ঋণ খেলাপি বেড়ে যাওয়ার পেছনে ব্যাংকারদের হাত রয়েছে বলে মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, খেলাপি ঋণের অনবরত পুনঃতফসিল (রিশিডিউলিং) হওয়ায় ঋণ খেলাপি বাড়ছে।
রোববার রাজধানীর তোপখানা রোডে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) মিলনায়তনে পাঁচ দিনব্যাপী রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংক পরিচালকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, খুব ভালো কথা নয়, কিন্তু আমি সে কথাটি বলতে চাই। আমার ধারণা যখনই কোনো একটা প্রকল্প বা উদ্যোক্তাকে একটি ব্যাংক ঋণ দেবে বলে ঠিক করল, তখন তাকে ঋণের প্রথম কিস্তি হয়তো দিয়ে দেয়া হলো। তারপর থেকেই ব্যাংকাররা চেষ্টা করেন যাতে সে (উদ্যোক্তা) ঋণ খেলাপি হতে পারে।
মুহিত বলেন, আমার মনে হয় ব্যাংকারদের এটা একটা অস্ত্র। যেটা ব্যবহার করেন এবং করতে চান। এই লক্ষ্যটা অত্যন্ত খারাপ লক্ষ্য।
ব্যাংকারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার একটা উপদেশ হচ্ছে এ লক্ষ্য থেকে আপনারা বিরত থাকবেন। আল্লাহর ওয়াস্তে কিছু করেন এ ব্যাপারে। আপনাদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন রয়েছে।
খেলাপি ঋণ অনবরত রিশিডিউলিং হয় উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, জানি না কত বার রিশিডিউলিংয়ের সুযোগ আছে। কিন্তু মনে হয় ব্যাংকাররা এটা অনবরত করতে থাকেন। এটার লাগাম টানা দরকার। অনেক ক্ষেত্রে অবসায়ন হলো সব থেকে ভালো সমাধান। কিন্তু সেটা হয় না। কারণ আপনি চান সে আপনার বাধ্য থাকুক।
অর্থমন্ত্রী বলেন, একসময় ব্যাংকিং খাত সরকারি ছিল। কিন্তু এখন এ খাত ব্যক্তিমালিকানায় অনেক প্রসারিত। এর সিংহভাগ ব্যবসা ব্যক্তিমালিকানা খাতেই হয়ে থাকে। একসময় ছিল সোনালী ব্যাংক সবচেয়ে বড়। এখন আর সেটা নেই। ইসলামী ব্যাংকই মনে হয় সর্বত্র বিরাজ করেছে। তার মানে গত কয়েক বছরে ব্যাংকিং খাত ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।
ব্যাংকিং খাত নিয়ে অনেক সমালোচনা-আলোচনা রয়েছে উল্লেখ করে মুহিত বলেন, অনেকেই বলতে চান-এ খাতটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, অনেকেই এটাকে এখন দুর্বল খাত হিসেবে বিবেচনা করেন। আর একটি কথা বলা হয়-আমাদের এখানে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি। সরকারিসহ ৬৩টি ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ সরকারি ব্যাংক। এটি আরও একটি সমালোচনা।
খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ব্যাংকিং খাত নিয়ে সবচেয়ে বড় সমালোচনা হচ্ছে খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে মোটামুটি দোষটা সরকারি ব্যাংকের। সেগুলোতেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি।
প্রাইভেট ব্যাংক সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রাইভেট ব্যাংক সে রকম হয়নি। তবে প্রাইভেট খাতে আরেক রকম ফাঁকিবাজি রয়েছে। প্রাইভেট খাতের এক ব্যাংকের পরিচালক সমঝোতার মাধ্যমে অন্য ব্যাংক থেকে লোন নেন। তিনি তার নিজের ব্যাংক থেকে ঋণ নেন না। এইটা নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কষ্টকর। তবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। এই জন্য উপায় বের করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটা হয়নি।
মুহিত বলেন, আমাদের দেশে ব্যাংক অবসায়ন বা একীভূতকরণ একেবারেই ছিল না। এক্ষেত্রে একটি আইন হয়েছে। তবে আইনটি খুব উপযুক্ত নয়। ব্যাংক একেবারেই বন্ধ না করে দিয়ে একীভূতকরণ করা যেতে পারে। এটা খুব ভালো হবে।
অনুষ্ঠানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির উপস্থিত ছিলেন।