রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, বৃষ্টির দিনে কাঁদা এবং পানি জমে যাওয়া এখন যেন ঢাকা-উত্তরবঙ্গের মহাসড়কগুলোর নিত্যদিনের সঙ্গী। তবে এক্ষেত্রে রাস্তায় থাকা খানাখন্দগুলো ইট দিয়ে ভরাট করে সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বাস যাত্রীদের ভোগান্তি কিছুটা কমলেও শঙ্কা কাটেনি।
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু করে এক সপ্তাহে তীব্র যানজটের কারণে ঢাকা থেকে নওগাঁ, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনাসহ উত্তর বঙ্গের জেলাগুলোতে যেতে ১৪ থেকে ২৪ ঘণ্টা সময় লেগেছে। তবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন অবস্থা স্বাভাবিক। এসব জেলায় যেতে ছয় থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগছে। বৃষ্টি হলে আবার রাস্তার বেহাল রুপ বেরিয়ে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
ঢাকা-রাজশাহী রুটের একটি বাস কোম্পানির কাউন্টার ম্যানেজার রাজন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত চার লেনের কাজ করায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। বৃষ্টির দিনে কাদা, পানি জমে যায়। ফলে তীব্র যানজট দেখা দেয়। ছয় থেকে আট ঘণ্টার পথ ১৮ থেকে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে। গত শনিবার নওগাঁ যেতে লেগেছে টানা ২৪ ঘণ্টা। এর ফলে যাত্রীদের অসহনীয় দুর্ভোগের সাথে যুক্ত হয়েছিল শিডিউল বিপর্যয়।
‘তবে রাস্তায় থাকা খানাখন্দগুলো খোয়া দিয়ে ভরাট করায় আপাতত এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলেছে। এত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ।’
হাইওয়ে পুলিশের এসপি মোঃ শফিকুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চার লেনের কাজ চলছে। রাস্তায় গর্ত করে নতুন মাটি ফেলা হয়েছিল। মাটির উপরে ছিল খোয়া। বৃষ্টির কারণে মাটি পিচ্ছিল হয়ে যায়। খোয়ার নিচ থেকে কাঁচা মাটি সরে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়। ফলে গাড়ি দেবে যায়। দুই তিনটি গাড়ি এমন দেবে গেলেই দীর্ঘস্থায়ী যানজটের সৃষ্টি হয়।
যথাসময়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন: বৃষ্টির কারণে সৃষ্টি হওয়া গর্তে ইটের খোয়া ফেলায় রাস্তা কিছুটা চলাচলের উপযোগী হয়। তবে এটি স্থায়ী সমাধান নয়।
‘আবার বৃষ্টি হলে একই সমস্যায় পড়তে হবে। বাংলাদেশে নভেম্বর মাসে একটা বৃষ্টি হয়। আমি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে বলে রেখেছি। তারা নভেম্বরের মাঝামাঝি হওয়া বৃষ্টিতে যেন সমস্যায় না পড়তে হয় সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে।’তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়ায় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানালেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে কাউন্টার ম্যানেজার রাজনের। তিনি বলেন: রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলে, ফুটপাথ দখল করে রাখে, যত্রতত্র পার্কিং করে রাখে, অনেকে যেখানে সেখানে গাড়ি থামায়। এসব কারণে যখন তখন যানজট তৈরি হয়। কর্তৃপক্ষ একটু কঠোর হলে সহজেই এসব সমস্যা সমাধান হয়।
হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন: ফিটনেসবিহীন অবৈধ গাড়ি পুলিশ ধরলে অল্প কিছু টাকা দিলেই ছেড়ে দেয়। পুলিশ ধরে মূলত টাকা নেওয়ার জন্য। গাড়ি আটকাবার জন্য না। ফলে অবৈধ গাড়ির মালিকরা গাড়ি চালাতে উৎসাহিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশ সুপার মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন: রাস্তায় অবৈধ গাড়ি চলে এটা সত্য। তবে আমরাও নিয়মমাফিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রতিদিনই মামলা দেওয়া এবং গাড়িগুলো ডাম্পিংয়ে নেওয়া হচ্ছে। তারা যদি কাগজ প্রস্তুত করতে পারে তাহলে গাড়িগুলো ছাড়া হবে। নাহলে কোনোদিনই ছাড়া হবে না।
দুর্ঘটনা কমানো, যানজট নিরসনে ড্রাইভারদের নিয়ে সচেতনতামূলক নানা প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয় বলেও জানান হাইওয়ে পুলিশ সুপার মোঃ শফিকুল ইসলাম।