চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হওয়াদের মুক্তির দাবিতে রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এখানেই থেমে থাকেনি তারা, ওই কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককেও লাঞ্ছিত করে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগি এ সংগঠনটি।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি এবং ভিডিও চিত্রে সেই হামলার স্পষ্ট চিত্র উঠে এসেছে। সেই হামলায় কারা ছিল, তাদের পরিচয়ও স্পষ্ট। আমরা সেখানে দেখলাম; আঙ্গুল উঁচিয়ে মানববন্ধনে আসা শিক্ষকদেরকে শাসাচ্ছে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীরা। তাদের এমন আচরণে শেষ পর্যন্ত সেইসব শিক্ষক বাধ্য হন ওই এলাকা ছাড়তে।
এই হামলা নিয়ে সেখানে উপস্থিত একজন শিক্ষক অধ্যাপক ড. আব্দুর রাজ্জাক খান বলেছেন, ‘ছাত্রলীগ যেটা করছে এটা তাদের আদর্শের সাথে খুবই সাংঘর্ষিক। আমার মনে হয় ছাত্রলীগের এদের মধ্যে সক্রিয় শিবির আছে যারা এই সংগঠনের ঐতিহ্য নষ্ট করতে চায়। শেখ হাসিনার অর্জন ডুবাবে এরা।’
আমরা অনেকদিন ধরেই ছাত্রলীগের মধ্যে দেশের স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন জামায়াত শিবিরের অনুপ্রবেশের কথা শুনে অাসছি। এমনকি কয়েক বছর আগে আওয়ামী লীগের তৎকালীণ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও একাধিকবার একই দাবি করেছেন। এখন এদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সেই দাবিকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে মূল সংগঠন আওয়ামী লীগকে কোনো শক্ত পদক্ষেপ নিতে আমরা দেখিনি।
আজকে এমন একটা স্থানে তারা শিক্ষকদেরকে লাঞ্ছিত করেছে, যে স্থানের সঙ্গে আমাদের মাতৃভাষা অর্জনের সংগ্রামের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। দেশের বহু গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। অথচ সেই স্থানেই আজকে আমাদের শিক্ষকদের লাঞ্ছিত হতে হয়েছে; এরচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কি হতে পারে?
ওই ঘটনার পর সেখানে উপস্থিত আরেকজন শিক্ষক অধ্যাপক ফাহমিদুল হক ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। তার লেখায় উঠে এসেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত শিক্ষকদের কিভাবে বিশ্রী-অশ্লীল সব শব্দ ব্যবহার করে তাদেরকে স্বাধীনতাবিরোধী, জামায়াত-শিবিরের দোসর হিসেবে মন্তব্য করতে থাকে। এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রো প্রক্টরিয়াল টিমের সাথে যোগাযোগ করেও সাহায্য পাননি। উল্টো শিক্ষকদের ওপরই ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির’ জন্য দোষ চাপিয়েছে প্রক্টর।
একজন শিক্ষক তার কর্তৃপক্ষের কাছে নিরাপত্তা চেয়েও পাচ্ছেন না, এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়। তাহলে কী কোনো শিক্ষক অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারবেন না? নির্যাতিত শিক্ষর্থীদের পক্ষে দাঁড়ালেই কোনো শিক্ষক স্বাধীনতাবিরোধী হয়ে যাবেন? বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী হয়ে যাবেন?
আমরা জানি, যে শিক্ষকের কাছ থেকে প্রতিদিন জ্ঞান নিয়ে একজন শিক্ষার্থী সমৃদ্ধ হন, সেই শিক্ষার্থী কোনো শিক্ষকের সাথে এমন ধৃষ্টতা দেখাতে পারেনা। আমরা মনে করি, এখনই এসব ছাত্র নামের কলঙ্ককে ছেঁটে ফেলতে হবে। না হলে জাতিকে এর চরম মাশুল দিতে হবে।