গ্যালারিতে ভরা দর্শক। গেইল, ম্যাককালাম, মাশরাফীদের বিপক্ষে তামিম, মালিক, স্যামুয়েলসদের লড়াই। রোমাঞ্চের অপেক্ষা। প্রত্যাশা চার-ছক্কার বিনোদনের। সেখানে মাশরাফীর রংপুর করল মাত্র ৯৭ রান। পরে যেটা টপকে যেতে শেষ ওভার পর্যন্ত লড়তে হল তামিমের কুমিল্লাকে। লো-স্কোরিং ম্যাচ দেখে দর্শকদের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ দুই অধিনায়কও। সিলেট ও চট্টগ্রামে রান হলেও মিরপুরে রান না হওয়ায় তামিম ও মাশরাফীর অভিযোগের তীর কিউরেটর গামিনী ডি সিলভার দিকে।
ম্যাচ শেষে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে মাশরাফী জানালেন, ‘জানি না সমস্যাটা আসলেই কী। অতীতে এখানে তিনি (গামিনী) ভাল ভাল উইকেট তৈরি করেছেন। এখন মনে হয় উইকেটে আসল সমস্যাটা কী সেটা চিহ্নিত করা উচিত। মাটিতে সমস্যা থাকা বা প্রস্তুত করতে যদি সমস্যা হয়। টুর্নামেন্টের এই সময়ে এসে সবাই চায় একটু ভালে উইকেটে খেলতে। বিশেষ করে শেষের দিকে এসে। এই উপলব্ধি নিয়ে কেউ মাঠে আসতে চায় না যে, ঢাকার উইকেটে টস হারলেই ব্যাটিং করতে হবে। কত রান নিরাপদ সেটিও বোঝা যায় না। যে উইকেট বানায় বা বানাচ্ছে, সে আগে ভাল বানিয়েছে। তার সক্ষমতা বা যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবো না, তবে সমস্যাটা বের করা উচিত।’
বিপিএলের চলতি আসরে টস জিতে আগে ব্যাট করার সাহস দেখাতে পারছে না কোন দলই। উইকেটের কারণে বোলিং করা দল সুবিধা পায়। বেশিরভাগ সময় টসই যদি ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেয় সেটি হতাশার। মাশরাফীও ক্ষুব্ধ সেটি নিয়ে, ‘এমন উইকেট গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা জানি টস হারলে বোলিং টিম সুবিধা পাবে। কিন্তু তাই বলে এত সুবিধা পাবে! গুড লেংথ বল মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার সাথে টেস্ট ম্যাচে যেমন হচ্ছিল, টি-টুয়েন্টিতে সাদা বলেও তেমন হচ্ছে। এটা চিন্তা করা উচিত। এমন উইকেটে টি-টুয়েন্টি খেলা খুবই কঠিন।’
মাশরাফীর সংবাদ সম্মেলন কক্ষ ছাড়ার পর আসেন জয়ী দলের অধিনায়ক তামিম। মিরপুরের উইকেট নিয়ে দীর্ঘদিনের হতাশার মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরল তামিমের কণ্ঠেও। সংস্কারের পর ১০ মাসে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একটি টেস্ট ও বিপিএলের কিছু ম্যাচ হয়েছে মিরপুরে। চট্টগ্রামে বিপিএল হওয়ায় মাঝে কিছুদিন বিশ্রামও পেয়েছে উইকেটগুলো। তারপরও উন্নতি না দেখে যারপরনাই হতাশ তামিম।
‘মিরপুরে প্রচুর খেলা হয় বলে সবসময় একটা অজুহাত দেয়া হয়। ১০ দিন খেলা হয়নি। তারপর এমন উইকেট! এটা সেই (কিউরেটর) ভাল উত্তর দিতে পারবে। এতগুলো দর্শক এসে যদি ৯৭ রান দেখে, আর সেটি পার করতে যদি শেষ ওভার লাগে, সেটা খুবই হতাশার। বোর্ড, খেলোয়াড় সবাই চায় বিপিএল পরের ধাপে উঠুক। সেজন্য উইকেট তো ঠিক থাকতে হবে। এমন জঘন্য উইকেটে ক্রিকেট হয়! আমি হারলেও এই কথা বলতাম, জিতেও একই কথা বলছি। কী কারণে এমন উইকেট বানাচ্ছে মাথায় আসে না। এখানে গড় সংগ্রহ ১৪৮। সেই রানটা অন্তত হবে বলে আশা করতেই পারেন। প্রত্যেকটা বিপিএল আসলে কী যে হয়ে যায় হিসেবে মেলাতে পারি না!’
তামিমের অনুযোগ মাঠের আউটফিল্ড নিয়েও। মাঠ সংস্কারের পর ঘাসের সবুজাভ ভাব নেই। ধূসর রং। সেই সঙ্গে মন্থরও। ‘হোম অব ক্রিকেট’ শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের এই মাঠ নিয়ে একটা সময় বেশ গর্ব করতেন তামিম। এখন তার কণ্ঠে শুধুই হতাশা, ‘সুন্দর আউটফিল্ড ইচ্ছা করে মনে হয় খারাপ বানিয়ে দেয়া হয়েছে। সিওকে বলতে শুনেছিলাম সময়ের সঙ্গে হয়ে যাবে। ঘাসগুলো ছিল, খুব সুন্দর ছিল। আউটফিল্ড দ্রুতগতির ছিল। এখন দেখতেও ভাল লাগে না।’
হয়ত আরও হতাশার কথা ঝরাতে চেয়েছিলেন তামিম। কিছু কথা প্রকাশ করতে যেয়েও চুপ বসে রইলেন। সাংবাবিকরাই উঠে গিয়ে ইতি টানলেন সংবাদ সম্মেলনের।