চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এহসানকে

এহসান রফিকের ডান চোখের অবস্থা ক্রমে অবনতির দিকে যাচ্ছে, এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে এহসান ও তার পরিবারের সদস্যরা। আঘাতপ্রাপ্ত শরীরের অন্যান্য স্থানের অবস্থা উন্নতি হলেও এহসানের মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে, ডানচোখে ঝাপসা দেখছে। থেমে থেমে জ্বর আসছে । মুখে কিছু দিতে পারছে না, বমি হচ্ছে।

দেশে চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্ট না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের উদ্যোগে দেশের বাহিরে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান এহসানের বাবা রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আই হসপিটাল ও বারডেমে এহসানের চিকিৎসা করিয়েছি, কিন্তু আশ্বস্থ হতে পারিনি। নিজেদের উদ্যোগেই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাইয়ে সংকর নেত্রালয় চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সোমবার বিকেলে পাসপোর্ট পাব, তারপর ভিসার জন্য আবেদন করব।

উল্লেখ্য, নিজের ক্যালকুলেটর ফেরত চাওয়ায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে নির্যাতিত হন দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী এহসান রফিক। লোহার রডের আঘাতে তার মাথা ও চোখের মারাত্মক ক্ষতি হয়। পরে ওই অবস্থাতেই তাকে আটকে রাখা হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি পালিয়ে হল থেকে বের হয়ে যান এহসান।

প্রতিবেদকের সাথে মোবাইলে কথা বলার এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলের এহসানের বাবা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের বিভাগের সেরা ছাত্রদের একজন। খুব শান্তশিষ্ট ছেলে আমার। অনেক কষ্টে তার লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছিলাম। ওকে নিয়ে আমার পরিবারের অনেক স্বপ্ন। ছেলের এ দুরবস্থা দেখতে হবে কখনও চিন্তা করিনি আমরা । এহসান এখন লেখাপড়া করতে পারছে না। শুধুই কান্নাকাটি করছে। ছেলের এ অবস্থা দেখে আমরাও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এহসানের চিকিৎসা ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কবে পাওয়া যাবে তা অনিশ্চিত। যে কারণে নিজ খরচেই ছেলের চিকিৎসা করছেন তিনি।

যে কারণে এবং যেভাবে নির্যাতন করা হয় এহসানকে:

নির্যাতনের পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে বসে নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা করছিলেন আহত এহসান। তখন চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ওমর ফারুক প্রায় তিন মাস আগে আমার কাছ থেকে ক্যালকুলেটর ধার নেয়। ওমর ফারুকের কাছে অনেকবার ক্যালকুলেটর ফেরত চেয়েছি। কিন্তু ওমর ফারুক বরাবরই ক্যালকুলেটর পরে দেওয়ার কথা বলত। সর্বশেষ ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ক্যালকুলেটর দাবি করলে ওমর ফারুক আমাকে মারধর করে। এরপর ওমর ফারুক হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আরিফের মাধ্যমে আমাকে হলের টিভি রুমে ডেকে নেয়। এসময় টিভিরুমে উপস্থিত ছিলেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তানিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিম ইরতিজা শোভন ও আবু তাহের। সেখানে তারা আমাকে শিবির অপবাদ দিয়ে মোবাইল কেড়ে নিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চেক করে। কিন্তু তারা ফেসবুকে কিছুই না পেয়ে জোর করে আমার কাছ থেকে শিবির স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য বেদম মারধর করে।

পরে ছাত্রলীগের হল শাখার সহ-সম্পাদক ওমর ফারুক ও রুহুল আমিন, সদস্য সামিউল ইসলাম সামী, আহসান উল্লাহ, উপ-সম্পাদক মেহেদী হাসান হিমেলের নেতৃত্বে রড ও লাঠি দিয়ে পেটানো হয় আমাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, মারধরের এক পর্যায়ে এহসান জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে আরিফ রাত সাড়ে ৩টায় এহসানকে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে এহসানকে আবারও হলে নিয়ে আসা হয়। এরপর হল শাখা সভাপতি তাহসান আহমেদের (১৬ নম্বর) কক্ষে আটকে রাখা হয় তাকে। সকালে এহসানের অবস্থা খারাপ হলে তাকে আবারও ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে হলে এনেেঐ কক্ষে আটকে রাখা হয়।

বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে হল থেকে পালিয়ে আসে এহসান। পরে আহত এহসানের বাবা রফিকুল ইসলাম তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।

ঘটনার পরদদিন হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে ড সাব্বীর আহমেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তাদেরকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

জানতে চাইলে ড সাব্বীর আহমেদ বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট উপাচার্যের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীকালে সিন্ডিকেট সভায় তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।