ভালভার্দে, সার্জিও রামোস ও লুকা মদ্রিচের গোলে মৌসুমের প্রথম এল ক্ল্যাসিকো জিতে পয়েন্ট টেবিলে তিন থেকে একলাফে শীর্ষে উঠে এসেছে রিয়াল মাদ্রিদ। হেরে বসা বার্সা থাকল বিশ দলের টেবিলের মধ্যিখানে।
শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় ন্যু ক্যাম্পে শুরু ক্ল্যাসিকোয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনাকে ৩-১ গোলে হারিয়ে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ। স্বাগতিকদের সান্ত্বনার গোলটি আনসু ফাতির।
জয়ে ৬ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে এখন জিনেদিন জিদানের রিয়াল। ৫ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে ১০-এ পড়ে থাকল রোনাল্ড কোম্যানের বার্সা।
লড়াইটা শুধু টেবিলে নয়, লড়াই মর্যাদারও। লিগে দুদলের অবস্থাই ছিল নড়বড়ে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ছিল চড়াই-উতরাই। সেরা খেলোয়াড়দের চোটের হিসাব ছিল। সেসব কিছুই হিসেবে আসেনি রেফারি খেলা শুরুর বাঁশি বাজাতে বাজাতেই।
প্রথম দশ মিনিটেই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের পসরা সাজিয়ে বসে দুদল। গোলও করে একটি করে। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে ফাতির হাফচান্স সুযোগে পরিণত করতে না পারার মধ্য দিয়ে উত্তাপের শুরু।
নিজের প্রথম সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেখানে পঞ্চম মিনিটেই এগিয়ে যায় রিয়াল। করিম বেনজেমার পাসে বল পেয়ে উরুগুয়ে তারকা ভালভার্দে খুঁজে নেন জাল, ফাঁকি দেন টের-স্টেগেনের চোটে বার্সার গোলপোস্ট পাহারা দেয়ার দায়িত্ব পাওয়া নেতোকে।
পিছিয়ে পড়ে তেঁতে ওঠে বার্সা। জবাব দিতে সময় নেয় মাত্র তিন মিনিট। ম্যাচের অষ্টম মিনিটে জর্ডি আলবার পাসে বক্সে বল পেয়ে সমতা টানেন ফাতি। মৌসুমে তার পঞ্চম গোল, আর সবধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বার্সার ৪০০তম ক্ল্যাসিকো গোল যেটি।
দুদলই যখন প্রতিপক্ষ গোলমুখে নিজেদের প্রথম শটেই সাফল্য খুঁজে নিয়েছে, মাঠে পারদের উত্তাপ তখন তুঙ্গে! ১৯ মিনিটে মেসিকে ফাউল করে হলুদ কার্ড আনেন কাসেমিরো।
ম্যাচের ২২ ও ২৩ মিনিটে পরপর দুটি কর্নার আদায় করে রিয়াল। দ্বিতীয় কর্নারের পর দারুণ এক কাউন্টার আক্রমণে অতিথি বক্সে বল পেয়ে গিয়েছিলেন অধিনায়ক মেসি। শটও নিয়েছিলেন দূরহকোণ থেকে। গোলরক্ষক কোর্ত্তয়া তার সামনে দেয়াল হয়ে ওঠেন।
সেখান থেকে পাওয়া বলে পরের মিনিটেই পাল্টা আক্রমণে যায় রিয়াল। এবার সুযোগ আসে আরেক অধিনায়ক রামোসের সামনে। তিনিও শট নিয়েছিলেন, সামনে দেয়াল হন নেতো।
বিরতির আগে বাকি সময়ে দুদলই মূহমূহ ভীতি ছড়িয়েছে একে অন্যের রক্ষণে। রিয়ালই ছিল বেশি আক্রমণাত্মক, সুযোগের কাছাকাছিও গেছে বেশিবার। কিন্তু গোল আদায় করতে পারেনি কোনো দলই। ১-১ ব্যবধানেই আসে মধ্যবিরতি।
বিরতির তিন মিনিট আগে ৩৭ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখা নাচোকে তুলে নিয়ে ভাসকেজকে মাঠে পাঠান জিদান। দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে ঝাঁজ ধরে রাখে বার্সা। টানা আক্রমণ শানাতে থাকে প্রতিপক্ষ পোস্টের সামনে। তখন খানিকটা খেই হারিয়ে ফেলে রিয়াল।
বার্সা যখন নিয়ন্ত্রণে, খেলার ধারার বিপরীতে আবারও লিড আনে রিয়াল। নিজ বক্সে রামোসের শার্ট টেনে পেনাল্টি উপহার দেন লেংলে। দীর্ঘক্ষণ ভিএআরে পর্যবেক্ষণ করে স্পটকিকের বাঁশি বাজান রেফারি। ৬৩ মিনিটে তা থেকে সফলভাবে গোল আদায় করেন রামোসই।
দ্বিতীয়বার এগিয়ে যেয়ে উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে রিয়াল। ধীরে ধীরে খেলা গুছিয়ে নেয়। ম্যাচের শেষ ২০ মিনিট তো বার্সার উপর দাপুটে ছড়িই ঘুরিয়েছে অতিথিরা। যার ফলও আসে। নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে আরেকদফা ব্যবধান বাড়ান বদলি নামা ক্রোয়েট তারকা লুকা মদ্রিচ।
নিজেদের গত লিগ ম্যাচে বার্নাব্যুতে কাদিজের বিপক্ষে ১-০তে হার, শেষ ইউরোপ সেরার ম্যাচে শাখতার দোনেৎস্কের কাছে ঘরের মাঠে ৩-২ গোলের পরাজয়ের স্মৃতি নিয়ে লেমেছিল লা লিগার বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। দারুণ এক জয়ে ঘুরে দাঁড়াল।
ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে কোচ জিদান বলেছিলেন দুঃসময় কাটাতে, ঘুরে দাঁড়াতে এল ক্ল্যাসিকোর চেয়ে আর কোন মঞ্চইবা যথার্থ হতে পারে। সেই কথায় শিষ্যরা যে বেশ উদ্দীপ্ত হয়েছেন, বোঝাই গেল। রিয়ালের কোচ হিসেবে তৃতীয়বারের মতো ন্যু ক্যাম্প জয় করে ফিরলেন তিনি, সেটিও কেবল দশ ম্যাচে।
অন্যদিকে বার্সা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফেরেন্সভারোসের বিপক্ষে ৫-১ গোলের উড়ন্ত জয়ের স্মৃতি নিয়ে নেমেছিল। যদিও শেষ দুই লিগ ম্যাচে বাজে অভিজ্ঞা ছিল তাদের। ঘরের মাঠে সেভিয়ার বিপক্ষে ১-১এ ড্র, আর গেটাফের মাঠে ১-০তে হারের পর নিজের প্রথম এল ক্ল্যাসিকোয় হার দেখতে হল রোনাল্ড কোম্যানকে।