়। এই প্রতিবাদ বিক্ষোভ যখন একটি আন্দোলনের গতি পাবে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে স্থাপিত মধুদার ভাস্কর্য গতরাতে কে বা কারা ভাঙ্গার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে। তারা ভাস্কর্যের কান ভেঙ্গে ফেলে। রাতেই বিষয়টি জানতে পেরে ভাস্কর্যের ভেঙে ফেলা অংশটি পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল টিমের একজন সদস্য জানিয়েছেন: মধুদার ভাস্কর্যের অংশবিশেষ ভাঙার বিষয়টি নজরে আসার পর প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীকে জানানো হয়। পরে প্রক্টরিয়াল টিমের কয়েকজন সদস্য এসে ভাস্কর্যের ভাঙা অংশটি পুনঃস্থাপন করেন। তবে প্রক্টরের ভাষ্যমতে, মধুর ক্যান্টিনের সামনে উপস্থিত ব্যক্তিরাই কানটি পুনঃস্থাপন করেছেন। মধুসূদন দে, যিনি ‘মধুদা’ নামেই পরিচিত, ছিলেন মধুর ক্যান্টিনের প্রতিষ্ঠাতা। মধুদা সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাকে হত্যা করে। মধুদার স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সামনে অবস্থিত রেস্টুরেন্টের নামকরণ করা হয় ‘মধুর ক্যান্টিন’।
মধুদার ভাস্কর্যে আঘাত ও কান প্রতিস্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন: এমন একটি তথ্য আমার কাছে এসেছে। মধুর ক্যান্টিনের সামনে উপস্থিত লোকজনই ভাস্কর্যটির কান প্রতিস্থাপন করেছেন।
মধুর ক্যান্টিনের একজন কর্মচারী জানান: গতকাল পৌনে আটটার দিকে তাঁরা মধুদার ভাস্কর্যের অংশবিশেষ ভাঙা দেখতে পান। পরে প্রক্টরকে বিষয়টি জানানো হয়। রাত নয়টার পর প্রক্টরিয়াল টিম এসে ভাস্কর্যের ভেঙে ফেলা অংশটি লাগিয়ে দিয়ে যায়। মধুসূদন দে স্মৃতি ভাস্কর্যটি মধুর ক্যান্টিনের সামনে থাকা গোলঘরের জানালার ঠিক পাশেই অবস্থিত। তবে শুরুতে ভাস্কর্যটি ক্যান্টিনের একটি দরজার সামনে স্থাপন করা হয়েছিল। ১৯৯৫ সালের ১৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এমাজউদ্দিন আহমদ ভাস্কর্যটির প্রথম উদ্বোধন করেন। বর্তমান অবস্থানে ভাস্কর্যটির পুনর্নির্মাণের পর ২০০১ সালে এটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন উপাচার্য এ কে আজাদ চৌধুরী। ভাস্কর্যটির ভাস্কর তৌফিক হোসেন খান।
স্বাধীনতা বিরোধি মৌলবাদী গোষ্ঠী বাংলাদেশের কৃষ্টি সংস্কৃতি ধ্বংসের জন্য প্রথম থেকেই মুখিয়ে আছে। দেখা যায় প্রতি বছর সনাতন ধর্মালম্বীদের দুর্গাপূজার সময় দেশের বিভিন্নস্থানে বিভিন্ন উছিলায় মূর্তি ভাঙ্গার উৎসব চলে। এগুলোর মধ্য দিয়ে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনে ভীতি সঞ্চার করতে চায়। দেশকে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় একটি গোষ্ঠী। তারই ধারাবাহিকতায় তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে ধৃষ্টতা দেখাতে পেরেছে। গতরাতের ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি এইসব ধর্মীয় মৌলবাদীদের প্রকাশ্যে আস্ফালনের কারণে ঘটেছে। আমরা এই বিষয়ে সরকার ও তার সংশ্লিষ্ট মহলকে গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখার আহবান করছি। মধুদার ভাস্কর্য ভাঙ্গা কাদের মদদে, কারা করেছে তদন্ত করে বের করতে হবে। এবং এই সংশ্লিষ্ট দোষীদের কঠিন সাজা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। নতুবা ভবিষ্যত বাংলাদেশের চিত্র পাল্টে যেতে পারে। যা মহান স্বাধীনতার মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল।