বাংলাদেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে অর্জন, সাম্প্রতিক সময়ের নিখোঁজ, গুম আর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ফলে তা ম্লান হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। এসব ঘটনাকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক হিসেবেও অভিহিত করেন তিনি।
বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের প্রাক্কালে চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আজ একটা কাঠামোর মধ্যে এসেছে। মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠাসহ আরও অনেক দূর এগিয়েছে আমাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি।
“কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে উধাও হয়ে যাওয়া, নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা অজ্ঞাতভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাউকে আটকে রাখার মত ঘটনাগুলো আমাদের সে অর্জনগুলোকে ম্লান করে দিচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা খুবই উদ্বেগের।”
সম্প্রতি সংসদে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অন্য অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো।
সেই বক্তব্য উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এ অধ্যাপক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো। আমি তার এ বক্তব্যকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। কারণ তার এ বক্তব্যের মাধ্যমে এক ধরনের স্বীকারোক্তি রয়েছে, যে বাংলাদেশেও আসলে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সবাই যেখানে অস্বীকার করে সেখানে এ ধরনের বক্তব্য আসাটা ইতিবাচক।’
বাংলাদেশের এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে পঁচন ধরলেও মাথা যেহেতু ঠিক আছে, তাই অচিরেই এ রোগ থেকে উত্তরণ ঘটবে বলে আমি আশা রাখি।’
বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি বর্ণনা দিয়ে ড. মিজানুর রহমান বলেন, বিশ্বে মানবাধিকারের শেকড় অনেক গভীরে প্রোথিত হয়েছে। মানবাধিকার আজ যে কোন কর্মকাণ্ডের বৈধতার মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
দুইবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এ অধ্যাপক আরো বলেন, ‘বর্তমান আমেরিকা কেন্দ্রিক একরৈখিক বিশ্বে ঘটমান অনেক কর্মকাণ্ড সর্বজনিন মানবাধিকারের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।’
সম্প্রতি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন: জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আমেরিকা বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা করেছে। যা স্বাধীনতাকামী মানুষের মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর স্বাধীনতাকামী বা সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত রাষ্ট্রগুলোর মানবাধিকারকেও অস্বীকারের প্রবণতা বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির জন্য হুমকি হিসেবেও বর্ণনা করেন ।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য সংরক্ষণ ইউনিট জানায় বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে গত আড়াই মাসে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ১০ ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছেন। যারা বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর আর ফিরে আসেন নি।
এরমধ্যে ২০০৭ থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৫৪৫ জনের নিখোঁজ বা অপহরণের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ৭৮ জনের লাশ পরে উদ্ধার করা হয় এবং নিখোঁজের পর বাড়ি ফিরে এসেছে মাত্র ৫১ জন।