১ অক্টোবর চ্যানেল আই পা দিচ্ছে ১৯ বছরে। উনিশের উচ্ছ্বাসে ভাসছে এখন চ্যানেল আই পরিবার। ১৯৯৯ সালের ১ অক্টোবর যাত্রা শুরু করে চ্যানেল আই যেমন উপহার দিয়েছে দর্শকনন্দিত টিভি অনুষ্ঠান, তেমনি মানসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাণেও এগিয়ে আগেই জন্ম নেয়া ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। একক প্রযোজনা সংস্থা হিসেবে শতাধিক চলচ্চিত্র নির্মাণের রেকর্ডও ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ঘরেই।
ইমপ্রেস নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো একদিকে যেমন দর্শকনন্দিত হয় তেমনি ভূষিত হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে। অস্কার পুরস্কারের জন্য বাংলাদেশ থেকে মনোনয়ন পেয়েছে ইমপ্রেসের একাধিক চলচ্চিত্র।
চ্যানেল আই’র উনিশে পদার্পণে ফিরে দেখায় ইমপ্রেসের ১৯টি চলচ্চিত্রের কথা তুলে ধরা হলো:
কিত্তনখোলা: ২০০০ সালে মুক্তি পায় আবু সাইয়ীদ পরিচালিত ‘কিত্তনখোলা’। নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন রচিত কিত্তনখোলা নাটক অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেন পরিচালক আবু সাইয়ীদ ও নুরুল আলম আতিক। অভিনয় করেছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, মামুনুর রশীদ, পীযুষ বন্দোপাধ্যায়, নায়লা আজাদ নুপুর, তমালিকা কর্মকার ও আজাদ আবুল কালাম। চলচ্চিত্রটি ২০০২ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও শ্রেষ্ঠ পরিচালকসহ নয়টি বিভাগে সম্মাননা লাভ করে।
কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি: ২০০৩ সালে মুক্তি পায় চিত্রনায়িকা মৌসুমী পরিচালিত প্রথম ছবি ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত এ ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মৌসুমী, ফেরদৌস, রাজ্জাক, ববিতা, হুমায়ুন ফরীদি, শহিদুল আলম সাচ্চুসহ আরও অনেকে।
মেঘের পরে মেঘ: ২০০৪ সালে চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘মেঘের পরে মেঘ’। ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশের ছোট্ট শান্ত ও নিরিবিলি একটি গ্রাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় লন্ডভন্ড এই গ্রামের পটচিত্র। সেই গ্রামেরই এক সন্তান স্বাধীন মাহমুদ একদিন জানতে চায় তার পিতৃ পরিচয়। তার জন্ম যুদ্ধ জয়ের পরপরই। প্রশ্ন উঠে কে তার পিতা? মুক্তিযোদ্ধা সেজান মাহমুদ নাকি ঘাতক দালাল রাজাকার মজিদ নাকি পাকিস্তানী ক্যাপ্টেন সাদেক? এই তিনটি চরিত্রের মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের দুঃসহ স্মৃতি। মা সুরাইয়ার কাছে সন্তান স্বাধীন জানতে চায়, তার জন্মের প্রকৃত ইতিহাস। রাবেয়া খাতুনের গল্প অবলম্বনে নির্মিত এ ছবিতে অভিনয় করেন রিয়াজ, পূর্ণিমা, মাহফুজ আহমেদ, শহিদুল আলম সাচ্চুসহ অন্যরা।
রং নাম্বার: ২০০৪ সালে মুক্তি পায় মতিন রহমান পরিচালিত ‘রং নাম্বার’। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত এই ছবিতে বাংলাদেশ ও ভারত এর জনপ্রিয় সংগীত শিল্পীদের কণ্ঠে রয়েছে কিছু শ্রুতিমধুর গান। ‘রং নাম্বার’ মূলতঃ একটি প্রেমের ছবি। বর্তমান প্রজন্মের তরুণ তরুণীর উচ্ছলতা এবং তারুণ্য এই ছবির মূল উপজীব্য। এই ছবির মাধ্যমেই টিভি অভিনেত্রী শ্রাবন্তী প্রথমবারের মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়াও অভিনয় করেছেন রিয়াজ, আব্দুল কাদের, ডলি জহুর, তুষার খান ও অমল বোস।
ব্যাচেলর: মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ব্যাচলের ছবিটি মুক্তি পায় ২০০৪ সালে। এর কাহিনি রচনা করেছেন জনপ্রিয় সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক আনিসুল হক। ব্যাপক প্রশংসিত এ ছবিতে অভিনয় করেন ফেরদৌস, শাবনূর, অপি করিম, হুমায়ুন ফরীদি, মারজুক রাসেল, আহমেদ রুবেল, আরমান পারভেজ মুরাদ, জয়া আহসানসহ আরও অনেকে। এই ছবিতে অভিনয় করেই ২০০৪ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান অপি করিম।
শ্যামল ছায়া: হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘শ্যামল ছায়া’ ছবিটিও ২০০৪ সালে মুক্তি পায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয় চলচ্চিত্রটি। এই ছবিটি ২০০৬ সালে “সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র” বিভাগে একাডেমি পুরস্কার এর জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। ছবিতে হুমায়ুন ফরীদি , শাওন, শিমুল, রিয়াজ, স্বাধীন খসরু, সৈয়দ আখতার আলী, তানিয়া আহমেদ, রাত্রি, আহমেদ রুবেল, এজাজুল ইসলাম, ফারুক আহমেদ, শামীমা নাজনীন, জেসমিন পারভেজসহ আরও অনেকে অভিনয় করেন।
দারুচিনি দ্বীপ: লাক্স নিবেদিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’ মুক্তি পায় ২০০৭ সালে। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এর দারুচিনি দ্বীপ উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি পরিচালনা করেছেন তৌকির আহমেদ। ছবিতে রিয়াজ, জাকিয়া বারী মম, মোশাররফ করিম, মামনুন হাসান ইমন, আফসান আরা বিন্দু, আবদুল্লাহ আল মামুন, আসাদুজ্জামান নূর, আবুল হায়াতসহ আরও অনেকে অভিনয় করেন। ছবিটি সে বছরের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেয়। এছাড়াও সেরা অভিনেতা শাখায় পুরস্কার জিতে নেন রিয়াজ এবং অভিনেত্রী শাখায় জাকিয়া বারী মম। শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে আবুল হায়াত, শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে এস আই টুটুল এবং শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে হুমায়ুন আহমেদ জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন।
নিরন্তর: ২০০৬ সালে মুক্তি পায় আবু সাইয়ীদ পরিচালিত ‘নিরন্তর’। ইমপ্রেস প্রযোজিত এ ছবিতে অভিনয় করেন শহিদুল আলম সাচ্চু, আমিরুল হক চৌধুরী, ডলি জহুর, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ইলিয়াস কাঞ্চন, শাবনূর, তিথিসহ আরও অনেকে। হুমায়ূন আহমেদের জনম জনম উপন্যাসের কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয় সিনেমাটি।
আহা!: ২০০৭ সালে মুক্তি পায় এনামুল করিম নির্ঝর পরিচালিত ‘আহা’। ইমপ্রেস প্রযোজিত এ ছবিতে অভিনয় করেন হুমায়ূন ফরীদি, তারিক আনাম খান, ফজলুর রহমান বাবু, শহিদুল আলম সাচ্চু, ফেরদৌস, প্রজ্ঞা লাবনী, সাথী ইয়াসমিন, খালেদ খান, গাজী রাকায়েতসহ আরও অনেকে।
কৃষ্ণপক্ষ: জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ-এর ‘কৃষ্ণপক্ষ’ উপন্যাস অবলম্বনে মেহের আফরোজ শাওন পরিচালিত ছবিটির প্রিমিয়ার হয় ২০১৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। তবে সারা দেশে মুক্তি পায় ২৬ ফেব্রুয়ারি। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মেহের আফরোজ শাওন চলচ্চিত্র পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ করেন। এতে অভিনয় করেন রিয়াজ, মাহিয়া মাহিসহ আরও অনেকে।
থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার: ২০০৯ সালের ১১ ডিসেম্বর মুক্তি পায় ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এর ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত এই ছবিতে প্রধান তিন চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা, মোশাররফ করিম ও তপু। এছাড়াও বিভিন্ন চরিত্র অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত, এশা, শুভেচ্ছা, রানী সরকারসহ আরও অনেকে।
ডুবসাঁতার: ২০১০ সালের ১৭ নভেম্বর মুক্তি পায় নূরুল আলম আতিকের প্রথম ছবি ‘ডুব সাঁতার’। এ ছবিতে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, শেহজাদ চৌধুরী, অমোক ব্যাপরী, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, শাহরিয়ার শুভ, বোংশু হোর, শ্রাবন্তী দত্ত তিন্নি, স্বাধীস খসরু, সুষমা সরকার, স্বাগতাসহ আরও অনেকে। ছবিটি দর্শক মহলে ব্যাপক আলোচিত হয়।
মনের মানুষ: গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘মনের মানুষ’ মুক্তি পায় ২০১০ সালে। যৌথ প্রযোজনার এ ছবিতে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন শিল্পীরা অভিনয় করেছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর মনের মানুষ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ছবিতে লালন ফকিরের জীবন ও কর্মের কিছু চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ছবিটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, রাইসুল ইসলাম আসাদ, চঞ্চল চৌধুরী, শুভ্র কুন্ডু, পাওলি দাম, প্রিয়াংশু চ্যাটার্জী, তাথৈ, নাউফেল জিসান, চম্পা, হাসান ইমাম, শাহেদ আলী সহ আরও অনেকে।
আমার বন্ধু রাশেদ: ২০১১ সালে মুক্তি পায় ‘আমার বন্ধু রাশেদ’। মুহম্মদ জাফর ইকবাল রচিত একই নামের শিশুতোষ উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি পরিচালনা করেছেন মোরশেদুল ইসলাম। এই ছবিতে অভিনয় করেছে চৌধুরী জাওয়াতা আফনান। অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইনামুল হক, হুমায়রা হিমু, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, আরমান পারভেজ মুরাদ। এছাড়াও শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছে রায়ান ইবতেশাম চৌধুরী, কাজী রায়হান রাব্বি, লিখন রাহি, ফাইয়াজ বিন জিয়া, রাফায়েত জিন্নাত কাওসার আবেদীন। ১৯৭১ সালে মফস্বল শহরের কয়েকজন কিশোর কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তারই কিছু চিত্র ফুটে উঠেছে গল্পে।
অজ্ঞাতনামা: তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘অজ্ঞাতনামা’ মুক্তি পায় ২০১৬ সালের ১৯ আগস্ট। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত এ ছবিতে অভিনয় করেন ফজলুর রহমান বাবু, মোশাররফ করিম, নিপুণ, আবুল হায়াত, শতাব্দী ওয়াদুদ, শহীদুজ্জামান সেলিমসহ আরও অনেকে। বেওয়ারিশ এক লাশের গল্প নিয়ে নির্মিত ‘অজ্ঞাতনামা’ দর্শকমহলে নন্দিত হয়।
জালালের গল্প: ২০১৩ সালে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম তাদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বুটিক সিনেমার কার্যক্রম শুরু করে। এই প্রকল্পের প্রথম সিনেমা ‘জালালের গল্প। আবু শাহেদ ইমন পরিচালিত ‘জালালের গল্প’ মুক্তি পায় ২০১৫ সালে। ছবিতে মূলত ফুটে উঠেছে অবহেলা আর নির্মম বাস্তবতার যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে বেড়ে ওঠা জালাল নামে একটি ছেলের গল্প। এতে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম, তৌকীর আহমেদ, নূরে আলম নয়ন, মৌসুমী হামিদ, আরাফাত রহমান, মোহাম্মদ ইমন ও শর্মীমালা।
পিঁপড়াবিদ্যা: ২০১৪ সালে মুক্তি পায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘পিপড়াবিদ্যা’। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড প্রযোজিত ছবিটির পরিবেশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে জাজ মাল্টিমিডিয়া। এতে অভিনয় করেন শিনা চৌহান, নূর ইমরান মিঠু, মুকিত জাকারিয়া, সাব্বির হাসান লিখনসহ আরও অনেকে।
ঘেটু পুত্র কমলা: ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি পরিকল্পনা ও নির্মাণ করেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক-চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এই চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে। ছবির কাহিনি ও চিত্রনাট্য করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় প্রসঙ্গ সমকামী পুরুষ মানুষের বালকপ্রীতি। চলচ্চিত্রের ঘেটুপুত্র কমলা চরিত্রে অভিনয় করেছেন শিশুশিল্পী মামুন। এটি হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র। ৮৫তম অস্কার প্রতিযোগিতায় ‘সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র’ বিভাগের জন্য বাংলাদেশ থেকে মনোনয়ন পায় ‘ঘেটুপুত্র কমলা’। ৮৫তম অস্কার বাংলাদেশ কমিটি চলচ্চিত্রটিকে মনোনয়ন দেয়। এছাড়া চলচ্চিত্রটি ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন, কানাডা ও সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজক কমিটির কাছ থেকেও আমন্ত্রণ পায়।
মৃত্তিকা মায়া: ২০১৩ সালে মুক্তি পায় গাজী রাকায়েত পরিচালিত ‘মৃত্তিকা মায়া’। এতে অভিনয় করেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, মামুনুর রশীদ, শর্মীমালা, তিতাস জিয়াসহ আরও অনেকে। ছবিটি সে বছর ১৭টি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে।