কক্সবাজার থেকে: অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়ক। সমুদ্র সৈকত বেষ্টিত এই মেরিন ড্রাইভকে ঘিরে গড়ে উঠবে নতুন এক পর্যটন সম্ভাবনা। কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়কের নির্মান কাজ শেষ করতে সময় লেগেছে ১৪ বছর। সব প্রস্তুতি শেষ। ৬ মে শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সড়ক উদ্বোধনের মাধ্যমে উন্মুক্ত হবে স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ সড়ক। আর এ সড়কের মাধ্যমে খুলে যাবে অপার সম্ভাবনার পর্যটনের অবারিত দুয়ার।
জানা যায় , ১৯৯৩ সালে শুরু হওয়া মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা ছিল ২০১৮ সাল পর্যন্ত। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই সড়কটির নির্মাণ সম্পন্ন করতে পেরেছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন ১৬ ইসিবি। প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৪০ কোটি টাকা।
মেরিন ড্রাইভ নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনীর ইসিএ-১৬-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কে এম মেহেদী হাসান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ১৯৯৩ সালে তৎকালীন সরকারের আমলে ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু শুরুতে কক্সবাজার শহরের কলাতলী পয়েন্টে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ঠিকাদারের নির্মিত দুই কিলোমিটার সড়ক সাগরেই বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৫ সালে এই সড়কের নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইসিএকে। এরপর সড়কটির দৈর্ঘ্য ৪৮ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ৮০ কিলোমিটার করা হয়।
মেরিন ড্রাইভ সড়কটি নির্মাণের জন্য সেনাবাহিনীকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় উল্লেখ করে ইসিএর অধিনায়ক কে এম মেহেদী হাসান বলেন: প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতায় সড়কের মাটি সাগরের উত্থাল ঢেউয়ে বিলীন হয়ে যায়। এতে করে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে। লোনা হাওয়ায় ব্যবহৃত রডে ধরে মরিচা। তদুপরি পাহাড়ের পাদদেশ এবং সাগরের তীর দিয়ে এ রকম দীর্ঘ সড়ক নির্মাণের সময় ২০১০ সালের ১৫ জুন হিমছড়ি ইসিএ ব্যারাকে টানা ভারি বর্ষণে আকস্মিক পাহাড়ধসে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান ৬ সেনা সদস্য।
তিন ধাপে নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করা হয় মেরিন ড্রাইভের। প্রথম ধাপে ২৪ কিলোমিটার, দ্বিতীয় ধাপে ২৪ কিলোমিটার ও তৃতীয় ধাপে ৩২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: মেরিন ড্রাইভটি একদিকে সাগরের তীরে বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। অন্যদিকে বিস্তৃীর্ণ জায়গা-জমি ও ফসল রক্ষা পাবে সাগরের ভাঙন থেকে। একই সঙ্গে পর্যটনশিল্পেও যোগ হবে নতুন মাত্রা। বিদেশী পর্যটকেরে আগমন বেড়ে যাবে।
সাগরতীর আর পাহাড়ের পাদদেশে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত মেরিন ড্রাইভ সড়কের ভ্রমণই হবে পর্যটকদের কাছে বড় পাওয়া বলে জানান কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ুয়া। তিনি বলেন: এই দৃষ্টি নন্দন মেরিন ড্রাইভ যুক্ত হবে এশিয়ান হাইওয়ের সাথে।এ সড়কে ১৭ টি ব্রীজ, ১০৮ চি কালর্ভাট রয়েছে। যেখানে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি। সড়কের ধারে নারিকেল,সুপারি সহ নানা প্রজাতির ১১ লাখ গাছ লাগোনো হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, বিশ্ব পর্যটনের দুয়ার খুলতে চলছে সড়কটি। একই সঙ্গে সড়কের কারণে বদলে যাবে এই এলাকার মানুষের জীবনের মানও।
একপাশে দাঁড়িয়ে আছে সবুজের সমারোহ নিয়ে উঁচু পাহাড়। অপর পাশে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে বালিয়াড়ির বুকে। এই দু’য়ের বুক চিরে চলে গেছে সু-প্রশস্ত পিচঢালা পথ। কল্পনার এই চিত্র বাস্তবে দেখা মিলবে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের কোলঘেঁষে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল ওর্নাস এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন: এক দিকে পাহাড় আর অন্য দিকে সাগর, আর মধ্য ভাগে এ সড়ক। এটি বিদেশেীদের জানানো গেলে পর্যটনের জন্য অনেক বড় কিছু হবে।