সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পর গণমাধ্যমেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর নাসিরনগরে হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের এক যুবকের ফেসবুক পেজে একটি আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করা হয়। যুবকটি পরে ফেসবুক পোস্টে জানায়, অন্য কেউ এ কাণ্ড ঘটিয়েছে, কিন্তু তার পেজ থেকে এরকম হওয়ায় তিনি মুসলিমদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। তার পরের পোস্টের খবর না রেখেই নাসিরনগর উত্তাল হয়ে উঠে। এ অবস্থায় রোববার সকালে কলেজ মোড়ে আহলে সুন্নাতের নামে উপজেলা সদরের কলেজ মোড়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ ডাকা হয়। সমাবেশ চলাকালে দুর্বৃত্তরা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির এবং বাড়িঘরে হামলা চালায় এবং ব্যাপক ভাংচুর করে। এ ঘটনার পর প্রায় একশ হিন্দু পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। পরদিন মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় প্রায় দু’হাজার জনকে আসামি করে দু’টি মামলা হয়েছে। ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত আট জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনা তদন্তে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন দু’টি তদন্ত কমিটি করেছে। এর অনেক আগেই– ছবি পোস্ট করার পরদিনই– স্থানীয়রা ওই যুবককে পুলিশে সোপর্দ করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ঘটে যাওয়া হামলার মতো ঘটনা দেশে এই প্রথম না। এই ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই অতীতে এরকম ঘটনা ঘটেছে। অতীতে দেশের অন্য জায়গাতেও অন্য ধর্মের উপাসনালয়ে ভাংচুর হয়েছে, প্রতিমা ভাঙ্গা হয়েছে, সংখ্যালঘুদের সম্পদ লুট ও সম্পত্তি দখল করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এবারের ঘটনাতেও আমরা এরকম লুটপাট প্রত্যক্ষ করেছি। এর মানে, ধর্মকে ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠি তাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করে। প্রতিটি ঘটনার পর নিয়ম ও আইন অনুযায়ী মামলা এবং তদন্ত কমিটি হয়। প্রশ্ন হচ্ছে বিচার কতোদূর? এ পর্যন্ত একটি ঘটনাতেও কি বিচার সম্পন্ন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়েছে? বিচারহীনতার কারণে একই ধরণের ঘটনা আমরা বার বার ঘটতে দেখেছি। এসবই ঘটছে যখন বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। বিশ্ববাসী সেই ম্যাজিকটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে, যে ম্যাজিকের জোরে দক্ষিণ এশিয়া তথা সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তিগুলোকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ। ইন্টারনেটের অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে কোন তথ্যই দেশের গণ্ডির ভেতরে আটকে থাকছে না। ঝড়-ঝঞ্ঝার দেশ বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হলেও সে পরিচয় ছাপিয়ে পরিচিতি পাচ্ছে পরমত অসহিষ্ণু মানুষের দেশ হিসেবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে উন্নয়নের মহাসড়কে চলতে গিয়ে আমরা কতোটা মানবিক থাকছি?