চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম আসরটা বাংলাদেশে বসেছিল। অথচ তার দর্শক ছিল বাংলাদেশ। এর আগেই বাংলাদেশ ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত করে ফেলেছে, কিন্তু তাতেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার যোগ্যতা হয়নি। ওই টুর্নামেন্টের তখনকার নাম অবশ্য ছিল নক-আউট ওয়ার্ল্ড কাপ।
১৯৯৮ সালের ২৪ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল পরে নাম বদলে আজকের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হওয়া টুর্নামেন্টের প্রথম আসর। তখন পর্যন্ত বাংলাদেশে সেটাই ছিল সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞ। তবে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। আইসিসি তার তথাকথিত কৌলীন্য ধরে রাখতে শুধু টেস্ট খেলা দেশগুলোকে ওই টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ দিয়েছিল। তাতেই নতুন ইতিহাস হয়েছিল, প্রথম কোন ক্রীড়া আসর বসেছিল যেখানে আয়োজক দেশ মাঠে খেলার অংশ ছিল না।
তখন অবশ্য খুব লজ্জার কিছু মনে হয়নি কারও কাছে। কারণ টেস্ট খেলুড়ে দেশের টুর্নামেন্ট, সেখানে সহযোগী দেশগুলোর টুর্নামেন্ট আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের জায়গা কোথায়!
তবে, মাত্রই বন্যার ধকল কাটানো বাংলাদেশ আয়োজনে ঠিকই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তখনকার আইসিসি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া থেকে ওই টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন সাউথ আফ্রিকান ক্যাপ্টেন হ্যানসি ক্রনিয়ে কিংবা ধারাভাষ্য দিতে আসা সুনীল গাভাস্কার- সবাই একবাক্যে তা স্বীকার করেছেন।
সেটা ছিল এক এলাহি কাণ্ড। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের তলানির দল জিম্বাবুয়ে এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল দিয়ে খেলার শুরু। জিম্বাবুয়ে হেরে যাবার পর আট দলের কোয়ার্টার ফাইনাল। সেখান থেকে ফাইনাল খেলেছিল সাউথ আফ্রিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ক্রিকইনফোর নবীন রিপোর্টার হিসেবে সেই টুর্নামেন্ট কাভার করা ছিল এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। তখন মাত্রই ক্যাপ্টেন হওয়া স্টিফেন ফ্লেমিং থেকে শুরু করে শচীন টেন্ডুলকার কিংবা হ্যানসি ক্রনিয়ে বা ব্রায়ান লারা অথবা স্টিভ ওয়াহকে প্রথম সরাসরি দেখা, সংবাদ সম্মেলনে কথা বলা।
নবীন সাংবাদিক হিসেবে তাদের সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতা ছিল এক অপার্থিব অভিজ্ঞতা। তারপরও মনের ভেতর খচখচ করত- আমরা এ টুর্নামেন্টে নেই, আমাদের মহল্লার সানোয়ার যে জাতীয় দলে খেলে তার মতো আরও অনেক ক্রিকেটার শুধুই প্রটোকলের দায়িত্বে।
মন খারাপ হলেও এই ভেবে সান্ত্বনা খুঁজেছি যে একদিন আমরাও! সেই একদিন এসে গেছে। মাত্র উনিশ বছর পর আমরা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে।
গৌরবের অংশীদার করার জন্য মাশরাফি-সাকিব-মুশফিক-তামিম-রিয়াদ-সৈকতরা যেমন ধন্যবাদ পাবেন, তেমনি তাদের পূর্বসূরি নান্নু-আকরাম-বুলবুল-বাশার-রফিক, এমনকি তারও আগের প্রিন্স বা রকিবুল হাসানরাও।
ও পৃথিবী এবার এসে বাংলাদেশ নাও চিনে।