চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

উৎসবের এত রং!

বিশ্বকাপ দিনলিপি-৩

কেনিংটন ওভাল থেকে: মাঠের ভেতর ম্যাচের উত্তেজনা বাইরে উৎসবের নানা রং। যেন মেলা বসেছে দ্য ওভাল স্টেডিয়ামের চারপাশে। এই মেলা এতটাই বিচিত্র যে ঘুরে ঘুরে কেবল দেখতেই ইচ্ছে করবে। বাহারি সব আয়োজনে একবার করে দৃষ্টি রাখতেই কেটে যাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

বিশ্বকাপ ঘিরে এবার আইসিসি নিয়েছে নানা ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। ফুলের বাগানের মতোই সাজানো গোছানো তাদের আয়োজন। এককথায় অসাধারণ ব্যবস্থাপনা। এখানে চাইলে আপনি খেলতে পারবেন ভার্চুয়াল ক্রিকেট। করতে পারবেন ব্যাটিং-বোলিং। ইলেকট্রনিক ডিভাইসের চশমা চোখে লাগিয়ে হাতে রিমোট চেপে মাতাবেন মাঠের ২২ গজ। ক্রিকেটের থ্রিডি ভার্সন।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

ক্রিকেট খেলতে ভালো না লাগলে রাবারের বল ছুঁড়ে ফেলতে পারেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গর্তে। আরও কত কী! এসব উপভোগ করতে কোনো পাউন্ড খরচ করতে হবে না। খেলে কেমন লাগল সেই অনুভূতি কেবল একটু শেয়ার করলেই আইসিসির কাজে নিয়োজিত কর্মীবাহিনী বেজায় খুশি হয়ে যাবেন। এবারের বিশ্বকাপে ‘ক্রিকেট ফর গুড’ কথাটা কেনো ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে তা উপলব্ধি করা সহজ হয়ে যাবে খেলার ফাঁকে স্টেডিয়ামের বাইরে এক চক্কর দিয়ে এলেই।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ের মাঝামাঝি সময়ে স্টেডিয়ামের বাইরে আমার যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে ঢোকার সময় দেখেছি বাংলাদেশ ও আরও চারটি দেশের ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ জার্সি, ক্যাপ বিক্রি হচ্ছে একটি দোকানে। অফিসের কাজে সেই ছবি চ্যানেল আই অনলাইনের সিক্রেট গ্রুপে পোস্ট করতেই এডিটর জাহিদ নেওয়াজ খান কমেন্টে বক্সে লিখলেন, ‘৯৯ বিশ্বকাপের অফিসিয়াল পাবলিকেশনটা আছে ওখানে? আমার একটা লেখা ছিল। চেক করো প্লিজ’।

প্রকাশনাটি পেলে কিনব ভেবেই বাইরে যাওয়া। সেটি না পেয়ে হতাশ লাগলেও যাতায়াতে যে সময়টা গেছে তা ছিল রোমাঞ্চকর। ক্রিকেট বিশ্বকাপ ঘিরে উৎসব যে এতটা রঙিন হতে পারে সে ধারণাই ছিল না। ফুটবল বিশ্বকাপ কিংবা অলিম্পিক গেমসের মতো মহাযজ্ঞ না হলেও ক্রিকেটের জন্য যতটুকু দরকার তার চেয়ে ঢের বর্ণিল আয়োজন এখানে।

বিদেশবিভূঁইয়ে প্রথমবার, বিশ্বকাপ কাভার অভিজ্ঞতায়ও নবীন। পেশাদারি পারফরম্যান্সের ব্যাপারটা ব্র্যাকেটবন্দী করে রাখলে আমার অভিষেক হয়েছে বেশ আনন্দঘন। বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারলে পেয়ে যেত পূর্ণতা।

ওভালে আমার অভিষেক নিয়ে জমেছিল অনিশ্চয়তার মেঘ। ভাগ্য সহায় না হলে এই উৎসব থেকে বঞ্চিতই হতে হত। শত বাধা পেরিয়ে বিশ্বকাপ কাভার করতে আসার রোমাঞ্চকর অনুভূতি হঠাৎ উবে গিয়েছিল মঙ্গলবার ওভালে এসে। প্রেসবক্সে বসে ম্যাচ প্রিভিউ লেখার সময় মেইল চেক করে জানতে পারলাম ম্যাচ ডে-তে এখানে কাজ করার অনুমতি নেই আমার। তা দেখে তো চক্ষু চড়কগাছ। বাধা যেন শেষ হতেই চায় না!

বাংলাদেশ দলের সঙ্গে থাকা বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমামের পরামর্শে ভেন্যুর মিডিয়া ম্যানেজার ম্যারি’কে অনুরোধ করলাম। দুই ঘণ্টা অনিশ্চয়তায় রাখার পর শেষবেলায় জানালেন, তুমি কালকের ম্যাচ কাভার করতে পারবে। তবে ঠিক কোথায় বসবে সেটি এখনই জানাতে পারছি না। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই ইংল্যান্ডে আসা সারাবাংলাডটকমের কলিগ হিল্লোল ভাই (মহিবুর রহমান) আমার হয়ে ম্যারিকে দুইবার অনুরোধ করেছেন। ওভালে আসা পর্যন্ত কত মানুষের আন্তরিক সহযোগিতা যে পেয়েছি তা হিসেবে করে বলা কঠিন। বিশ্বকাপ শেষ হওয়া পর্যন্ত হয়ত হয়ে যাবে অগণিত।

ঐতিহ্যে আধুনিক ওভাল স্টেডিয়ামের কথা অল্পসময়ে বর্ণনা করা খুবই কঠিন। ছবির মতো সুন্দর যার ভেতর-বাহির। পরতে পরতে লুকিয়ে ক্রিকেট ইতিহাসের নানা অধ্যায়। লন্ডনের ঐতিহ্যের টাওয়ার ব্রিজ ধরেই যেতে হয় দ্য ওভাল স্টেডিয়ামে। অদূরেই লন্ডনের হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী টেমস নদী।

স্টেডিয়ামটির বয়স ১৭৪ বছর। একসময় এখানে খেলা হতো ফুটবল ও রাগবি। পরে কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব সারে স্টেডিয়ামটি অধিগ্রহণ করে নেয়। ১৮৮০ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে হওয়া প্রথম টেস্ট এখানেই অনুষ্ঠিত হয়। যেটি ক্রিকেট ইতিহাসের চতুর্থ টেস্ট ম্যাচ। আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ফ্লাডলাইটে গড়ানোর বেশ আগেই সারে বেশ কয়েকটি সীমিত ওভারের ম্যাচ ফ্লাডলাইটের সাহায্যে পরিচালনা করে। ১৮৮৯ সালের পর গ্যাসের আলোর সাহায্যে দিবা-রাত্রির খেলা আয়োজন করেছে তারা। এমন ঐতিহাসিক এক ভেন্যুতেই আমার বিশ্বকাপ অভিষেক!