প্রতি বছর ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সকল সদস্যভূক্ত দেশে পালিত হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। ‘উন্নয়নের মহাসড়কে, অভিবাসীরা সবার আগে’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযথভাবে উদযাপিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার ও জাতীয় দৈনিক সমূহে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে দিন ব্যাপী র্যালি, আলোচনা সভা, ২০১৫ সালের জন্য নির্বাচিত সিআইপিগণের সম্মাননা প্রদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেমিনার, বিশেষ সুভেনীর প্রকাশ, বির্তক প্রতিযোগিতা, অভিবাসন মেলা, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীর সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় ইত্যাদি অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও উন্নত জাতি গঠনে অভিবাসীরা গর্বিত অংশীদার।
আর প্রধানমন্ত্রনী বলেছেন, বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে অভিবাসী কর্মীদের অবদান অপরিসীম।
বর্তমানে বিশ্বের ১৬১টি দেশে বাংলাদেশের প্রায় এক কোটির অধিক কর্মী কর্মরত আছেন। দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় করার প্রত্যয়ে অভিবাসী কর্মীরা যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, সে অনবদ্য অবদানকে মূল্যায়ন করাই এ দিবেসের উদ্দেশ্য।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইএসও’র হিসাব মতে, বিভিন্ন পথে এবছর সর্বাধিক অভিবাসী প্রাণ হারিয়েছেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের হিসেবে ৪ হাজারের বেশি অভিবাসীর মৃত্যু হয়।
চলতি বছরকে অভিবাসীদের জন্য কঠিনতম উল্লেখ করে বাণীতে তিনি বলেছেন, ‘এই আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে আমি শান্তি, সমৃদ্ধি, মর্যাদা এবং সবধনের সুযোগসহ একটি বিশ্ব গড়তে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে, নিরাপদ এবং সুশৃঙ্খল মাইগ্রেশনের জন্য বৈশ্বিকভাবে কাজ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই।’
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৪ ডিসেম্বর, ২০০০ সালে দিনটি বিশ্বব্যাপী উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। মূলতঃ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ব্যাপক হারে অভিবাসন ও বিপুলসংখ্যক অভিবাসীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিকে ঘিরেই এ দিবসের উৎপত্তি।
১৮ ডিসেম্বর, ১৯৯০ সালে সাধারণ পরিষদ অভিবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং তাদের পরিবারের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক চু্ক্তি ৪৫/১৫৮ প্রস্তাব আকারে গ্রহণ করে।
বিশ্বের বহু দেশ, সরকারের সংগঠন কিংবা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা, সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান পালন করে। তন্মধ্যে আলোচনা সভা, পথসভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মানববন্ধন উল্লেখযোগ্য। এ সকল বিষয়গুলোর সবটুকুই অভিবাসীদের উপজীব্য করে অনুষ্ঠিত হয়।
অভিবাসীদের মানব অধিকারের বিষয়ে তথ্যের বিস্তৃতি ঘটানো এবং সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব্ব-সংঘাত থেকে মুক্তি লাভ, অভিজ্ঞতা বিনিময়, অভিবাসীদের রক্ষার লক্ষ্যে নিশ্চয়তা বিধানে রূপরেখা প্রণয়ন ইত্যাদি বিষয়গুলো এতে প্রাধান্য পায়।
১৯৯৭ সাল থেকে ফিলিপিন্স এবং অন্যান্য এশীয় অভিবাসী সংগঠনগুলো দিবসটি পালন করতে শুরু করে। শুরুর দিকে তারা ১৮ ডিসেম্বরকে নির্ধারণ করে এবং অভিবাসীদেরকে ঘিরে ‘আন্তর্জাতিক ঐক্য দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে।
১৯৯০ সালে জাতিসংঘ অভিবাসী শ্রমিক ও দেশে রেখে আসা তাদের পরিবারের নিরাপত্তা রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন করেছিল। এর প্রেক্ষাপটে ১৮ ডিসেম্বর দিনটিকে লক্ষ্য করে মাইগ্রেন্ট রাইটস্ ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন মাইগ্রেন্টস রাইটস্-সহ বিশ্বের অনেক সংগঠন অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষার্থে বৈশ্বিকভাবে প্রচারণা চালায়। অবশেষে ১৯৯৯ সালের শেষার্ধে অনলাইনে ব্যাপক প্রচারণার ফলে জাতিসংঘের মুখপাত্র এ দিবসটিকে ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হন।