বাংলাদেশের উৎসবগুলোতে ভারতীয় বাংলা ও হিন্দী, পাকিস্তানি সিনেমা প্রদর্শন না করার আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট। গত বুধবার সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে যৌথ বেঞ্চে আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার এই নির্দেশ দেন। সেখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, দুই ঈদ, পূজা ও পয়লা বৈশাখে ভারতের বাংলা ও হিন্দি ছবি এবং পাকিস্তানি ছবি আমদানি করা যাবে না।
তবে সরকারি নীতিমালা সঠিকভাবে মেনে যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ করা হয়, সেসব উৎসবে মুক্তি পাবে। এছাড়াও বিদেশি অন্যান্য ছবি আমদানির ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। সুপ্রিমকোর্টের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এফডিসির ১৮ সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত চলচ্চিত্র পরিবার।
সিদ্ধান্তে আনন্দিত চলচ্চিত্র পরিবারের আহ্বায়ক ও মিয়া ভাই খ্যাত অভিনেতা ফারুক। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: আমি তো চলচ্চিত্র পরিবারে কনভেনার। ওই হিসেবে অবশ্যই আমি সুপ্রিমকোর্টের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। এটা শুধু আমি না, আমাদের দেশিয় মন মানসিকতার মানুষ যারা তাদের জন্য খুব ভালো হবে। আমাদের বড় বড় যে ফেস্টিভালগুলো আছে এবং জাতীয় উৎসবগুলোতে এক্সপোর্ট-ইম্পোর্টের ছবিগুলো না চলায় ভালো। এটা আগে থেকেই এরকমটা আমি বলে আসছি।
কিংবদন্তী এই চলচ্চিত্র অভিনেতা আরও বলেন, যৌথ-প্রযোজনার ছবি চলতে পারে। কেনো না তাতে উভয় দেশেরই সংস্কৃতিটা থাকবে এবং বাঙালিপনাটা থাকবে বেশি।
আদালতের এমন নির্দেশনার পরও আসছে ঈদে কোনো ফাঁক ফোকরে আমদানি ছবি মুক্তি পাওয়ার সুযোগ আছে কিনা? এমন প্রশ্নে ফারুক আরো বলেন: কেইস, কোর্ট আর আইন এগুলোতো আমার না। এগুলো আইনের ঘরের কথা। জাজমেন্টের কথা। আমরা আইনকে সৎভাবে, সুন্দরভাবে শ্রদ্ধা করে থাকি। আইন যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে এটাকে আমরা শ্রদ্ধা করি। আমরা স্বাগত জানাই। এবং এই আইন যদি অন্য কিছুও বলে তবেও আইনকে সর্বদা আমরা শ্রদ্ধা করবো।
চলচ্চিত্র পরিবারের সদস্য সচিব ও পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন বলেন, মহামান্য আদালত আমাদের দেশের চলচ্চিত্রকে বাঁচানোর জন্য বিবেচনা করেছেন এবং সঠিক রায় দিয়েছেন এতে আমরা খুশি। আমি আশা রাখছি, সুপ্রিমকোর্টের এই সিদ্ধান্ত মেনেই এসেছে ভারতীয় বাংলা ও পাকিস্তানি ছবি আসবে। আদালতের সিদ্ধান্তকে কেউ অমান্য করবেন না। এতে আমাদের দেশীয় ছবির সার্বিক উন্নতি হবে।
চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির নেতা ও চলচ্চিত্র পরিবারের অন্যতম সদস্য খোরশেদ আলম খসরু বলেন, সাফটায় সার্কভুক্ত দেশের জন্য শিক্ষামূলক, শিশুতোষ, কালচারাল ও ঐতিহাসিক, খেলাধুলা বিষয়ক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা উচিত। বিভিন্ন দেশের সামাজিকতা জানার জন্য সাফটায় ছবি প্রদর্শন করা উচিত। কিন্তু সেটা না হয়ে বলো দুগ্গা মাঈকী, কেলোর কির্তী, জিও পাগলা, ইনসপেক্টর নোটি কে’র মত ছবি প্রদর্শন হচ্ছে। সাফটার উদ্দেশ্য তো বাণিজ্যিক ছবি প্রদর্শন নয়।
তিনি বলেন, অনেক দেরিতে হলে বিজ্ঞ আদালত বিষয়টি বুঝে উৎসবে মুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। খুব ভালো সিদ্ধান্ত এটা। আর যৌথ প্রযোজনায় ছবি তো আমাদের দেশে বহু আগে থেকেই হয়ে আসছে। এটাকে সাধুবাদ জানাই। নিয়ম মেনে আরও বেশি যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ হোক। এতে দু-দেশের শিল্পী, টেকনিশিয়ানরা কাজের সুযোগ পাবে।
গত ১০ মে নিপা এন্টারপ্রাইজের মালিক সেলিনা বেগমের করা এক রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, পূজা ও পয়লা বৈশাখের সময় ভারতীয় বাংলা ও হিন্দি, পাকিস্তানি ছবিসহ বিদেশি ছবি এবং যৌথ প্রযোজনার ছবি আমদানি ও প্রদর্শন বন্ধের আদেশ দেন। এরপর ওই আদেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ আপিল বিভাগে আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ কিছুটা সংশোধন করে আদেশ দিলেন।